পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১২৮

চতুর্দিকে ছোটাছুটি করে এবং সমস্ত ঢাকায় একটা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। এ বিস্ফোরণগুলি ফলে ঢাকায় আমাদের বাঙ্গালীরা তাদের মনোবল আরো ফিরে পায় এবং তারা ইয়াহিয়ার ভাষণের সমুচিত জবাবে আনন্দিত হয়।

 মতিনগর থেকে ২টি মর্টার দিয়ে একটি ছোট দলকে গোমতীর উত্তর পাড় দিয়ে কুমিল্লা শহরের দিকে পাঠানো হয়। এ দলটি কুমিল্লা শহরের নিকট গিয়ে ভাষনের ঠিক সময়ে কুমিল্লা সার্কিট হাউসের উপর মর্টার দ্বারা গোলাবর্ষণ করে। কুমিল্লা সার্কিট হাউসে পাকসেনাদের মার্শাল ল'র প্রধান অফিস ছিল। মর্টারের গোলা এসে অফিসে পড়ার পর, সেখানেও পাকসেনারা ছুটাছুটি করতে থাকে। কুমিল্লা শহরেও কয়েক মিনিটের মধ্যে নিরবতা নেমে আসে।

 কুমিল্লা থেকে পাকিস্তানীদের একটি জীপ ও একটি ৩টনের গাড়ি দক্ষিণে যাচ্ছিল। লেঃ মাহবুবের একটি এ্যামবুশ পার্টি এই দলটিকে সন্ধ্যার ফুলতলীর নিকটে আক্রমন করে। এতে জীপটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। এ এ্যামবুশে পাকিস্তানীদের ২৪জন সৈন্য ৩জন অফিসার নিহত হয় এবং ১জন অফিসারসহ ৪জন আহত হয়। অফিসারটি লেঃ কর্নেল ছিলো।

 লেঃ মাহবুবের আর একটি প্লাটুন ঠিক ঐ সময় বিবিরবাজার শত্রু অবস্থানের ভিতর অতর্কিতে অনুপ্রবেশ করে ১টি মেশিনগানসহ কয়েকটি বাংকার করে দেয়। পাকসেনাদের ১১জন এতে নিহত হয়।

 এ ছাড়া, মিয়াবাজার, ফেনী, বিলোনিয়া, লাকসাম, শালদানদী, চাদপুর ইত্যাদি স্থানেও মর্টার ও গ্রেনেডের সাহায্যে পাক অবস্থানের উপর একযোগে একই রুপে আক্রমন চালান হয়।

 ইয়াহিয়া খান মনে করেছিল যে, তার ভাষণ দিয়ে তিনি বাঙ্গালীদের শান্ত করবেন এবং আবার তার মিথ্যা আশ্বাসে বাঙ্গালীরা তাদের অত্যাচারকে ভুলে যাবে, কিন্তু আমাদের সমস্ত এলাকা জুড়ে সবগুলো এ্যাকশনে তিনি নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছিলেন যে, বাঙ্গালীরা তার জবাব কি দিয়েছে।

সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেণ্ট

সাক্ষাৎকারঃ লেঃ কর্নেল শাফায়াত জামিল

 ১৯৭১ সনের ১লা মার্চ তারিখে আমি আমার চতুর্থ বেঙ্গলের এক কোম্পানী সৈন্য নিয়ে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে ব্রাহ্মনবাড়িয়া চলে আসি আমার সাথে চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেণ্টের আর একটা কোম্পানী ছিল যার কমাণ্ডার ছিল একজন পশ্চিম পাকিস্তানী সিনিয়র মেজর। আমাদের পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিল ভারতের সম্ভাব্য আক্রমণ মোকাবেলা করার জন্য ব্রাহ্মনবাড়িয়াতে গিয়ে প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরী করা। এখানে বলে রাখা দরকার যে, চতুর্থ বেঙ্গলে আমিই বাঙ্গালীদের মধ্যে সিনিয়র মোস্ট ছিলাম। আমরা চলে আসার পর কুমিল্লা সেনানিবাসে চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেণ্টের আরো দুই কোম্পানী সৈন্য থেকে যায়।

 ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আমি সব সময় কুমিল্লা সেনানিবাসের বাকি দুই কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করতাম। এ ব্যাপারে আমি সুবেদার আবদুল ওহাবকে ব্যবহার করতাম।

 মার্চের ১তারিখ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত কুমিল্লা সেনানিবাসের অস্বাভাবিক ঘটনাবলীঃ

 ১। আমাদের ইউনিট লাইনের চারদিকে পশ্চিম পাকিস্তানী অফিসার এবং জেসিওদের বিশেষ করে আর্টিলারী বাহিনীর লোকদের অস্বাভাবিক গতিবিধি বা চলাফেরা।

[১]


  1. ১৯৭১ সালের মার্চে ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেণ্টের মেজর পদে কর্মরত ছিলেন। সাক্ষাৎকারটি বাংলা একাডেমির দলিলপত্র থেকে সংকলিত।