পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

633 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড

শিরোনাম তারিখ
শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল ১৪, ফেব্রুয়ার, ১৯৭১ | রাজনৈতিক ঘোষণা (প্রচারপত্র) i

গণ-বিপ্লব দিবসে মেহনতী জনতার নেতৃত্বে বিপ্লবী সরকার কায়েমের শপথ নিন শ্রমিক-কৃষক সমাজবাদী দলের ডাক ভাইসব, আটষট্টির অক্টোবরে করাচীর ছাত্রদের স্বৈরাচারী আইয়ুবশাহীর বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে যে সংগ্রামের সূত্রপাত, উনসত্তরের জানুয়ারী মাসে ঢাকায় ছাত্রদের সংগ্রামী জনতার বিপ্লবী ভূমিকায় সেই গণঅভু্যত্থান ১৮ই ফ্রেব্রুয়ার পর্যবসিত হয় এক রক্তাক্ত গণবিপ্লবে। আন্দোলন চলছে ছাত্রদের নেতৃত্বে, আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদ এবং দেশীয় একচেটিয়া পুঁজিপতিদের সাহায্যপুষ্ট স্বৈরাচারী আইয়ুবশাহীর বিরুদ্ধে চলছে ধারপাকড়, গোলাগুলি। শহীদ হোল আদমজীর শ্রমিক মুজিবুল্লাহ, বরিশালের শ্রমিক মজিদ, ছাত্র আসাদ, মতিয়ুর এবং নাম না জানা আরো অনেকে। সংগ্রামের রূপ হোল আরো তীব্র, আগুন জুলে উঠল শহর থেকে বন্দরে, গ্রামথেকে গঞ্জে। নেমে এল কারফিউ’। এবার সংগ্রামে বলিষ্ঠ নেতৃত্বে নিয়ে এগিয়ে এলো এক নতুন শক্তি, বিপ্লবী মেহনতী জনতা। সে বৈপ্লবিক নেতৃত্বের সুবর্ণ সুচনা হলো কারফিউ ভঙ্গের রক্তস্রোতের মধ্য দিয়ে। ১৮ই ফেব্রুয়ারী, কারফিউ ভঙ্গ করে মালিবাগের মেহনতী জনতা মশাল হাতে নেমে এল ঢাকার রাজপথে; যোগ দিল তেজগাঁও, নাখালপাড়া, আদমজী আর ডেমরার বিপ্লবী স্ৰমিক, যোগ দিল খিলগাঁও কৃষক; নেমে এল ফার্মেগেট, গ্রীনরোড, হাতীরপুল, পুরানা পল্টন এবং মগবাজার এলাকার দিনমজুর আর খেটে খাওয়া মানুষের, সহদাগরী আর সরকারী অফিসের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী আর কেরানী; নেমে এল ছাত্র, শিক্ষক, ছোট ছোট দোকানদার আর রাস্তার পার্শ্বের ফেরিওয়ালারা, লাখো লাখো মানুষ, মেহনতী মানুষ, সংগ্রামী জনতা, লাঠি আর জলন্ত মশাল হাতে। ১৮ই ফেব্রুয়ারী, সর্বপ্রথম সংঘবদ্ধ উপায়ে কারফিউ ভেঙ্গে রাইফেল আর বেয়নেটের পৈশাচিক হামলাকে তারা রাস্তায় পদদলিত করে লক্ষ লক্ষ মারমুখী মেহনতী জনতা সেদিন নেমে এসেছিল ঢাকার রাজপথে। রাস্তায় তুলেছিল বিপ্লবী ব্যারিকেড, হাতাহাতি লড়াই করেছে তারা, রক্তে রক্তে সয়লাব হয়েছে ঢাকার কালো পীচ ঢালা পথ। তবুও তারা স্তব্ধ হয়নি। আগুন লাগিয়ে তারা জুলিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে শ্বৈরাচারী আইয়ুবশাহীর অনুচরদের সাজানো প্রাসাদ। যে বিদ্রোহের আগুনের লেলিহান শিখায় খতম হয়েছে আইয়ুব সরকার, খর্ব হয়েছে রাষ্ট্রের উপর থেকে একচেটিয়া পুঁজিপতি, ভূ-স্বামী আর জায়গীরদারদের অপ্রতিদ্বন্ধী প্রভাব। উন্মুক্ত হয়েছে গণতন্ত্রের পথ। ১৮ই ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানের গণআন্দোলনের ইতিহাসে লাল অক্ষরে লেখা একটি দিন বিপ্লবী দিন। মেহনতী জনতার নেতৃত্বে ১৮ই ফেব্রুয়ার কারফিউ ভঙ্গ এবং ঢাকা অবরোধ, বিপ্লবী সর্বহার শ্রেণীর নেতৃত্বে দীর্ঘস্থায়ী সমাজবাদী বিপ্লবের সুবর্ণ সূচনা।