পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১৪৯

উজানিসারে প্রচণ্ড মার খেয়ে পাকিস্তানী সৈন্যদের এক ব্যাটালিয়ন সৈন্য গঙ্গাসাগর হয়ে আখাউড়া আসার চেষ্টা করে। আমাদের এক প্লাটুন ইপিআর হাবিলদার আসদ্দর আলীর নেতৃত্বে গঙ্গাসাগর ব্রীজে ডিফেন্স বানিয়েছিল। পাকিস্তানী সৈন্যরা সেখানে পৌঁছলে এক প্লাটুন ইপিআর তাদের উপর ফায়ার ওপেন করে। এই অতর্কিত আক্রমণে (১৫ই এপ্রিল) পাকিস্তানীদের ৩জন অফিসারসহ আনুমানিক ৭০/৭৫জন সৈন্য নিহত হয়েছিল। তিনজন অফিসারের কবর ও সৈন্যদের কবর সেখানে পাওয়া গিয়েছিল। প্লাটুনটির ডিফেন্স দুদিন সেখানে থাকে। পাকিস্তানী সৈন্যরাও তাদের ডিফেন্স মজবুত করে। পাকিস্তানী ব্রিগেড কমাণ্ডার ঐ ব্যাটালিয়নকে উইথড্র করে নতুন আর একটা ব্যাটালিয়ন গঙ্গাসাগরে পাঠায় এবং দুই দিনের মধ্যে গঙ্গাসাগরে মুক্তিফৌজদের ডিফেন্স ধ্বংস করে আখাউড়া পৌঁছার নির্দেশ দেয়। পাকিস্থানী সৈন্যরা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং গুলী ছুঁড়তে ছুঁড়তে আমাদের ডিফেন্সে চলে আসে। আর্টিলারী ও ৩" মর্টার দিয়ে তারা ওভারহেড ফায়ার অব্যাহত রেখেছিল। ইপিআর মোহাম্মদ সুফি মিয়া তখনও গুলী ছুঁড়ে চলছিল। পাকিস্তানী সৈন্যরা বাংকারে ঢুকে তাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। ল্যান্স নায়েক মোবাশ্বের আলীকেও বাংকারে ঢুকে বেয়নেট দিয়ে হত্যা করা হয়। ৭ জনকে গুরুতররূপে আহত অবস্থায় আগরতলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। ১৮ই এপ্রিল প্লাটুন-এর অন্যান্য সৈন্য উইথড্র করে আখাউড়া চলে আসে।

 ১৯শে এপ্রিল পুরো ইপিআর কোম্পানীকে ক্লোজ করে আখাউড়ায় একত্রিত করা হয়। এখানে ৪র্থ বেঙ্গলের ১টা কোম্পানীও এসেছিল ক্যাপ্টেন আইনউদ্দীনের নেতৃত্বে।

 ২১শে এপ্রিল ঘয়েরকোট ও ইটনা গ্রামে আমরা মিলিতভাবে ডিফেন্স করি।

 ২২শে এপ্রিল গঙ্গাসাগরে এক গ্রামবুশে আমরা ৬জন পাকিস্তানী সৈন্যকে হত্যা করি ও বাইশ হাজার চীনা এ্যামুনিশন উদ্ধার করি ৫টা রাইফেল ও একটা স্টেনগানসহ।

 ২৮শে এপ্রিল আমাদের দুট প্লাটুনকে ক্যাপ্টেন আইনউদ্দীন আজমপুরে আসার নির্দেশ দেন।

 ১১ই মে আজমপুরে আমরা এক এ্যামবুশ তৈরি করি। পাকিস্তানী সৈন্যদের একটি কোম্পানী সিলেটের মুকুন্দপুর থেকে আজমপুরের দিকে আসছিল। আমাদের দুটি প্লার্টুন নরসিঙ্গর নামক জায়গায় ওদেরকে এ্যামবুম করে। এই এ্যামুবশে তাদের ৬৩জন নিহত হয়।

 ১৩ই মে সিঙ্গারবিল এলাকায় এক এ্যামবুশে ৩ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়।

 ১৮ই মে এই এলাকায় এক রেইডে ৬ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়। একজন আহত সৈন্যকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছিল।

 ২৭শে মে রাজাপুর এলাকায় এক রেইডে ৪ জন পাকসেনা নিহত হয়।

 ২৯শে মে সিঙ্গারবিল এলাকায় এক এ্যামবুশে ৬ জন পাকসেনা নিহত হয়। ৩১শে মে সিঙ্গারবিলে আর এক এ্যামবুশে ১৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। ৪ঠা জুন দুটি এ্যামবুশে ৯ জন পাকসেনা নিহত হয় সিঙ্গারবিল এলাকায়।

কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলায় সশস্ত্র প্রতিরোধের আরও বিবরণ[১]

॥ বড় কামতার যুদ্ধ ॥

 বর্ডার পেরিয়ে আগরতলা এসে পৌঁছেছি। তারপর ক'টা দিন কেটে গেছে। মুক্তিবাহিনীর ভাইদের স্বচক্ষে দেখবার জন্য আর তাদের মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা শোনাবার জন্য আকুলি-বিকুলি করে মরছিলাম। কিন্তু আমাদের


  1. সত্যের সেন রচিত 'প্রতিরোধ সংগ্রামে বাংলাদেশ', কলিকাত, আগস্ট ১৯৭১ থেকে সংকলিত।