পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১৩৭

দিকে পালিয়ে যায় এবং সেখানে গিয়ে অবস্থান নেয়। যাবার সময় তারা বিধ্বস্ত গাড়ি ও অনেক মৃতদেহ ফেলে রেখে যায়।

 এ যুদ্ধ জয়ের ফলে আমার সৈন্যদের মনোবল অনেক বেড়ে যায়। কসবা নতুন বাজার দখল করার পর আমার হেডকোয়ার্টার কসবাতেই স্থাপন করি। অবশ্য আমি জানতাম, শত্রুরা কসবা দখল করার জন্য আবার বিপুল শক্তি সঞ্চয় করে আমাদের উপর আক্রমণ চালাবে।

 জুন মাসে মেজর খালেদের নির্দেশে মুন্সিরহাট, ফেনী, নোয়াখালী এলাকায় যাই। যাবার পূর্ব পর্যন্ত তারা কসবা দখল করতে সক্ষম হয়নি। এই ব্যাপক বিপর্যয়ের পর শত্রুসেনারা স্থানীয় দালালদের সহযোগীতা ছাড়া বাংকার থেকে বের হতো না।

কুমিল্লার সশস্ত্র প্রতিরোধ

সাক্ষাৎকারঃ মেজর আইনউদ্দিন[১]

২৬-১০-১৯৭৩

 একাত্তরের ২৫শে মার্চ রাত ১২ টার দিকে কুমিল্লা পুলিশ ক্যাম্প পাঞ্জাবীরা আক্রমণ করে এবং গণহত্যা করে। ২৫শে মার্চ রাতে তারা এসপিও ডিসিকে গ্রেপ্তার করে ক্যাণ্টনমেণ্টে নিয়ে আসে। সে সময় আমি কুমিল্লা ক্যাণ্টনমেণ্টে ছিলাম। ২৬শে মার্চ সকালে আমি যখন আমার বাসা বারান্দায় বসে ছিলাম, তখন গাড়িতে করে কিছু সাদা পোশাক পরা লোককে ধরে আনতে দেখি। ঐ দিন আমাকে মেজর জামিল (অবাঙ্গালী) নির্দেশ দিয়েছিলেন, তোমাকে রাতে অয়ারলেসে ডিউটি করতে হবে। আমি রাত ১১টার দিকে যখন ডিউটিতে ছিলাম ঐ সময় সিলেট থেকে পাঞ্জাবী বেলুচ রেজিমেণ্ট-এর সি-ও অয়ারলেসে কথা বলেন। সে সময় আমি বুদ্ধি করে নিজের নাম ও পদ গোপন করে একজন পাঞ্জাবীর নাম করে অয়ারলেসে কথা বলি। বেলুচ রেজিমেণ্টের সি-ও-র কথায় বুঝতে পারলাম যে শ্রীমঙ্গলে যে সমস্ত বাঙালী সৈন্য ছিল (খালেদ মোশাররফ সাহেব তখন শ্রীমঙ্গলে ছিলেন) তাদের আক্রমণ করবে, তার জন্য বেলুচরা রেকি করেছে। এ সংবাদ পেয়ে আমি কিভাবে এ সংবাদ শ্রীমঙ্গলে পাঠাবো তার চেষ্টা করি, কিন্তু ইতিপূর্বে বাঙ্গালীরা টেলিফোনের লাইন কেটে দেয়ায় ঐ জরুরী সংবাদটি শ্রীমঙ্গল পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। খালেদ মোশাররফ সাহেব খবর না পেলেও শ্রীমঙ্গল থেকে তার দলসহ সরে পড়েছিলেন।

 ২৭ তারিখে আমি সাধারণ পোশাক পরে আমার সৈন্যদের নির্দেশ দিয়ে যাই যে, যদি আমি রাত ১২টার ভিতর ব্রাহ্মবাড়িয়া থেকে ফিরে না আসি তবে যেন তারা হাতিয়ার নিয়ে ক্যাণ্টনমেণ্টের বাইরে একটি জায়গায় অপেক্ষা করে। নির্দিষ্ট জায়গাটি আমি ঠিক করে দিয়েছিলাম।

 আমি সাধারণ পোশাক পরে একখানা সাইকেলে চড়ে গ্রামের ভিতর দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে রওনা হই। দুপুর একটার দিকে পথিমধ্যে পাঞ্জাবী সৈন্যরা ট্রেঞ্চ কাটছিল। কিন্তু তারা আমাকে চিনতে পারেনি। তবে পথিমধ্যে কুমিল্লা- ব্রাহ্মণবাড়িয়া রাস্তায় কংশনগর বাজারে কিছু বাঙ্গালী আমাকে আটক করে। তারপর আমি আমার পরিচয়পত্র দেখিয়ে তাদের বুঝাই যে, আমি বাঙ্গালী একজন ক্যাপ্টেন, বিশেষ কাজে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাচ্ছি। অনেক তথ্য -প্রমাণ দেয়ার পর তারা আমাকে মোটরসাইকেলে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে পৌঁছিয়ে দেয়। আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাত দেড়টার সময় পৌঁছাই। আমি গিয়ে দেখি সকল পাঞ্জাবী সৈন্যকে বাঙালীরা গ্রেফতার করে ফেলেছে এবং ছোটখাটো সৈন্যদের বাঙালী সৈন্যরা মেরে ফেলেছে।


  1. ১৯৭১ সালের মার্চে ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেণ্টের কোয়ার্টার মাষ্টার হিসাবে ক্যাপ্টেন পদে কর্মরত ছিলেন। সাক্ষাৎকারটি বাংলা একডেমীর দলিলপত্র থেকে সংর্কত।