পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১৭২

 দেন। ময়মনসিংহ থেকে যাবার পথে দুইজন মেডিকেল কলেজের ডাক্তার নিয়ে নিই। তারা হচ্ছে ডাঃ আবদুর রহমান এবং ডাঃ আহমদ আলী।

 ময়মনসিংহ পৌঁছে আমি পাকিস্তান সেনাবাহিনী কোথায় কি করছ সে খবর নেওয়ার জন্য আমার অয়ারলেস দিয়ে মনিটরিং করি। এবং যে সমস্ত খবর পাই তন্মধ্যে ২৯শে মার্চের বিকেলের খবর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ঐ দিন ১৪ ডিভেশন-এর হেডকোয়ার্টারের কর্নেল সাদুল্লাহ এবং যশোর বিগ্রেডের বিগ্রেড মেজরের মধ্যে যে কথাবার্তা হয় তার মধ্যে নিম্নলিখিত উক্তি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কর্নেল স্টাফ রীতিমত বিগ্রেড মেজরকে গালিগালাজ করে বলছিলেন, “You have been routed by rag-tags. You people have no shame, How could you be routed by unarmed people? You need kick. However, tell your commander, if he needs any help, we will send air sorties. We are in any way sending two air-sorties to Kushtia circuit house. We have been able to tackle Dacca which did not bother us much. We are really concerned about Kushtia now. We have captured 8.L.B.Hq. We are now proceeding towards Radio Station.In the process we have suffered a lot of casualties. Send a c - 130 (Transport Aircraft) tomorrow to Chittagong, so that the dead and the wounded can be sent Dacca. If it cannot come then send an “Allwate" (IIcliopter) to naval basc at 10-30. If c-130 can come then. “Allwater” is not required.” এবং তারা এখন হয়ত ঢাকা থেকে এসব জায়গায় রি- ইনফোর্সমেণ্ট পাঠাবে। আমার আরো চিন্তার কারণ হয়ে পড়ে যখন জিওসিএর মেসেজ শুনলাম যে ৮ ইস্ট বেঙ্গল হেডকোয়ার্টার দখল করা হয়েছে তখন সাথে সাথে আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ি যে মেজর জিয়া (বর্তমানে বিগ্রেডিয়ার) তার দলবল নিয়ে হয়ত ধরা পড়ে গেছে। এমতাবস্থায় সেখানে এমন কোন অফিসার জানামত ছিল না যে নেতৃত্ব দিতে পারবে। আমি তখন এই সিদ্ধান্ত নিলাম যে অতিশীঘ্র ঢাকা আক্রমণ করা উচিৎ যেন ঢাকা থেকে কোন রি-ইনফোর্সমেণ্ট বাইরে না যেতে পারে।

 এই সিদ্ধান্তকে বাস্তবে রূপায়িত করার জন্য নিন্মলিখিত পরিকল্পনা নিলাম- নর্থ বেঙ্গল থেকে যাতে পাকবাহিনী ময়মনসিংহের দিকে না আসতে পারে সেই জন্য পুলিশ এবং ট্রেনিংপ্রাপ্ত বেসামরিক সৈনিকদের নিয়ে গঠিত এক কোম্পানী সৈন্য বাহাদুরবাদ ঘাটে পাঠাই। আর কোম্পানী ইপিআর সিরাজগঞ্জ ঘাটে পাঠাই। এক কোম্পানী ইপিআর এবং আংশিক ট্রেনিংপ্রাপ্ত বেসামরিক কোম্পানী গফরগাঁওয়ে পাঠাই। এক কোম্পানী ইপিআর পাঠাই টাঙ্গাইলে। ৩১ শে মার্চের মধ্যেই এরা এ সমস্ত জায়গায় পৌঁছে যায়। এ ছাড়া আরো দুই কোম্পানী লোক (ইপিআর) ঢাকার পশ্চিমাংশ মীরপুর, মোম্মদপুর এবং ঢাকা বিমানবন্দর এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ১লা এপ্রিলের মধ্যে আক্রমণ করার নির্দেশ দিয়ে পাঠাই। আমি আমার ব্যাটালিয়ান এবং ইপিআর-এর একটি কোম্পানী নিয়ে ঢাকার পূর্বদিক থেকে আক্রমণের পরিকল্পনা নিই। এ পরিকল্পনা আমি এ জন্য নিই যে, পাকবাহিনী প্রত্যাশা করছিল যে আমরা যদি তাদেরকে আক্রমণ করি তাহলে পশ্চিমাংশ দিয়ে করব। তাই তাদেরকে ধোঁকা দেয়ার জন্য পূর্বাংশ দিয়ে আক্রমণের পরিকল্পনা করি। এদিক দিয়ে আসার জন্য আমি যে রাস্তা ব্যবহার করেছিলাম তা ছিলো ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব- নরসিংদী ট্রেনে। তারপর নরসিংদী থেকে পায়ে হেঁটে ভাংগা দিয়ে শীতলক্ষ্যা পার হয়ে ঢাকায় পূর্বাংশ দিয়ে আক্রমণ করব। এই পরিকল্পনাও যেন ১লা এপ্রিলে বাস্তবায়িত হয় তারও ব্যবস্থা করি।

 ৩০ শে মার্চ আমি যখন জায়গায় জায়গায় নির্দেশ দিয়ে লোকজন পাঠাচ্ছিলাম তখন গাজীপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার সকাল সাড়ে এগারোটায় টেলিফোনে আমার সাথে কথা বলেন এবং বলেন যে দু'খানা জেট জঙ্গী বিমান জয়দেবপুরের প্যালেস ভীষণভাবে আক্রমণ করেছে এবং স্ট্রাফিং করছে। তার প্রায় ১৫ মিনিট পর আবার টেলিফোনে বললেন যে আর একখানা জঙ্গী বিমান জয়দেবপুর প্যালেসে বড় বড় বোমা ফেলছে। তাতে বিকট আওয়াজ হচ্ছে এবং প্রাসাদে আগুন লেগে গেছে। এ সংবাদ শুনে আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম এই