পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১২৯

 ২। রাতের বেলায় মেশিনগান আমাদের ইউনিট লাইন, অফিসারদের বাসস্থান, অস্ত্রাগার এবং কোয়ার্টার গার্ডের দিকে পজিশন করে রাখত। এবং দিনের বেলায় সেনানিবাসের বাহিরেরদিকে পজিশন থাকত। তাছাড়া আমাদের ইউনিট লাইনের চারিদিকে উঁচু পাহাড়ে পরিখা খনন করে। জিজ্ঞেস করলে বলত “আমরা ট্রেনিং করেছি “।

 ৩। ইউনিট লাইনে বিগ্রেড কমাণ্ডার ও বিগ্রেড কমাণ্ডার অন্যান্য অফিসারদের অপ্রত্যাশিত পরিদর্শন।

 ৪। আমাদের খেলার মাঠের চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেণ্ট অফিসার ও জেসিদেরসাথে ব্রিগেডের অফিসার ও জেসিদের দৈনিক খেলাধূলা প্রতিযোগিতা (যেটাস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ছয় মাসে একবার, দুইবার হয়)। খেলার মাঠ রক্ষার জন্য অন্য রেজিমেণ্টের প্রটেকশন পার্টিকে অস্ত্রশস্ত্রসহ নিয়োগ করা।

 ৫। যদিও সম্ভব্য ভারতীয় আক্রমণের জন্য আমাদের উপর ছুটির ব্যাপারে কোন বাধা- নিষেধআরোপ করা হয় নাই। বরং চতুর্থ বেঙ্গলের কমাণ্ডিং অফিসার ও বিগ্রেড কমাণ্ডার জোয়ানদেরকে বলেন, যার যার ইচ্ছানুযায়ী ছুটি নিতে পারে।

 ৬। মার্চ মাসের ১৮/১৯ তারিখে ইউনিট লাইনে রাত প্রায় বারোটার সময় গোলন্দাজ বাহিনীর একজন বাঙ্গালী এসে খবর দেয় যে সেনানিবাসে আজ রাতে চতুর্থ বেঙ্গলের উপর পশ্চিম পাকিস্তানিরা হামলা চালাবে। এ খবর পাওয়া মাত্র ক্যাপ্টেন গফফার, লেফটেন্যাণ্ট মাহবুব, লেফটেন্যাণ্ট কবীর, বেঙ্গল রেজিমেণ্টের দুই কোম্পানি (যারা সেনানিবাসের ভিতরে ছিল) নির্দেশ দেয় যে, সব জোয়ান নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র অস্ত্রাগার থেকে নিয়ে যেন নিজেদের কাছে রাখে। চতুর্থ বেঙ্গলের সৈনদের দেখাদেখি সেনানিবাসের অন্যান্য পাকিস্তানি ইউনিট অস্ত্রশস্ত্র সহকারে তৈরি থাকে। সে রাতে কোন হামলা হয়নি। ২০শে মার্চ ভোরে সবাই অবার অস্ত্র জমা দেয়। রাতে অস্ত্রগার থেকে বাহির করার জন্য কারো কাছে কোন কৈফিয়ত চাওয়া হয়নি। চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেণ্ট কমাণ্ডিং অফিসার নিজে জেনেও উপরোল্লিখিত অফিসারদের কাছে কোন কৈফিয়ত চান নাই।

 ৭। বিগ্রেড কমাণ্ডার, ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার সপ্তাহে একবার সৈন্যদের উদ্দেশ্যে উপদেশ দিতেন, যেটা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার।

 ৮। ১০মার্চ, (১৯৭১) ১৭টি গাড়ি (রসদপত্র, তেল বোঝাই) কুমিল্লা থেকে সিলেট পাঠানো হয়। চতুর্থ বেঙ্গলের একজন সুবেদার সামসুল হক এবং দশজন (বাঙ্গালী) লোককে এই কনভয়কে প্রটেকশনে পাঠানো হয়। এই কনভয়ে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যও ছিল। দুই দিনে এই কর্ভয় কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসে। রাস্তায় বেরিকেড ছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এই কনভয়কে নিয়ে সিলেটের খাদিমনগরে পৌছাবার জন্য আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। রাস্তায় রাস্তায় বেরিকেড অতিক্রম করে খাদিমনগরে পৌছাতে তিন দিন লাগে। ১৫মার্চ আমি খাদিমনগর পৌছি ও নির্দেশ মোতাবেক ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসার প্রস্তুতি নিই। কিন্তু আমাকে বলা হয় যে, অনির্দিষ্টকালের জন্য আমাকে ৩১ পাঞ্জাবের সাথে থাকতে হবে। এ খবর পাওয়া মাত্র আমি কুমিল্লায় টেলিফোন করলাম। বাঙ্গালি আফিসাররা বিশেষ করে ক্যাপ্টেন গাফ্ফার, লেফটেন্যাণ্ট মাহবুব, লেফটেন্যাণ্ট কবীর এবং জেসিওরা কমাণ্ডিং অফিসাররা আমাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য করেন। ১৭/১৮ তারিখে আমি ও আমার চতুর্থ বেঙ্গলের অন্যান্য সৈনিক ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে আমার কোম্পানিতে ফিরে আসি।

 উপরোল্লিখিত আমি সন্দিহান হয়ে পড়ি। আমি সুবেদার ওহাবের মাধ্যমে কুমিল্লা সেনানিবাসে বেঙ্গল রেজিমেণ্টের অফিসার ও জেসিদের কাছে খবর পাঠাতাম যে, কোন পরিস্থিতিতেই তারা যেন আত্মসমর্পন না করে। যদি প্রয়োজন হয় অস্ত্র নিয়ে তারা যেন বেরিয়ে আসে।