পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

634 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড সাবাস। ঢাকার বিপ্লবী মেহনতী জনতা! অমর হোক গণবিপ্লবের দিন, রক্তাক্ত ১৮ই ফেব্রুয়ারী। কিন্তু সুস্পষ্ট শ্লোগান, বর্তমান লক্ষ্য এবং সর্বহারাদের শ্রেণীভিত্তিক রাজনৈতিক দলের অভাবে এই গণবিপ্লবের সম্পূর্ণ ফল লাভ করার এক হীন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে অনুন্নত অঞ্চলের পুঁজিপতি শ্রেণী। উদীয়মান পুঁজিপতিদের নেতৃত্বে জানুয়ারীর গণঅভু্যত্থানের মূল লক্ষ্য ছিল বৃহৎ পুঁজিবাদ, জায়গীরদার জোতদারদের পৃষ্ঠপোষিত স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকারের উচ্ছেদ সাধন করে তথাকথিত সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন যখন মেহনতী জনতার নেতৃত্বে ফেব্রুয়ারী গণ-বিপ্লবে পরিণত হল, তখন এই গণ বিপ্লবের আপোসহীন আর রুদ্র রূপ দেখে এবং দেশের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক সুদূরে প্রসারী পরিণতির আশংকায়, একদিকে বৃহৎ পুঁজিপতি, জোতদার-জায়গীরদাররা অন্যদিকে স্বৈরাচারবিরোধী অনুন্নত অঞ্চলের উদীয়মান পুঁজিপতিরাও আন্দোলনের উপর থেকে তাদের নেতৃত্ব চলে যাওয়ার আশংকায় ভীত এবং সন্ত্রস্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে আপোসরক্ষার মাধ্যমে এই বিপ্লবের মূল লক্ষ্যকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় মেতে উঠলো। সর্বদলীয় গোলটেবিল ছিল ফেব্রুয়ারীর বিপ্লবকে বিপথে পরিচালনা করার এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র এবং আন্দোলনের নেতৃত্বে তাদের হাতে ফিরিয়ে নেবার জন্যই উদীয়মান পুঁজিপতিদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা এই গোলটেবিলে যোগ দিয়েছিলেন। দেশের সংবিধান রচনা এবং শান্তিপূর্ণ পথে ক্ষমতা হস্তান্তরের উছিলায় “আইনগত কাঠামোর” জোয়ালে বিগত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান সেই ষড়যন্ত্রেরই আরেক পর্যায়। জাতীয়তাবাদী সম্মোহনী শ্লোগানের মায়াজালে এক অভূতপূর্ব উন্মাদনা সৃষ্টি করে এই উদীয়মান পুঁজিপতিরা নিষ্ঠুর আর নির্মমমভাবে ব্যবহার করেছে এদেশের শোষিত মানুষের সহজ সরল আবেগকে, যাই হোক না কেন, দেশের সংবিধানের রূপ এবং কাঠামো যে কোন দফাভিত্তিক হোক না কেন, রাষ্ট্র পরিচালনার মূল শক্তি আজো যেমন জনতার শক্ৰকায়েমী স্বাৰ্থবাদীদের হাতে বর্তমান, ভবিষ্যতেও তেমনি থাকবে-যদি না রাষ্ট্রীয় কাঠামোর একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়। বিপ্লবী সমাজবাদীদের তাই আজকের ঐতিহাসিক দায়িত্ব এবং কর্তব্য হচ্ছে উদীয়মান পুঁজিপতিদের নেতৃত্বে এই ভাওতাবাজী জাতীয়বাদী আন্দোলনকে সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্বে এবং কৃষক ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মৈত্রীত্বে “মেহনতী জনতার গণতান্ত্রিক বিপ্লবে” পর্যবসিত করা। দেশের বর্তমান যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে বৃহৎ ধনিক গোষ্ঠীর পরিবর্তে, উদীয়মান এবং বিক্ষুদ্ধ বুর্জোয়াদের হাতে শাসন ক্ষমতা এলেই সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষের ভাগ্যের বা অবস্থার কোনই পরিবর্তন হােচ্ছে না। একমাত্র সর্বহার শ্রেণীর নেতৃত্বে মেহনতী জনতার ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়েই এই পুঁজিবাদী শোষণ ব্যবস্থা খতম হওয়া সম্ভব, অন্যথায় নয়। ১৮ই ফেব্রুয়ারীর রক্তাক্ত গণ-বিপ্লবের মূল লক্ষ ছিল পাকিস্তানের বর্তমানে ধনবাদী শোষণ ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে সর্বহার শ্রেণীর নেতৃত্বে মেহনতী জনতার গণতান্ত্রিক সরকার গঠন। যার চূড়ান্ত লক্ষ একটি শোষণহীন সমাজবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। সেই লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করতে পারে একমাত্র সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্বে মেহনতী জনতার বিপ্লবী সরকার। তাই সমাজবাদী দলের আজকের শ্লোগানঃ মেহনতী জনতার বিপ্লবী সরকার কায়েম কর। রক্তাক্ত ফেব্রুয়ারী বিপ্লব। তোমার কাছে আমাদের বিপ্লবী শপথঃ সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্ব মেহনতী জনতার বিপ্লবী সরকার আমরা শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও কায়েম কোরবই। রক্তাক্ত ফেব্রুয়ারী বিপ্লব অমর হোক।