পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

740 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক আন্দোলনের দৈনিক পূর্বদেশ ১৫ মার্চ, ১৯৭১ আন্দোলন চলবেঃ হরতাল অব্যহত থাকবে (স্টাফ রিপোর্টার) “জনগণের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম এগিয়ে চলেছে। মুক্তিকামী মানুষ বিশ্বের সবখানে যারা প্রাণপণ লড়াই করে যাচ্ছেন মুক্তির জন্য, আমাদের সংগ্রামকে তাঁদের নিজেদের বলে গণ্য করা উচিত। শক্তির সাহয্যে যারা শাসনের চক্রান্ত কর তাদের বিরুদ্ধে দৃঢ়সংকল্প ও সংঘবদ্ধ জনশক্তি কেমন করে মুক্তির দুর্জয় দুর্গ গড়ে তোলে, আমাদের জনগণ তা প্রমাণ করেছে।” আজ বাংলাদেশের প্রতিটি নারী-পুরুষ এমনকি শিশু পর্যন্ত মাথা উচু করে দাঁড়াবার সাহসে বলীয়ান। নগ্নভাবে শক্তিপ্রয়োগ করে মানুষকে দলিত করার চিন্তা করেছিলেন যারা, তারা নিশ্চিতই পরাভূত হয়েছে। ংলাদেশের প্রতিটি স্তরের মানুষ-সরকারী কর্মচারী, অফিস আর কলকারখানার শ্রমিক, কৃষক আর ছাত্র সবাই দৃপ্তদন্তে ঘোষণা করেছে- তারা আত্মসমর্পণের চেয়ে মরণ বরণ করতেই বদ্ধপরিকর। গতকাল (রবিবার) শেখ মুজিবুর রহমান সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেছেন, এ বড় দুঃখজনক যে, এমন পর্যায়েও কিছু অবিবেচক মানুষ সামরিক আইন বলে নির্দেশ জারি করে বেসামরিক কর্মচারীদের একাংশকে ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে। কিন্তু আজ এদেশের মানুষ সামরিক আইনের কাছে মাতা নত না করার দৃঢ়তায় একাট্টা। আমি তাই, সর্বশেষ নির্দেশ যাদের প্রতি জারি করা হয়েছে, তাঁদেরকে হুমকির কাছে মাথা নত না করার আবেদন জানাই। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ তাঁদের ও তাঁদের পরিবারের পেছনে রয়েছে। তাঁদের ত্ৰাসিত করার উদ্দেশ্যে এই যে চেষ্টা তা বাংলাদেশের মানুষকে রক্তচক্ষু দেখাবার অন্যান্য সাম্প্রতিক চেষ্টার মত নস্যাৎ হতে বাধ্য। “বাংলাদেশের মুক্তির স্পৃহাকে স্তব্ধ করা যাবে না। আমাদের কেউ পরাভূত করতে পারবে না, কারণ প্রয়োজনে আমাদের প্রত্যেকে মরণ বরণ করতে প্রস্ত্তত। জীবনের বিনিময়ে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের স্বাধীন দেশের মুক্ত মানুষ হিসেবে স্বাধীনভাবে আর আত্মমর্যাদার সাথে বাস করার নিশ্চয়তা দিয়ে যেতে চাই। মুক্তির লক্ষ্যে না পোঁছা পর্যন্ত আমাদের সংগ্রামে নবতর উদ্দীপনা নিয়ে অব্যাহত থাকবে। আমি জনগণকে যে কোন ত্যাগের জন্য এবং সম্ভাব্য সবকিছু নিয়ে যে কোন শক্তির মোকাবেলায় প্রস্তত থাকতে আবেদন জানাই।” অপর এক বিবৃতিতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেছেন, জনগণের যে আন্দোলন গৌরবোজ্জ্বল দ্বিতীয় সপ্তাহ সমাপ্ত করেছে তা অব্যাহত থাকবে। গত দু'সপ্তাহের মত হরতাল অব্যাহত থাকবে। সেক্রেটারিয়েট, সমস্ত সরকারী, আধা-সরকারী প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠান এবং সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ১৯৭১ সালের ১৫ই মার্চ থেকে যে নয়া কর্মসূচী শুরু হবে নির্দেশাবলীর আকারে তা বিশদভাবে নীচে উল্লেখ করা হলো। নিম্নলিখিত নির্দেশাবলী কার্যকরী হওয়ার সংগে সংগে পূর্ব ঘোষিত সকল নির্দেশ, অব্যাহতি ও ব্যাখ্যাসমূহ বাতিল বলে বিবেচিত হবে।