পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১২২

 এ আক্রমণের ফলে যদিও লে. হুমায়ুনের দলটি পাকসেনাদের কামান দখল করে আনতে পারেনি কিন্তু তবুও এ আক্রমণের ফলাফল পাকসেনাদের জন্য ছিল ভয়াবহ। অন্ততপক্ষে ৫০/৬০ জন পাকসেনা এ আক্রমণে হতাহত হয়। মৃতদেহগুলি পাকসেনারা ২টি বেসামরিক বাসে লাল ঝাণ্ডা তুলে কুমিল্লার দিকে নিয়ে যায়। এ খবর স্থানীয় লোকেরা জানায়। তাছাড়া গাড়ি, যুদ্ধ সরঞ্জাম ও এই অবস্থানে রাখা কামানের গোলা যেগুলি ধ্বংস করা হয়েছিল তা ছিল তাদের পক্ষে অত্যন্ত মারাত্নক ক্ষতিকর। আসার পথে দলটি যে সেতু উড়িয়ে দিয়ে আসে এতেও তাদের গতিবিধির উপর যথেষ্ট বাধার সৃষ্টি করে। এ হামলার পর শত্রুসেনারা প্রায় ২/৩ সপ্তাহ সমস্ত সেক্টরে তাদের কার্যকলাপ সম্পূর্নরূপে বন্ধ করে দেয়। পাকসেনারা এরপর নিরীহ গ্রামবাসীদের উপর অত্যাচার চালায় এবং বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়।

 ১৬ই জুন আমাদের কসবা অবস্থান থেকে একটি ছোট দল বগাবাড়ি নামক জায়গায় এ্যামবুশ পাতে। সকাল ৬টায় পাক সেনাদের একটি পেট্রোল পার্টি সবার দিকে তাদের টহলে আসে। পাকসেনাদের এই দলটি অসতর্কভাবে হঠাৎ আমাদের এ্যামবুশ পার্টির ব্যাংকারের নিকট চলে আসে। আমাদের এ্যামবুশ দলটি এ সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। অতি নিকট থেকে তাদের সমস্ত অস্ত্র গুলী চালাতে থাকে। অতর্কিত গুলীর আঘাতে প্রায় ১০জন পাকসেনা নিহত ও ৫জন আহত হয়। শুধু ২জন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

 পাকসেনারা ১৮ই জুন আমাদের অবস্থান কৈখোলার উপর গোলন্দাজ বাহিনীর সাহায্য প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে আমাদের অবস্থানকারী প্লাটুনটি কৈখোলা ত্যাগ করে এবং সঙ্গে সঙ্গে পাকসেনাদের একটি দল কৈখোলা দখল করে নেয়। ঐ দিন রাতে মেজর সালেক চৌধুরীর নেতৃত্বে আমাদের এ কোম্পানী ভোর রাতে কৈখোলায় অবস্থানরত শত্রুদের উপর প্রচণ্ড পাল্টা আক্রমন চালায়। হাবিলদার সালামের প্লাটুন শিবপুরের দিক থেকে এবং সুবেদার আবদুল হক ভূইয়ার প্লাটুন দক্ষিণ দিক থেকে শত্রুসেনাদের অবস্থানের ভিতর অনুপ্রবেশ করে যায়। হাবিলদার সালামের প্লাটুনের আক্রমনে পাকসেনাদের ভীষণ ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং পাকসেনারা হাবিলদার সালামের সামনের অবস্থানটি পরিত্যাগ করে পিছনে পালিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে পাকসেনাদের ভিতর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এবং শত্রুরা সমগ্র কৈখোলা এলাকা থেকে পালিয়ে যেতে শুরু করে। ২ঘণ্টার মধ্যে প্রচণ্ড আক্রমনের সামনে টিকতে না পেরে পাকসেনারা অবস্থানটি সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করে। এ যুদ্ধের ফলে পাক সেনাদের একজন জেসিওসহ ৩১জন সিপাই হতাহত হয়। এবং অবস্থানটি থেকে অনেক অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম দখল করা হয়।

 ১৯শে জুন লে. হুমায়ুন কবিরের হেড কোয়ার্টারে খবর আসে যে, পাকসেনাদের একটি প্লাটুন সাগরতলার ভিতর পেট্রলিং করার জন্য যেতে দেখা গেছে। লে. হুমায়ুন তৎক্ষনাৎ একটি প্লাটুন নিয়ে মন্দভাগের নিকট দ্রুত এ্যামবুশ পাতে। সন্ধ্যা ৭টায় পাকসেনারা ফেরার পথে তাদের দলটির শেষ অংশটিকে লে. হুমায়ুন এ্যামবুশ করে। এ্যামবুশে পাকসেনাদের ৯জন সৈন্য নিহত হয় এবং বাকি পাক সেনারা মন্দভাগ গ্রামের দিকে পালিয়ে তাদের জীবন বাঁচায়।

 জুন মাসের মাঝামাঝি লে. মাহবুব ৪র্থ বেঙ্গলের বি কোম্পানী থেকে একটি প্লাটুনকে পাকসেনাদের যাতায়াতের রাস্তা ধ্বংস করার জন্য কুমিল্লার দক্ষিণে প্রেরণ করে। এ দলটি ১৮ই জুন সন্ধ্যা ৬টায় কুমিল্লা লাকসামের বিজয়পুর রেলওয়ে ব্রিজ, কুমিল্লা বাগমারা রোডের সেতু উড়িয়ে দেয়। এই সেতুগুলোর ধ্বংসের ফলে কুমিল্লার দক্ষিণে সড়ক এবং রেলওয়ে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। ঐ দিনই দলটি বিজয়পুর এবং মিয়াবাজারের নিকট কয়েকটি ইলেকট্রিক পাইলন উড়িয়ে কাপ্তাই থেকে ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। পাকসেনাদের একটি প্লাটুন সন্ধ্যার সময় চৌরা'র নিকট পেট্রোলিং এ আসে। এই পাকসেনার দলটিকে এ্যামবুশ করলে ২ জন পাকসেনা নিহত হয়। পাকসেনারা পরে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলি জ্বালিয়ে দেয় এবং অত্যাচার চালায়। আমাদের পেট্রোল পার্টি খবর আনে যে, পাকিস্তানীদের প্রায় এক কোম্পানী সৈন্য মিয়াবাজারের উত্তরে একটি গোডাউনের মধ্যে অবস্থান করছে। পেট্রোলটি এই গোডাউনটিতে পৌছবার গোপন রাস্তা, পাকসেনাদের