পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১১৭

 রাত ১টার সময় কুমিল্লার দক্ষিণে সুয়াগাজীতে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের ১টা সেতু উড়িয়ে দেয় এবং বাগমারার রেলওয়ে সেতু উড়িয়ে দেয়।

 ৬ই জুন একটি ডেমোলিশন পার্টিকে লাকসামের দক্ষিণে পাঠান হয়। এই দলটি খিলাতে লাকসাম নোয়াখালী মহাসড়কের উপর ট্যাংকবিধ্বংসী মাইন পুতে রাখে। সকাল ৫টায় কুমিল্লা থেকে শত্রুর ২টি জীপ ও একটি ট্রাক নোয়াখালী যাবার পথে মাইনের আঘাতে ধ্বংস হয়ে যায় এবং সে সঙ্গে ৪জন পাক অফিসার এবং ৭জন সৈন্য নিহত হয়। পাক সেনাদের ২টি কোম্পানী কুমিল্লা থেকে শালদানদীর উত্তরে আসে এবং রেলওয়ে লাইনের সাথে সাথে নয়নপুর রেলওয়ে স্টেশনের দিকে অগ্রসর হবার চেষ্টা করে। ৪র্থ বেঙ্গল এর এ কোম্পানী শত্রুদের এ অগ্রগতিকে বাধা দেয় সকাল ৬টার সময় শালদানদীর পূর্ব দিক থেকে। শত্রুরা বাধা পাবার ফলে পিছু হটতে বাধ্য হয়। আমাদের গুলির মুখে পাক সেনাদের ২৫জন লোক হতাহত হয়। সকাল ৬টায় পাক সেনাদের আর একটি দল কুমিল্লা থেকে একটি ট্রেনে করে নয়নপুর এবং শালনদীর দিকে আসছিল। এ ট্রেনটি নয়নপুরের দক্ষিণে আমাদের অবস্থানরত সৈন্যদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। আমাদের গোলাগুলির সামনে শত্রুৱা টিকতে না পেরে যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতির পর রাজাপুরে পশ্চাদপসরণ করে। এর ৪/৫ ঘণ্টা পরে শত্রুরা কামানের গোলার সহায়তায় আবার নয়নপুর পর্যন্ত অগ্রসর হতে সক্ষম হয়। কিন্তু নয়নপুর স্টেশনে যখন তারা ব্যাংকার তৈরীতে ব্যাস্ত সে সময় আমাদের মর্টার তাদের উপর ভীষণ গোলাগুলি চালায় এবং শত্রুদের যথেষ্ট ক্ষতি করে। শত্রুরা কিছু পিছু হটে নয়নপুর গ্রামে ভিতর অবস্থান নিয়ে তাদের বাংকার তৈরী করতে শুরু করে। ঐদিনই শত্রুদের একটি পেট্রোল পার্টি কসবার দিকে অগ্রসর হয়, আমাদের ৪র্থ বেঙ্গলের ডি কোম্পানীর একটা প্লাটুন তাদেরকে অতর্কিত এ্যামবুশ করে। পাকসেনারা এ এ্যামবুশ- এর ফলে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং তাদের অন্ততপক্ষে ২০জন লোক হতাহত হয়। শত্রুদের দলটি আমাদের এ্যামবুশ পার্টির তাড়া খেয়ে তাদের অবস্থান আড়াইবাড়ির দিকে পালিয়ে যায়। আমাদের একটি দল কুমিল্লার দক্ষিণে ধানপুর বিওপির নিকট পাকসেনাদের জন্য এ্যামবুশ পেতে থাকে। সকাল ৯টায় পাকসেনারা দালালদের মারফতে এ খবর পায়। কুমিল্লা থেকে পাক সেনাদের একজন অফিসারসহ ১টা প্লাটুন গ্রামের ভিতর দিয়ে এসে আমাদের এ্যামবুশ পার্টিকে ঘিরে ফেলায় চেষ্টা করে। এ্যামবুশ পার্টি তৎক্ষণাৎ কিছু পিছু হটে গিয়ে শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এ যুদ্ধ ঘণ্টাখানেক স্থায়ী হয়। ইতিমধ্যে আমাদের ধানপুরের কোম্পানী খবর পেয়ে লে. মাহবুব ও লে. কবিরের নেতৃত্বে তৎক্ষনাৎ এ্যামবুশ পার্টিকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে এবং তারা পাকসেনাদের দলটিকে ঘিরে ফেলে। পাকসেনারা দুই দিক থেকে আক্রান্ত হয়ে গ্রামের ভিতর লুকিয়ে পড়ে এবং দালালদের সাহায্যে এ ঘেরাও থেকে বেরিয়ে আসতে সমর্থ হয়। এ সংঘর্ষে পাকসেনাদের ৫জন সৈন্য নিহত হয়।

 ঐ দিনই বিকাল তিনটায় পচুয়াতে আমাদের আর একটা এ্যামবুশ পার্টির ফাঁদে শত্রুদের একটি দলের ১০ জন হতাহত হয়। ৪ ও ৫ই জুন রাতে লাকসাম চাদপুর রেল লাইনের মাঝে মধু রোডস স্টেশনের নিকটে জমজমা রেলওয়ে সেতুটি সুবেদার পাটওয়ারীর একটি দল উড়িয়ে দেয়। ঐদিনই রাতে আর একটি দল চাদপুর কুমিল্লা সড়কের মহামায়া বাজারের নিকটে একটি পুল ধ্বংস করে দেয়। এর দুই দিন পরে চাদপুরের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারটি ধ্বংস করে দেয়া হয়। এর ফলে সমস্ত চাদপুরের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। কলকারখানাগুলি ও বন্ধ হয়ে যায়। পরে শত্রুরা এসে পাশের গ্রামগুলি জ্বালিয়ে দেয় এবং লুটতরাজ ও মেয়েদের উপর পাশবিক অত্যাচার করে।

 আমাদের ৪র্থ বেঙ্গল ডি কোম্পানীর একটা প্লাটুন ১১ই জুন সকাল ৬টায় কসবার উত্তরে চার্নল নামক জায়গায় এ্যামবুশ পেতে রাখে। শত্রুদের একটি কোম্পানী দুপুর ১২টার সময় আমাদের এ্যামবুশ এর মধ্যে পড়ে যায়। আমাদের গুলীতে তাদের ১২জন সৈন্য নিহত হয়। এতে আমাদের একজন আহত হয় এবং পরে মারা যায়। পাকসেনারা পর্যুদস্ত হয়ে ঐ জায়গা থেকে ইয়াকুবপুরের দিকে পলায়ন করে। পলায়নের পর শত্রুদেরকে আমাদের আর একটি এ্যামবুশ পার্টি দেখে ফেলে এবং তারাও ইয়াকুবপুরের নিকট তাড়াতাড়ি শত্রুদের আক্রমণ