পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

602 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড দরুন পশ্চিমারা শুধু আমাদের উপর কর্তৃত্বই করেছে না, বরং কেন্দ্রীয় বাজেটের চাকুরী খাতের ৯০ (নববই ভাগই) প্রতি বৎসর পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যাচ্ছে। উপরোক্ত সামরিক ও আমলাতান্ত্রিক শ্রেষ্ঠত্বের দরুন পশ্চিম পাকিস্তানী সাম্রাজ্যবাদীগণ নিরাপত্তা আইন, দেশরক্ষা আইন এবং সামরিক আইন জাতীয় বাংগালী-পীড়ন আইন কথায় কথায় জারি করে দেয়। হাজার হাজার সচেতন বাংগালীকে জেলে পুরে দেয়। প্রয়োজন দেখা দিলে, তাহারা আগরতলাষড়যন্ত্র মামলার মত মিথ্যা বাংগালীপীড়ন মামলা সাজাতেও পিছপা হয় না। সাম্রাজ্যবাদীদের তর্জনীর সংকেত অনুযায়ী কাজ না শাসন জারী করে দেয়। দেশের বৈধ শাসনতন্ত্রকে পর্যন্ত আস্তাকুড়ে ফেলে দেয়। ঘৃণিত সাম্রাজ্যবাদীগণ পূর্ব পাকিস্তানকে শুধু একচেটিয়াভাবে শাসন করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা গত ২৩ (তেইশ) বৎসর পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণেরও একশেষ করেছে। দ্বার রক্ষী বংশজ সাম্রাজ্যবাদীগণ বলতে গেলে পূর্ব পাকিস্তানের টাকা দিয়েই মরুভূমিসম পশ্চিম পাকিস্তানকে সুজলা-সুফলা শষ্যশ্যামলা উর্বর ভূমিতে রূপান্তরিত করে ফেলেছে। আর এদিকে সুজলা-সুফলা শষ্যশ্যামলা সোনার বাংলাকে মহাশ্মশানে পরিণত করেছে। পশ্চিম পাকিস্তানের উদৃত্ত গম, পূর্ব পাকিস্তানে বিক্ৰী করার উদ্দেশ্যেই তাহারা পরিকল্পনা বহির্ভূত মাত্র ২০০০ (দু'হাজার) কোটি টাকা দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাণান্তকারী বন্যা সমস্যার সমাধান করছে না, এবং পটুয়াখালীর রূপসা হতে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা পর্যন্ত ১০০ (একশ) মাইল দীর্ঘ প্রলয়ংকারী গরকীরোধকারী সামুদ্রিক বাঁধ (ব্রেকওয়াটার), মাত্র এক হাজার কোটি টাকা দিয়ে নির্মাণ করছে না কারণ বন্যা সমস্যার ও গরকী সমস্যার সমাধান হলে, পূর্ব পাকিস্তানও উদ্ধৃত্ত এলাকায় পরিণত হবে। এলোপাতাড়ি কাজ দ্বারা যাতে বন্যা সমস্যা বৃদ্ধিপায়, তদরুন বন্যা সমস্যা সমাধানের নাম নিয়ে তাহারা পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ইদানিং বাৎসরিক মাত্র ত্রিশ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। তাহাও ঠিকমত পৌছে কিনা তাহার কোন নিশ্চয়তা নাই। সাদ্দাদের বেহেশতসম রাজধানী করাচী থাকা সত্ত্বেও পূর্ব পাকিস্তানীগণকে ভুখা-নাঙ্গা-বেকার রেখে, দুষ্ট সাম্রাজ্যবাদীগণ পরিকল্পনা বহির্ভূত অজস্র টাকা দিয়ে বিলাসবহুল ও অপ্রয়োজনীয় রাজধানী ইসলামাবাদের কাজ সাত তাড়াতাড়ি করে যাচ্ছে। ভাবখানা এই লুটের মাল পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হয়ে গেলে আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাবে। জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা, সিন্ধু উপত্যাকার পুনরুদ্ধার ইত্যাদির জন্য আজ পর্যন্ত বর্ণিত সাম্রাজ্যবাদীগণ পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে, পরিকল্পনা তবে না হয় তওবা করে, আবার; বৃহত্তর শক্তিশালী এবং ধর্মনিরপেক্ষ অখন্ড ভারতই গঠন করা যাবে। কিন্তু মহামান্য নাগরিকদের কিলের ভয়ে, ধর্মনিরপেক্ষওয়ালারা আবার সে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। একদল ধর্মনিরপেক্ষওয়ালা আবার পশ্চিম পাকিস্তানী সাম্রাজ্যবাদীদের ইশারায় পাকিস্তানকে বর্তমান আকারে আলাদা রেখেই ইহাকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। আগেই বলা হয়েছে, তাতে পূর্ব পাকিস্তানকে নির্বিচারে শোষণ করতে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের বিরাট সুবিধা হয়ঃ খাটি ইসলামী রাষ্ট্র হলে তাহারা আর পূর্ব পাকিস্তানকে যদিচ্ছা শোষণ করতে পারবে না। শোষণটা একটু রয়ে-সয়ে করতে হবে। এখন ইহা নিশ্চয়ই পরিষ্কার হয়েছে যে, ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করতে হলে পূর্ব পাকিস্তানের আলাদা হওয়া উচিত। পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানগণ আজ এক যুগসন্ধিক্ষণে উপস্থিত। অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে, কেবল পশ্চিম পাকিস্তানী সাম্রাজ্যবাদীগণই নহে, তৎসহ আরও কয়েকটি পরস্পর বিরোধী বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শক্তি পূর্ব পাকিস্তানকে তাদের আন্তর্জাতিক দাবার ঘুটিতে পরিণত করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাই এখানকার মুসলমানগণকে আজ অত্যন্ত হিসাব করে পা ফেলতে হবে। পা একটুখানি ফসকালেই গভীর খাদে পতিত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা বিদ্যমান। পাক-ভারতের হিন্দু কায়েমী স্বার্থবাদীরা অত্যাচার করত বলে আমরা মুসলমানেরা দুটি স্বতন্ত্র ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করতে চেয়েছিলাম। আমাদের সে স্বপ্নকে ব্যর্থ করে দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানী সাম্রাজ্যবাদীগণ আমাদের উপর অত্যাচার করছে বলে, আমরা আবার হিন্দু-ভারতের দাসত্ব অথবা