পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

816 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহবান সম্বলিত ঢাকার ইত্তেফাক ও পাকিস্তান ১৪ মার্চ, ১৯৭১ বিভিন্ন দৈনিক ‘আর সময় নাই’ শিরোনামে অবজার্ভার প্রকাশিত যৌথ সম্পাদকীয় আর সময় নাই ইত্তেফাক, ১৪ মার্চ ১৯৭১ আমরা ঢাকার সংবাদপত্রসমূহ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আজ সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিন আসিয়াছে এবং এই মুহুর্তে একবাক্যে একসুরে কয়েকটি কথা বলা আমাদের অবশ্য কর্তব্য হইয়া দাঁড়াইয়াছে। তেইশ বৎসরের ইতিহাসে জাতি আজ চরমতম সংকটে নিপতিত। দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী গণতান্ত্রিক জীবনপদ্ধতি কায়েমের আশায় সমগ্র দেশ জীবনের সর্বপ্রথম সাধারণ নির্বাচনে শরিক হওয়ার পর দেশের আজ এই অবস্থা জনগণই দেশের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী; দেশের প্রশাসনিক কাঠামো কি হইবে, কি ধরনের সরকারইবা কায়েম হইবে তা নির্ধারণের ক্ষমতার অধিকারী কেবল তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই। গণতন্ত্রে যদি বিশ্বাস থাকে, তাহা হইলে দেশের আইন-কানুন প্রণয়ন বা রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যাপারে জনগণের প্রতিনিধিদের এই অধিকার কেহ অস্বীকার করিতে পারেন না। এটা একটিা মৌলিক রাজনৈতিক প্রতিপাদ্য বটে। ক্ষমতায় যাহারা আজ সমাসীন আর ক্ষমতাসীনদের সহিত কানাকানি করার সুযোগ যাহাঁদের আছে তাঁহাদের ব্যর্থতাই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবণতির কারণ। বহিরাক্রমণ হইতে দেশের সীমান্ত রক্ষাই হইল সামরিক বাহিনীর কাজ। রাজনৈতিক বিতর্কে হস্তক্ষেপ বা পক্ষ গ্রহণ করা তাহদের কোন দায়িত্বের আওতায় আসে না। জনগণের সংগ্রাম যাতে অহিংসা পথেই পরিচালিত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখিতে শেখ মুজিবুর রহমান ও তার দল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাঁহাদের হস্ত শক্তিশালী করাই আজ প্রয়োজন। দেশের দুই অংশের মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক কি হইবে, তা নির্ধারণের দায়িত্ব দেশবাসী জনসাধারণ ও তাহাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের। আমরা মনে করি আজ সময় আসিয়াছে যখন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে রাজনৈতিক জীবনের এই বাস্তব সত্যগুলি স্বীকার করিয়া লইতে হইবে। আমাদের বিচারে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার উচিত দেশের বুক হইতে সামরিক আইন তুলিয়া লইয়া অবিলম্বে দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সহিত একটি মীমাংসায় উপনীত হওয়া যাহার ফলশ্রুতিতে জনগণের প্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয়।