পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

601 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড ২। জটিলতা কেন ? দুঃখের বিষয় উমাইয়া সাম্রাজ্যবাদিগণ যেভাবে ইসলামের সাম্যবাদি নীতিগুলোকে এবং ইসলামি গণপ্রতিনিধিতুকে (খেলাফতকে) আতুরঘরেই গলা টিপে মেরে ফেলেছিল; অবিকল সেইভাবে পশ্চিমাঞ্চলের কতিপয় তথাকথিত মুসলমান নেতা, পুঁজিপতি এবং সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের নিয়ে গঠিত একটি সাম্রাজ্যবাদীচক্র পাক-ভারতের গঠিতব্য ইসলাম রাষ্ট্র দুটির রাষ্ট্ৰীয় জীবন থেকে ইসলামকে নির্বাসন দেয়ার ফলস্বরূপ, পুরাপুরি দুটি প্রদেশের পরিবর্তে বাংলার পূর্বাংশ এবং আসামের দক্ষিনাংশ তথা সিলেট জেলা নিয়ে বর্তমান পূর্ব পাকিস্তান গঠিত হয়। তাহারা বাঙ্গালী পূর্ব মুসলমানদের ভাবাবেগের সুযোগ গ্রহণ করতঃ শোষণের সুবিধার্থে, পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে দুটি রাষ্ট্র গঠণ করার পরিবর্তে, উভয় অঞ্চলের সমবায়ে মাত্র একটি রাষ্ট্র গঠণ করে । কারণ, যেভাবেই হউক, পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বলগ্নে পাক-ভারতের মুসলমানদের নেতৃত্ব, তাহদের মুঠোর মধ্যে ছিল। ফলে ইসলামের নামে অর্জিত রাষ্ট্রটির জন্মের পর থেকেই, তাহার রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে ইসলাম উধাও হয়ে যায়ঃ অন্যায়-অনাচার, অত্যাচার-অবিচার, দুনীতি ও স্বজনপ্রীতি রাষ্ট্রটির নিত্যকার ঘটনায় পর্যবেশিত হয়। মুসলমানদের ইসলাম সাম্যবাদী রাষ্ট্র গঠন করার দীর্ঘদিনের স্বপ্লটি অচিরেই ধূলিস্মাৎ হয়ে যায়। ১৯৪০ ইংরেজির লাহোর প্রস্তাবের মর্ম অনুযায়ী দুটি পৃথক ইসলামী রাষ্ট্র গঠন না করতেই, পাকিস্তানের জন্মের পর নানা জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। এখন আমরা তাহার উপরই আলোকপাত করব। ৩। পাকিস্তানের পরিস্থিতি লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী দুটি পৃথক ইসলাম রাষ্ট্র গঠন না করায়, পাকিস্তানের জন্মের পরে প্রধানতঃ পূর্ব পাকিস্তানে মোট দু’ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। তাহার, একটি হলো (ক) পশ্চিম পাকিস্তানী সাম্রাজ্যবাদীগণ কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানীদের উপর একচেটিয়া শাসন, শোষণ ও নির্যাতন। অপরটি হলো (খ) ইসলামের নাম ভাংগিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানী তথাকথিত মুসলমান সাম্রাজ্যবাদীগণ কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানীদের উপর অবিরাম পীড়নের ফল স্বরূপ এখানকার একশ্রেণীর মুসলমানের আদর্শিক মৃত্যু। (ক) পশ্চিমাদের পীড়ন তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার জেরার সময় প্রকাশ পেয়েছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীতে বাংগালী সৈন্যের অনুপাত ৪% (শতকরা চারজন মাত্ৰ): প্রতি ৬০ (ষাট) জন সামরিক অফিসারের মধ্যে বাংগালী মাত্র ১ জন। ১৯৬৮ পর্যন্ত কেন্দ্রের ২০ (বিশ) জন সেক্রেটারীর মধ্যে একজনও পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী ছিলেন না। পরিকল্পনা কমিশনের নিয়ন্ত্রণ আজ পর্যন্ত কোন বাংগালী অফিসার পাননি। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায় সকল বিভাগের চূড়ায় এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকারের ও অনেক বিভাগের চূড়ায় অথবা গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে আছে নিশ্চয়ই কোন পশ্চিম পাকিস্তানী অথবা বাংগালী নামধারী কোন মোহাজের। পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষতি করার ব্যাপারে সে সকল মোহাজেরদের প্রায় সকলেই পশ্চিম পাকিস্তানীদের চেয়েও একধাপ আগে চলে। বাজে এবং গুরুত্বহীন পদগুলোতে নিয়োজিত পূর্ব পাকিস্তানীগণকে মিলিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বেসামরিক চাকুরীতে গড়ে বাংগালীর অনুপাত ১১% (শতকরা এগারজন) মাত্র। এই এগারজনের মধ্যে বর্ণিত মোহাজেরগণকেও ধরা হয়েছে। এদিকে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বাংগালী বেকার ঘুরছে। পশ্চিমাদের শয়তানীর জন্য চাকুরী পায় না। ইংরেজীর ১৯৬৫ সালে লাহোর যুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে যে, বাংগালীরা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা। এতদসত্ত্বেও কোটি কোটি বাংগালীকে সামরিক বাহিনীতে ভর্তি না করে, ঐ যুদ্ধের পর পরই পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অগণিত লোক সামরিক বাহিনীতে ভর্তি করা হয়েছে। চাকুরী এই বৈষম্যের