পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১০৮

বাহিনী লাকসাম-চট্টগ্রাম রেলওয়ে লাইনের লাকসাম ও চৌদ্দগ্রামের দক্ষিণে রেলওয়ে সেতু এবং রাস্তার সেতু ধ্বংস করে দেয় এতে চট্টগ্রাম এবং কুমিল্লার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়।

 উত্তারাঞ্চলে কসবা, মন্দভাগ, আখাউড়া শালদানদী প্রভৃতি৷ঞ্চলে যখন আমার সেনাদলের সাথে পাকবাহিনীর প্রত্যহ সংঘর্ষ তীব্রতর হচ্ছিল, সে সময়ে কুমিল্লা দক্ষিণাঞ্চলে মিয়ার বাজার এবং চৌদ্দগ্রাম অঞ্চলেও আস্তে আস্তে পাকবাহিনীর সাথে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। আমার ৪র্থ বেঙ্গল-এর বি কোম্পানীর একটি প্লাটুন এবং ইপিআর ও মুজাহিদদের নিয়ে গঠিত সম্মিলিত দলটি জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে মিয়ার বাজারে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়াকের উপর প্রতিরক্ষা অবস্থান গঠন করে ব্যূহকে আরো শক্তিশালী করে তোলে। এর ফলে চট্টগ্রাম-ঢাকার মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পাকবাহিনীর মধ্যে এ অবস্থার তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মিয়ার বাজারের নিকট যে রাস্তায় সেতুটি ছিল, সেটা ভেঙ্গে দেয়া হয়। এছাড়া কুমিল্লার ৬ মাইল দক্ষিণে বাগমারাতে যে রেলওয়ে সেতুটি ছিল, সেটাও উড়িয়ে দেয়া হয়। পাকবাহিনী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পুনরায় খোলার জন্য ৩০শে মে সকাল ছটায় দুই কোম্পানী সৈন্য নিয়ে দক্ষিণের দিকে অগ্রসর হয়। বেলা ১১টার সময় আমাদের একটি এ্যামবুশ দল মিয়ার বাজারের উত্তরে পাকসেনাদের উপরে অতর্কিত হামলা চালায়। শত্রু সেনাদল মিয়ার বাজারের এত আগে এ ধারনের হামলার জন্য প্রস্তুত ছিল না। ফলে তারা সম্পূর্ণ হকচকিত হয়ে যায়। তিন ঘণ্টা যুদ্ধের পর শত্রুসেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে কুমিল্লার দিকে পলায়ন করে। এ যুদ্ধে শত্রুদের প্রায় ৫০ জন হতাহত হয় এবং আমাদের সেনা দল দুটি ৩ টনের গাড়ী গোলাবাবরুদসহ ধ্বংস করে দেয় এবং একটি গাড়ী দখল করে নেয়। আমাদের পক্ষে দুজন সৈন্য নিহত এবং একজন আহত হয় এরপর শত্রুরা কুমিল্লা বিমানবন্দর অবস্থান থেকে আমাদের মিয়ার বাজারের প্রতিরক্ষা অবস্থানের উপর ভীষণভাবে ভারী কামানের সাহায্যে গোলাবর্ষণ করতে থাকে এবং সঙ্গে সঙ্গে এ অবস্থানের উপর পুনরায় আক্রমণ করার চেষ্ট চালায়। শত্রুদের একটি শক্তিশালী পেট্রোল পার্টি চেওরা হয়ে মিয়ার বাজারের পূর্বদিক দিয়ে আমাদের অবস্থানের ভিতর প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু লে. কবিরের নেতৃত্বে আমাদের একটা ছোট দল পাক বাহিনীর পেট্রোল পার্টিকে এ্যামবুশ করে। এই এ্যামবুশে পাকবহিনীর ১০ জন নিহত হয়। লে. কবির পাকবাহিনীর পিছু ধাওয়া করে তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়।

 মিয়ার বাজারের অবস্থানটির উপর পাকসেনাদের চাপ বাড়তে থাকে। কামানের গোলা দিনে দিনে আমাদের অবস্থানের উপর তীব্র হতে থাকে। অবস্থানটি বেশী দিন আর টিকানো যাবে না ভেবে আমি লে. ইমামুজ্জামানকে একটু পিছু হটে চৌদ্দগ্রাম থানার বাজারের নিকট নতুন করে অবস্থান তৈরীর নির্দেশ দিই। ইমামুজ্জামান তাঁর দলকে নিয়ে চৌদ্দগ্রামে আবার এক নতুন প্রতিরক্ষাব্যূহ গড়ে তোলে। এ প্রতিরক্ষাব্যূহ তিন দিকে মুখ করে গড়ে তোলা হয়। ৪র্থ বেঙ্গলের প্লাটুনটি মিয়ার বাজারে কুমিল্লার দিকে মুখ করে পজিশন নেয়। কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রাস্তায় মিয়ার বাজারের যে সেতুটি ছিল, সে সেতুটির দক্ষিণে অবস্থানটি গড়ে তোলে। এদের উপর দায়িত্ব ছিল কুমল্লা থেকে পাক বাহিনীকে দক্ষিণ দিকে অগ্রসরে বাধা দেওয়া। আরেকটি প্লাটুনকে পশ্চিম দিকে মুখ করে বাগমারা থেকে যে কাঁচা রাস্তা মিয়ার বাজারের দিকে আসে তার উপর প্রতিরক্ষাব্যূহ গঠন করার নির্দেশ দিই। মুজাহিদ কোম্পানীর দায়িত্ব ছিল দক্ষিণ দিকে মুখ করে মিয়ার বাজার হতে আধা মাইল দক্ষিণে চট্টগ্রাম-কুমিল্লা মহাসড়কের উপর অবস্থান গড়ে তোলা এবং দক্ষিণ থেকে শত্রুসেনাদের অগ্রগতিকে বাধা দেওয়া। কিছু কিছু মাইন সরু বাঁশ কেটে আমার এ অবস্থানটির চতুর্দিকে পুঁতে দিই। দুই সপ্তাহ পরে শত্রুসেনারা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এ অবস্থানটির হেড কোয়ার্টার চৌদ্দগ্রাম থানায় স্থাপন করি। দুই সপ্তাহ পরে শত্রুসেনারা কুমিল্লার দিক থেকে এ অবস্থানটির উপর দুটি কোম্পানী নিয়ে আক্রমণ চালায়। কিন্তু শত্রুদের বেশ কিছুসংখ্যক সৈন্য হতাহত হওয়ার পরে তারা আক্রমণ বন্ধ করে দিয়ে পশ্চাদপসরণ করে। শত্রুরা আমাদের অবস্থানের উপর তাদের কামানের গোলা চালিয়ে যায়।

 ১৪ই জুন সকাল ৬টায় সময় পাকসেনারা নয়া বাজার হয়ে হয়ে চৌদ্দগ্রামের দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু তারা আমাদের একটা এ্যামবুশ পার্টির ফাঁদে নয়া বাজারের নিকট পড়ে যায়। শত্রুদের প্রায় ৩০ জন হতাহত হয় এবং