পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১৩৫

সম্বন্ধে জানাই। তিনি বলেন, আমরা সমশেরনগর থেকে আজ রাতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পথে অগ্রসর হব এবং তোমরা যদি পার পাঞ্জাবী অফিসারদের প্রেফতার কর।

 রাত ২টার সময় লেঃ কর্নেল খিজির খান, মেজর সাদেক নেওয়াজ, লেঃ আমজাদ সাইদ এবং অন্যান্য অবাঙ্গালী সৈনিকদের প্রেফতার করার পরিকল্পনা নিই। সে পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়, কেননা মেজর সাদেক নেওয়াজ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিএণ্ডবি রেস্ট হাউসে আমার রুমে আমার পাশে ভর্তি করা একটা চাইনিজ স্টেনগান নিয়ে প্রস্তুত হয়ে বসে ছিল।

 ২৬শে মার্চ সকাল সাড়ে ৯টার সময় সভাকক্ষে সমস্ত অফিসারদের ১টা সভা ডাকা হয়। কিন্তু এর আগে ভোর সাড়ে চারটার সময় আমি অয়ারলেস সেটটি ধ্বংস করে দিই, কেননা এ অয়ারলেসের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাথে কুমিল্লা ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারের কথাবার্তা হত। সমস্ত টেলিফোন যোগাযোগও নষ্ট করে দেয়া হয়। আমাকে এটা করতে হয়েছিল, কেননা অয়ারলেস অপারেটরদের ৩ জনের মধ্যে ২ জনই পাঞ্জাবী ছিল। অয়ারলেসের মাধ্যমে শেষ যোগাযোগ করি মেজর খালেদ মোশাররফের সাথে। তাঁকে অনুরোধ করি অতি সত্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসে আমাদের সাথে যোগ দেবার জন্য।

 আমরা সবাই তাঁবুতে এসে জড়ো হই। সাড়ে ৯টার সময় মেজর শাফায়াত, লেঃ কবীর, লেঃ হারুন, আমিও জে- সি- ও'রা তাঁবু ঘিরে ফেলি। আমরা বিদ্রোহ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করি এবং মেজর শাফায়াত জামিল তাঁদের উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমরা আর পাকিস্তানী সৈন্য নই, আমরা এখন বাংলাদেশ সরকারের সৈনিক। আপনারা আমাদের বন্দী। পালাবার চেষ্টা করবেন না, করলে মারা যাবেন।” মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু ঘটে যায়। ৭২ জন পাকসেনাকে হত্যা ও ৩ জন পাক অফিসারকে গ্রেফতার করে ২৬শে মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শত্রুদের হাত থেকে মুক্ত করি।

 মেজর খালেদ মোশাররফ এবং লেঃ মাহবুব রাত সাড়ে ১১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসে পৌঁছেন। মেজর খালেদ মোশাররফের হাতে ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেণ্টের নেতৃত্ব দেয়া হয়। এরপর মেজর খালেদ আমাদের সবাইকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চারপাশে অবস্থান নিয়ে প্রতিরক্ষাব্যূহ গড়ার নির্দেশ দেন, কেননা, শত্রুরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া আক্রমণ করে আমাদের ধ্বংস করে দতে পারে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আমাদের হেডকোয়ার্টার করা হয়।

 আমাকে ১৮ জন সৈন্য নিয়ে গোকনঘাটে পাঠান হয়। ঢাকা থেকে ভীতসন্ত্রস্ত জনতা পালিয়ে আসতে থাকে। আমি ২ দিনের মধ্যে ২৫০ জন পলায়নপর পুলিশ, ইপি- আর নিয়ে একটা কোম্পানী তৈরী করে ফেলি। তৃতীয় দিনে পাকবিমান বাহিনী ৪টা স্যাবর জেটের সাহায্যে আমার এলাকায় স্ট্রাফি করতে থাকে। এতে আমার বাহিনীর ১ জন আহত হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় স্থলপথে কোন আক্রমণ তখনও শুরু হয়নি।

 এক সপ্তাহের মধ্যে আমি আমার কোম্পানীকে ৩০৩ রাইফেলের দ্বারা সজ্জিত করে ফেলি। ৫ই এপ্রিলের মেজর খালেদ মোশাররফ আমাকে আমার বাহিনী ক্যাপ্টেন মাহবুবের (পরে শহীদ হন) হাতে দিতে বলেন। তিনি ফ্রণ্টিয়ার ফোর্স থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের সাথে যোগ দেন। তার হাতে দায়িত্ব দিয়ে আমি ৫ই এপিলে সকাল ৯টার সময় অস্থায়ী হেডকোয়ার্টার তেলিয়াপাড়া চা বাগানে মেজর মোশাররফের কাছে যাই।

 মেজর খালেদ মোশাররফ আমাকে বলেন, ৩১তম পাঞ্জাব রেজিমেণ্ট সিলেট থেকে নদীপথে ভৈরব হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে আসছে। সেজন্য ৪র্থ বেঙ্গলের ১টা কোম্পানী নিয়ে আজবপুর ঘাট পজিশন নিয়ে শত্রুর ব্রাহ্মণবাড়িয়া বা ঢাকা যাবার পথে বাধা দিতে হবে। সেইমত আমি তাড়াতাড়ি আজবপুর ঘাটে যাই এবং সন্ধার মধ্যেই পজিশন নিয়ে নিই। এখানে এসে আমি ২য় বেঙ্গল-এর ক্যাপ্টেন নাসিমের (বর্তমান লেঃ কর্নেল) সাথে যোগাযোগ করি, যিনি আশুগঞ্জ এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলেন। ২য় বেঙ্গল রেজিমেণ্ট মেজর কাজী মোঃ শফিউল্লাহ'র নেতৃত্বে জয়দেবপুর ক্যাণ্টনমেণ্টে বিদ্রোহ করে ক্যাণ্টনমেণ্ট থেকে বেরিয়ে আসে। ময়মনসিংহ হয়ে