পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

624 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড শ্রমের দাসত্বের নিষ্ঠুর বোঝা লাঘব হইবে, ছাত্ৰ-মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবীর বিকাশের রাস্তা রাহুমুক্ত হইবে, তাহারা বেকারতের দুঃসহ জ্বালা হইতে মুক্তি পাইবে। এক কথায়, পূর্ব বাংলার সমগ্র জনগণের জীবনে অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা-চিকিৎসা, জীবন ও জীবিকার নূ্যনতম নিশ্চয়তা আসিবে। শহীদ আসাদ প্রাণ দিয়া বিশ্বাস করিতেন যে, শাসকগোষ্ঠীর সশস্ত্র শক্তির মোকাবিলা সশস্ত্র শক্তির মাধ্যমেই করিতে হইবে। শাসকগোষ্ঠীর সর্বাপেক্ষা দুর্বল ঘাঁটি গ্রামাঞ্চলে কৃষি বিপ্লবের সূচনা করিয়া সশস্ত্র সংগ্রামের ঘাঁটি এবং কৃষকের বিপ্লবী রাজত্ব প্রথমে প্রতিষ্ঠিত করিতে হইবে। তাহার পর মুক্ত গ্রাম এলাকা দিয়া শহর ঘেরাও করিয়া চূড়ান্তভাবে রাষ্ট্রশক্তি দখল করিতে হইবে। এই উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করিবার জন্যই শহীদ আসাদ মনোহরদী-তাহিরদিয়া এলাকায় কৃষকদের সংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করিয়াছিলেন, এই জন্যই আসাদ মৃত্যুর মাত্র কিছুদিন পূর্বে হাতিরদিয়ার হাট হরতালকে সাফল্যমন্ডিত করিয়া তুলিতে যাইয়া আর একবার শাসকগোষ্ঠীর বুলেটের সম্মুখীন হইয়াছিলেন। সংগ্রামী জনতা ! শহীদ আসাদের এই স্বপ্ন, জনতার বিপ্লবী গণ-অভু্যুত্থানের লক্ষ্য আজও বাস্তবায়িত হয় নাই। কিন্তু কেন? কারণ ১৯৬৮-৬৯ সালের গণ-অভু্যত্থানের যখন সশস্ত্র বিপ্লবে পরিণত হইতে চলিয়াছিল, তখন শাসকগোষ্ঠী জনতার সংগ্রামকে বিভ্রান্ত করিবার জন্য গোল টেবিলের মাধ্যমে আপোষের পতাকা তুলিয়া ধরিয়াছিল। গণঅভু্যত্থানের আপোসকামী নেতৃত্ব শাসকগোষ্ঠীর সহিত আপোসের চোরাগলিতে পা বাড়াইয়াছিল। ফলে এইবার পুনরায় নির্বাচনের মধ্য দিয়া জনতার সশস্ত্র বিপ্লবকে প্রতিহত করিতে চাহিয়াছে। কারণ, শাসকগোষ্ঠী ইহা ভালোবাবেই জানে, নির্বাচনের মাধ্যমে মেম্বর মন্ত্রীর পরিবর্তন হইবে, কয়েকটি দফাও হয়তো কাগজেকলমে দিতে হইতে পারে, কিন্তু শাসন ও শোষণের মুল চাবিকাঠি মিলিটারী, পুলিশ ও প্রশাসন যন্ত্রের কোন পরিবর্তন হইবে না। তাহা হইলে পূর্ব বাংলার গোটা বাঙ্গালী জাতিকে তাহদের জাতীয় স্বাধীনতা এবং কৃষক শ্রমিক মেহনতি জনতাকে তাহদের শ্রেণী শোষণ হইতে মুক্তির সংগ্রাম হইতে দূরে সরাইয়া রাখা যাইবেসংসদীয় রাজনীতিতে মোহাচ্ছন্ন করা যাইবে। তাই এইবারের শহীদ আসাদ দিবস আমাদের নিকট গভীর তাৎপর্য বহন করিয়া আনিয়াছে। আসুন, আজ আমরা শহীদ আসাদের রক্তাক্ত স্মৃতিকে স্মরণ করিয়া শাসকগোষ্ঠী ও সুবিধাবাদ আপোষকামী রাজনীতিবিদদের সকল ষড়যন্ত্রের জালকে ছিন্ন করিয়া বিপ্লবী রাজনীতির পতাকাকে তুলিয়া ধরি। সেই বিপ্লবী পথ হইল, কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে মুক্ত এলাকা গঠনের পথ। মুক্ত গ্রাম এলাকা দিয়া শহর ঘেরাও ও শহর দখল করিবার পথ। আর তাহার পাশাপাশি শহরে বিপ্লবী গণ-অভু্যত্থানের ঝড় তুলিয়া শাসকগোষ্ঠীকে ঘায়েল করা যাহাতে তাহারা সর্বশক্তি লইয়া কৃষকের লড়াইয়ের উপর ঝাঁপাইয়া পড়িতে না পারে। এই বিপ্লবী পথেই খুলনার বাহিরদিয়া ও সিলেটের হাওর করাইয়ার সংগ্রামী কৃষক আগাইয়া চলিয়াছে। এই লক্ষ্য অভিমুখেই ১৯৬৮-৬৯ সালের বিপ্লবী গণ-অভু্যত্থানের যাত্রা শুরু হইয়াছিল। আসুন, আগামী ২০শে জানুয়ারী পুর্ব বাংলার শহরে-বন্দরে, স্কুল-কলেজে, হাট-বাজার-গঞ্জে সর্বত্র হরতাল পালন করিয়া আসাদসহ শত শত দেশপ্রেমিক বীর সেনানীদের আত্মত্যাগকে নতুন করিয়া আমরা স্মরণ করি, তাহদের অপূর্ণ আশা-আকাংখা ও অসমাপ্ত কাজকে বাস্তবায়িত করিবার জন্য নতুন করিয়া শপথ গ্রহণ করি, শহীদ আসাদের স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পুর্ব বাংলা কায়েমের স্বপ্নকে সার্থক করিয়া তুলিবার পথে জোর কদমে আগাইয়া যাই। পূর্ব বাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন