পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১৭১

না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোম্পানীর সঙ্গে কোন যোগাযোগ করতে পারেননি। ভোরে যখন যোগাযোগ হয় তখন ভীষণভাবে দুই দলের মধ্যে গোলাগুলি চলছিল। এই গোলাগুলি বেলা দুইটা-আড়াইটা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এই গোলাগুলিতে ৬ জন পাকিস্তানী ছাড়া আর সবাই মারা যায়। অবশিষ্ট ৬ জন পাকিস্তানী সৈন্যকে ময়মনসিংহ জেলে রাখা হয়। আমি ময়মনসিংহ পৌঁছার সাথে সাথে এ সমস্ত ঘটনা শুনতে পাই।

 ২৯ শে মার্চ বিকেল চারটা পর্যন্ত ব্যাটালিয়ন-এর সমস্ত লোক কনসেনট্রেট হয়। রাজেন্দ্রপুর কণ্টিনজেণ্ট রাত্রে পৌঁছে। আমি ময়মনসিংহে পৌঁছে আমার পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য সীমান্ত থেকে সমস্ত ইপিআরকে ময়মনসিংহে এসে কনসেনট্রেট হতে অর্ডার দিলাম। তারপর আমি ময়মনসিংহ পুলিশ অয়ারলেসে গিয়ে বাংলাদেশের যত জায়গাতে পুলিশ অয়ারলেস কমিউনিকেশন আছে সবাইকে লক্ষ্য করে এই নির্দেশ দিলাম যে, আমি মেজর সফিউল্লাহ (বর্তমানে বিগ্রেডিয়ার) দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্ট নিয়ে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছি। বর্তমানে ময়মনসিংহ এবং টাঙ্গাইল জেলা আমার নিয়ন্ত্রণাধীন আছে। আপনারা যে যেখানে আছেন, যদি বাঙ্গালী হন, যার কাছে যে অস্ত্র আছে তাই নিয়ে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এবং দেশকে পাকিস্তানীদের কবল থেকে স্বাধীন করতে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করুন। প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যে আমি বেশ উৎসাহব্যঞ্জক সাড়া পেলাম। যে সমস্ত জায়গা থেকে আমি কনফারমেশন পেয়েছি যে তারা অস্ত্র নিয়ে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, সেসব জায়গা হল- দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, ফেনী এবং চট্টগ্রাম।

 ২৯ শে মার্চ বিকেলে জেলা এডমিনিস্ট্রেশন-এর সমস্ত অফিসারবৃন্দ, জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত এম-এন এ এবং এম-পি এদেরকে নিয়ে এক বৈঠক করি। সেই বৈঠকে কিভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করতে হবে তার পরিকল্পনা নিই। জেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সামরিক বাহিনীকে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করার ভার বেসামরিক প্রশাসন এবং এম-এন ও এম-পি দের উপর ন্যস্ত করা হল। তাঁরা বেশ আগ্রহের সাথে এ দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। যুদ্ধ পরিচালনার ভার আমার হাতে রাখি। এই বৈঠকে এও সিদ্ধান্ত নেয়া হল যে, যুদ্ধ পরিচালনা করতে হলে অস্ত্রশস্ত্রের প্রয়োজন। এবং সেটা পাবার জন্য আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের কাছে আমাদের প্রস্তাব পেশ করা দরকার। তাই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হল যে, আমাদের একজন এম-এন-একে দিল্লী পাঠানো হবে আমাদের প্রস্তাব দিয়ে। আমরা এম-এন এ জনাব সৈয়দ আবদুস সুলতানকে বাংলাদেশের দূত হিসেবে দিল্লীতে আমাদের এ প্রস্তাব কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করার জন্য পাঠাবার সিদ্ধান্ত নিই। এ সিদ্ধান্তও নেয়া হল যে তাকে সীমান্তের বাইরে পাঠাবার পূর্বে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করা দরকার যে তারা আমাদের গ্রহণ করবে কিনা। এই মর্মে আমি একজন অফিসারকে (ক্যাপ্টেন আজিজুর রহমান, বর্তমানে মেজর) হালুয়াঘটে বিএসএফ-এর সাথে যোগাযোগ করতে পাঠাই। সে ওখানে পৌঁছার পর বি-এস-এফ-এর একজন অফিসার ক্যাপ্টেন বালজিতের সাথে দেখা করে। সেখানে ক্যাপ্টেন ছাড়াও আরো দু'জন অফিসার ছিলেন। একজন লেঃ কর্নেল সিনহা। তিনি ছিলেন ইণ্টেলিজেন্স-এর লোক এবং আর একজন ছিলেন সেখানকার বিএসএফ কমাণ্ড্যাণ্ট। তাদের কাছ থেকে আশাব্যঞ্জক সাড়া মেলে। তাঁরা আমাদের সব কিছু দিয়ে সাহায্য করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এই প্রতিশ্রুতি পেয়ে আমি সামরিক প্রস্তুতি জোরদার করি।

 ৩০ শে মার্চ সকাল পর্যন্ত ইপিআর, পুলিশ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্ট এবং কিছু আংশিক ট্রেনিংপ্রাপ্ত বেসামরিক লোকদের নিয়ে একটি বাহিনী গড়ে তুলি। যার লোকসংখ্যা ছিল তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার ময়মনসিংহে যখন পৌঁছি তখন আমার সাথে অনেক জেসিও এবং নিন্মলিখিত অফিসার ছিলেন: ১। মেজর নুরুল ইসলাম (বর্তমান লেঃ কর্নেল)। ২। মেজর মইনুল হোসেন চৌধুরি (বর্তমানে লেঃ কর্নেল)। ৩। মেজর নাসিম (বর্তমানে লেঃ কর্নেল)। ৪। ক্যাপ্টেন আজিজুর রহমান (বর্তমানে মেজর)। ৫। ক্যাপ্টেন এজাজ আহমদ চৌধুরী। ৬। লেঃ গোলাম হেলাল মুরশেদ (বর্তমানে ক্যাপ্টেন)। ৭। লেঃ ইবরাহীম। এছাড়া ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান (বর্তমানে মেজর) যিনি ময়মনসিংহে ছুটিতে ছিলেন তাকে আমি সাথে নিয়ে নিই। তাকে বলার সাথে সাথে সে আমার ব্যাটালিয়নে যোগ দেয়। এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত কাজী নুরুজ্জামান ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে যোগ