পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১৪৭

প্রচণ্ড আওয়াজে সেটি কয়েক হাত উপরের দিকে উঠে যায়। প্রচণ্ড আওয়াজে হানাদার খানসেনারা এতই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে যে তারা কয়েকজন অস্ত্র ফেলে প্রাণপণে পালানো চেষ্টা করে। অমনি শুরু হয় আমাদের গোলাগুলী। কয়েকজন হতাহতও হয়। জানা যায়, শত্রুরা পালিয়ে যাবার সময় জনসাধারণের হাতে দু'জন খানসেনা মাছ মারা রাকসা দ্বারা আহত হয়। শত্রুপক্ষের ফেলে যাওয়া বেশ অস্ত্রশস্ত্র আমাদের হস্তগত হয়। এখানেও সুবেদার ওয়ালীউল্লাহ অসীম বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন।

 ১২ই মে চৌমুহনীর দেড়মাইল উত্তরে মান্দারহাটে শত্রুদের উপর চরম আঘাত হানার জন্য আমি এক প্লাটুন মুক্তিসেনা নিয়ে এ্যামবুশ করার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। তখন চৌমুহনীতে পাকবাহিনীর বিরাট ঘাঁটি অবস্থান করছিল। এ সময়ে পাকবাহিনী গুপ্তচর দ্বারা খবর নিয়ে অতর্কিত এক ব্যাটালিয়ন সৈন্য নিয়ে আমাদেরকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করলে আমরা সেখান থেকে কোন প্রকারে পালিয়ে যেতে সক্ষম হই। কিন্তু পাকবাহিনী আমাদের ধরতে না পেরে মান্দারহাট বাজারটি পুড়িয়ে দেয়।

 ১৩ই মেঃ এদিন বিকেল দু'টায় খবর পেলাম নোয়াখালীর এস-ডি-ও দুই গাড়ী পাকসৈন্যসহ আজ লক্ষ্মীপুর পরিদর্শনে গেছেন। তাদের প্রত্যাগমনে বাধার দেওয়ার জন্য হাবিলদার নূর মোহাম্মদ এক প্লাটুন সৈন্য নিয়ে চন্দ্রগঞ্জের নিকট কোন এক জায়গায় এ্যামবুশ করেন। এ এ্যামবুশে এস-ডি-ও সহ কয়েকজন সৈন্য আহত হয়।

 ১৪ই মেঃ নায়েক আবুল হোসেন বিপুলাশ্বর স্টেশনের কাছে কয়েকটি মাইন পুতে রাখে। কিন্তু পাকসেনাদের গাড়ী অতিক্রম করার পূর্বেই একখানা ইট বোঝাই ট্রাক সে স্থান অতিক্রম করার সময় ট্রাকটি পড়ে যায়। অন্যদিকে একই দিনে হাবিলদার নূর মোহাম্মদ তাঁর প্লাটুন নিয়ে চন্দ্রগঞ্জে এ্যামবুশ করেন। লক্ষ্মীপুর থেকে অগ্রগামী একখানা লরী বোঝাই খানসেনাদের এ্যামবুশ করে ৫/৬ জনকে খতন করতে সক্ষম হয়। অসমর্থিত খবরে জানা যায়, একজন কর্নেলও নাকি নিহত হয়। পরে তারা দোয়াইরা গ্রামটি জ্বালিয়ে দেয়।

 ১৫ই মেঃ নায়েক সুবেদার ইসহাক এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ৭ মাইল পায়ে হেঁটে খিলপাড়ার পশ্চিমে মইলকার দীঘিরপারে পাক হানাদার বাহিনীর ছোট একটি ছাউনী আক্রমণ করে সেখান থেকে তাদেরকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়। নায়েক সুবেদার ইসহাক এখানে অত্যন্ত সাহসের পরিচয় দেয়।

 ১৮ই মে, ১৯৭১-সাহেবজাদার পুল ধ্বংসঃ ওয়ালীউল্লাহ মাইন দ্বারা সাহেবজাদার পুলটি ধ্বংস করে লাকসাম-নোয়াখালীর যোগযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

 ১৯শে মে বগাদিয়ায় পুনরায় সংঘর্ষঃ নয়েক আবুল হোসেনকে মাইন বসানোর নির্দেশ দিয়ে গোপনে এ্যামবুশ করে বসে থাকি। সকাল ৯টার সময় ৩জন পাকসেনা বেবী ট্যাক্সি করে লাকসাম যাবার সময় বগাদিয়ায় পৌঁলে পোঁতা মাইন বিস্ফোরণে বেবীট্যাক্টিটি কয়েক গজ দূরে উড়ে যায় এবং ৩জন খানসেনই নিহত হয়। এ খবর শত্রবাহিনীর কানে পৌছামাত্র এক কোম্পানী সৈন্য নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে আমরা গা-ঢাকা দিই।

 ২৬শে মেঃ সুবেদার ওয়ালীউল্লাহ দালাল বাজার রাজাকার ক্যাম্প আক্রমন করে ৩০ জন রাজাকারকে হত্যা করে এবং ৬টি রাইফেল উদ্ধার করে।

 ২৮ শে মেঃ পুনরায় সেক্টর কমাণ্ডারের আদেশক্রমে ভারতে কনফারেন্সে যোগ দিয়ে কিছু এ্যামুনিশন নিয়ে আসি।

 ২৯ শে মেঃ মীরের হাট থেকে ১৫ জনের একটি রাজাকার দল আসতে থাকলে হাবিলদার আব্দুল মতিন তাদেরকে আক্রমণ করে। শেষ পর্যন্ত ১৫ জন রাজাকারই হাবিলদার মতিনের হাতে ধরা পড়ে এবং নিহত হয়।