পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১২৫

প্রায় ১৫জন লোক হতাহত হয়। আমাদের একজন আহত হয়। আক্রমণ প্রায় এক ঘণ্টা পর আমাদের লোকেরা পিছু হটে আসে।

 আমাদের রেকি পার্টি খবর আনে যে পাকসেনারা কসবার উত্তরে চন্দ্রপুর এবং লাটুমুড়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ সংবাদ পাবার পর লেঃ হুমায়ুন কবির পাকসেনাদের চতুর্দিকে থেকে এ্যামবুশ করার জন্য ৪র্থ বেঙ্গলের ডি কোম্পানীর তিনটি প্লাটুন ইয়াকুবপুর, কুয়াপাইনা এবং খৈনলে পাঠিয়ে দেয়। এই তিনটি প্লাটুন নিজ নিজ জায়গায় ২৩শে জুন সকাল ৬টার মধ্যে অবস্থান নেয়। পাকসেনারা সমস্ত রাত অগ্রসর হওয়ার পর সকালে আমাদের অবস্থানের সামনে উপস্থিত হয়।

 পাকসেনারা আমাদের উপরোল্লিখিত অবস্থানের ৫০ থেকে ১০০ গজের মধ্যে এসে পড়লে তিনদিক থেকে আমাদের সৈন্যরা পাকসেনাদের উপর আক্রমন চালায়। এ আক্রমণে পাকসেনাদের ৮জন নিহত এবং তিনজন আহত হয়। পাকসেনারা একটু পিছু হটে যেয়ে আবার আক্রমণের চেষ্টা চালায় কিন্তু সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়ে যায়। এরপর সমস্তদিন উভয়পক্ষে গোলাগুলী চলতে থাকে এবং সন্ধ্যার সময় পাকসেনারা পিছু হটে যায়। পাকসেনাদের পশ্চাদপসরণের সময়ও আমাদের ইয়াকুবপুরের প্লাটুন তাদেরকে দক্ষিণ দিক থেকে আক্রমণ করে বেশ ক্ষতিসাধন করে। পিছু হটে গিয়ে লাটুমুড়ার উত্তরে অবস্থান নেয় এবং প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরী করতে থাকে। ২৪শে জুন পাকসেনারা যখন লাটুমুড়াতে তাদের প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরী করতে থাকে। ২৪শে জুন পাকসেনারা যখন লাটুমুড়াতে তাদের প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরীতে ব্যস্ত ছিল, সকাল পাচটায় আমাদের কুয়াপাইনা ও খৈনাল এলাকা থেকে শত্রুদের বামে এবং দক্ষিণে আমাদের ৩টি প্লাটুন আবার অতর্কিত আক্রমন চালায়। এ আক্রমণের ফলে পাকসেনাদের ৯জন লোক নিহত হয়। আমাদের ১জন আহত হয়।

 নোয়াখালীর উত্তর পাকবাহিনী ফেনী থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত ট্রাকে টহল দিত। এ খবর আমাদের নোয়াখালী গেরিলা হেডকোয়ার্টার এ পৌঁছে। সেখান থেকে আমাদের ২টি এ্যামবুশ পার্টি বোগাদিয়া এবং বজরাতে পাঠানো হয়। ২১শে জুন এই দুই পার্টি সন্ধ্যায় উপরোক্ত দুটি স্থানে এ্যামবুশ পাতে। তারা রাস্তাতে একটি এ্যাণ্ট্রি ট্যাঙ্ক ও এ্যাণ্ট্রি পার্সোনেল মাইন পুতে রাখে। সন্ধ্যায় পাকসেনাদের দুটি ট্রাক ফেনীমুখে যাচ্ছিল। এই ট্রাক দুটি এ্যামবুশ স্থানে পৌছালে প্রথম ট্রাকটি এ্যাণ্টি ট্যাঙ্ক মাইনে পড়ে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গেই ধ্বংস হয়ে যায়। পরের ট্রাকটি পিছু হটে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু এ্যামবুশ পার্টি তাদের উপর গুলি চালাতে থাকে। পাকসেনারা উপায়ান্তর না দেখে ট্রাক থেকে বেরিয়ে পালাবার চেষ্টা করে। পলায়নপর শত্রুদের কিছুসংখ্যক গুলীতে মারা যায়, আর কিছু প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ এ্যামবুশ এ পাকসেনাদের ২টি ট্রাক সম্পূর্নরূপে ধ্বংস হয়ে যায় এবং ১২জন নিহত হয়। আমাদের পার্টি অনেক অস্ত্রশস্ত্র হস্তগত করে এবং বজরার এ্যামবুশ পার্টিও শত্রুদের একটি টহলদার দলকে আক্রমন করে ২জনকে নিহত এবং ২জনকে আহত করে। আর একটি পার্টি ২৩শে জুন পাকসেনাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা নষ্ট করে দেয়ার জন্য নোয়াখালীর শাহেবজাদা ব্রীজ, চন্দ্রগঞ্জ এবং রামগঞ্জ জেলা কাউন্সি ব্রীজ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়।

 পাকসেনারা লাটুমুড়াতে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অব্যহত রাখে কিন্তু ৪র্থ বেঙ্গলের ডি কোম্পানী লেঃ হুমায়ূন কবিরের নেতৃত্বে তাদেরকে সবসময় ব্যতিব্যস্ত রাখে।

 পাকসেনারা তাদের শালদানদী অবস্থান থেকে সবসময় মন্দভাগ দখল করে নেয়ার চেষ্টা চালাত। আমাদের ৪র্থ বেঙ্গলের সি কোম্পানী মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশন এবং জেলা বোর্ডের কাচা রাস্তা পর্যন্ত নিজেদের রেখে শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যুহ গড়েছিল। এ অবস্থানটির জন্য পাকবাহিনী চট্টগ্রাম-ঢাকা রেলওয়ে লাইন চালু করতে পারছিল না। সেজন্য সবসময়ই তাদের চেষ্টা ছিল মন্দভাগ থেকে আমাদের বিতাড়িত করা। এছাড়া এ অবস্থানটির জন্য তারা শালদানদী ছিটমহল যেখানে আমাদের মূল ঘাটি ছিল, তা তাদের দখলে আনতে পারছিল না। অনেকবার চেষ্টা করেও তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ২৪শে জুন বিকেল ৩টায় তাদের শালদানী অবস্থান থেকে