পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

735 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ স্বাধীন পূর্ব বাংলা কায়েমের সংগ্রামের ছাত্র ইউনিয়ন ১১ মার্চ, ১৯৭১ আহবান শোষণমুক্ত স্বাধীন পূর্ব বাংলা কায়েমের সংগ্রাম প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠী ও উহাদের ভাড়াটিয়া সেনাবাহিনীর যে-কোন রূপ হামলা, আক্রমণ প্রতিরোধে আজ ছাত্র-শ্রমিক-মধ্যবিত্ত জনতাকে সর্বশক্তি নিয়োগ করিতে হইবে। চরম গণ-বিরোধী শাসকগোষ্ঠী উহাদের সেনাবাহিনীকে লেলাইয়া দিয়া পূর্ব বাংলার জনগণের মহান সংগ্রামকে রক্তের বন্যায় ডুবাইয়া মারিবার যে ঘৃণ্য চক্রান্ত আটিয়াছে উহাকে উপযুক্তভাবে মোকাবেলা করিতেই হইবে। এইজন্য আমরা জনগণের প্রতি জানাইতেছি সর্বাত্মক প্রস্ত্ততি গ্রহণের আহবান। পূর্ববাংলার জনগণ আশা করিয়াছিল যে নির্বাচনের পরে যথানিয়মে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসিবে, শাসনতন্ত্র প্রণীত হইবে এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করিয়া সেনাবাহিনী ব্যারাকে স্বাৰ্থবাদীদের স্বার্থে শেষ পর্যন্ত ভুট্টোর সহিত ষড়যন্ত্রের পথ গ্রহণ করিয়া পূর্ববাংলার জনগণের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে লেলাইয়া দেওয়ার নীতি গ্রহণ করে। শাসনতন্ত্র ও ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্ন দূরে চলিয়া যায়। এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘকাল জাতিগত নিপীড়নে নির্যাতিত পূর্ব বাংলার জনগণ নিরঙ্কুশ ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে আওয়াজ তুলিয়াছেন- “পূর্ব বাংলা স্বাধীন কর। পৃথক রাষ্ট্র গঠন কর” শাসকগোষ্ঠী জনগণের এই দাবীকে অস্ত্রের দ্বারা মোকাবেলা করিতে চাহিতেছে। ইয়াহিয়া খান পূর্ববাংলার জনগণকে শাসাইতেছে। অনেক ঘটনার ঘাত ও প্রতিঘাতের মধ্য দিয়া বাংলাদেশের সাত কোটি জনতা আজ পূর্ববাংলায় তাহদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার কায়েম করিতে চাহিতেছেন, চাহিতেছেন একটি স্বাধীন সার্বভৌম স্বতন্ত্র রাষ্ট্র কায়েম করিতে। এই জন্য জনগণ আজ অকুতোভয়ে জীবন মরণ সংগ্রামে লিপ্ত হইয়াছেন। শত শত শহীদের রক্তে পূর্ববাংলার শ্যামল মাটি রক্তলাল হইয়া উঠিয়াছে। আমরা জনগণের এই মহান বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামকে সঠিক নীতিতে অগ্রসর করিয়া লইয়া এমন একটি স্বাধীন পূর্ববাংলা’ রাষ্ট্র গঠনের আহবান জানাইতেছি যে রাষ্ট্রে শ্রমিক-কৃষক-ছাত্ৰ-মধ্যবিত্ত-বুদ্ধিজীবী প্রভৃতি জনগণের প্রকৃত আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের পথ উন্মুক্ত হইবে। আমাদের দেশমাতৃকার উপর হইতে বৃটিশ, আমেরিকা প্রভৃতি সাম্রাজ্যবাদী শোষকদের যে কোন শোষণ ও প্রভাব লুপ্ত হইবে, কৃষকদের উপর হইতে জোতদার মহাজনদের সামন্তবাদী শোষণ উচ্ছেদ হইবে, দেশের জনগণকে পুনরায় পুঁজিবাদী শোষণের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হইতে হইবে না। সকল প্রকার শোষনমুক্ত বাংলাদেশের জনগণের জাতীয় গণতান্ত্রিক স্বাধীন বাংলা কায়েমের লক্ষ্য সামনে রাখিয়া বর্তমান সংগ্রামকে অগ্রসর করিয়া লইবার আহবান আমরা জানাইতেছি। কিন্তু এই সংগ্রাম খুব সহজ সংগ্রাম নয়। প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠী এই সংগ্রাম দমনের জন্য নানা প্রচেষ্টা করিবে। অন্যদিকে, তথাকথিত দেশপ্রেমিকরা এই সংগ্রামকে ভুলপথে ঠেলিয়া দেওয়ারও প্রচেষ্টা করিতেছে। ইহারা “স্বাধীন পূর্ব বাংলায়” তাহদের শ্রেণী:স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্য হইতে বাঙ্গালী জনতাকে বুঝাইতে চায় যে এই সংগ্রাম পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে এবং এমনকি তাহারা আরও বুঝাইতে চায় যে এই সংগ্রামে পুর্ব