পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১৭৩

ভেবে যে আমরা ঠিক সময় বেরিয়ে পড়তে পেরেছি। আমাদের মনে কোন দ্বিধা রইল না যে আমরা কোন ভুল করিনি। বরং ঠিকই করেছি।

 আমরা পূর্বপরিকল্পনা মত লোকজন জায়গায় জায়গায় পাঠিয়ে দিই। আমি আমার বাহিনী নিয়ে ৩০ শে মার্চ ট্রেনযোগে নরসিংদীর দিকে রওয়ানা হই। অল্পসংখ্যক কম্পার্টমেণ্টে আমরা এক সাথে সবাই যেতে পারছিলাম না। তাই অল্প অল্প করে গন্তব্যস্থানে পাঠাচ্ছিলাম।

 ময়মনসিংহ থেকে চলে আসার পূর্বে আমি জনগণকে আশ্বাস দিলাম যে আমি আমার ব্যাটালিয়ন নিয়ে শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ করতে যাচ্ছি। ৩০ শে মার্চ আমি আমার হেডকোয়ার্টার ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ স্থানান্তরিত করি। কিশোরগঞ্জে ক্যাপ্টেন মতিন (বর্তমান মেজর) নামে আর একজন অফিসারের সাথে দেখা হয়। সে তখন বাড়িতে ছিল। তাকে বলার সাথে সাথে সেও আমাদের সাথে যোগ দেয়।

 ৩১ শে মার্চ পর্যন্ত আমাদের লোক গন্তব্য স্থানের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। যারা সর্বপ্রথম রওয়ানা হয়েছিলো ১লা এপ্রিল বিকেল পর্যন্ত ঢাকার পূর্বাঞ্চল বাসাবো, ডেমরা এ সমস্ত স্থানে গিয়ে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছিল। সেদিন আমি কিশোরগঞ্জে অবস্থান করছিলাম। তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে একটি খবর আসলো যে মেজর খালেদ মোশাররফ (বর্তমান কর্নেল) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাবডিভিশন তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন রেখেছেন এবং তিনি আমার সাথে কথা বলতে চান। আমি যখন তাঁকে আমার পরিকল্পনার কথা বললাম তখন তিনি আমাকে অনুরোধ করলেন যে আমি যেন ঢাকা অভিমুখে অগ্রসর না হয়ে তার সাথে যোগাযোগ করি। ঐ দিনই আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে চলে যাই। আমার সৈনিকরা যারা ঢাকার অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছিল আমি তাঁদের আর বাধা দিইনি। মেজর খালেদ মোশাররফ কি বলতে চান তা জানার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাঁর সাথে দেখা করতে চাই। আমি যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌঁছি তখন খালেদ সেখানে ছিলেন না। তিনি তার সেকেণ্ড-ইন-কমাণ্ড মেজর শাফায়াত জামিল (বর্তমানে লেঃ কর্নেল)-কে মেসেজ দিয়ে পাঠান। এরপর আমি ফিরে আসি। আমি যেদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাই সেদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ফেরার পথে দু'খানা জঙ্গী বিমান আমাদের তাড়া করে। বেশ কিছুক্ষণ ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে স্ট্রাফিং-এর পরে তিতাস গ্যাস ওয়েল ট্যাঙ্কার-এর উপর বোমাবর্ষণ করে এবং এতে আগুন ধরে যায়। আমাদের সৈনিকরা যারা ভৈরবে ছিল তাদেরকেও জঙ্গী বিমান দুটো খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। কিন্তু না পেয়ে তারা নরসিংদীতেও খোঁজাখুঁজি করে। আমাদের সন্ধান কোথাও পায়নি। দিনটি ছিল ১লা এপ্রিল।

 মেজর খালেদ মোশাররফ মেজর শাফায়াত জামিল মারফত আমার নিকট যে মেসেজ পাঠান তা ছিল নিন্মরূপঃ “Do not go towards Dacca. You will be banging your head against wall. We have liberated an arca whole of Brahmanbaria Subdivision and a part of Sylhet. Before taking any further action on Dacca, we should jointly liberate this whole area and then go for Dacca. I had already contacted Indian BSF officers and they have agreed to help us. I could not come and meet you today because I am going to meet Brigadier B. C. Panda of BSF who promised me to help us.”

 তার পরিকল্পনা আমার মোটামুটি পছন্দ হলো। কারণ, আমি জানি যে তখন ঢাকাতে পাকিস্তানের যে সমস্ত সৈনিক এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্র আছে আমাদের তার ১০ ভাগের এক ভাগও নেই। তাই যাতে আমরা যুক্তভাবে একটা পরিকল্পনা নিতে পারি সেই চিন্তা আমি করছিলাম। এবং আমি এই সিদ্ধান্তে আসি যে, আমাদের এভাবে তাড়াহুড়া করে ঢাকা আক্রমণ করা ঠিক হবে না। আমি তখন আমার অফিসারদের নির্দেশ দেই যে যারা ঢাকা অভিমুখে অগ্রসর হয়েছে তারা যেন নিম্নরূপ মোতায়েন হয়ঃ এক কোম্পানী যেন ঢাকা- নরসিংদী রাস্তা পাহারা দেয়। এক কোম্পানী আশুগঞ্জ আর বাকী লোক যেন ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে চলে আসে। ঢাকার পূর্বাংশ ও পশ্চিমাঞ্চলে যে সমস্ত সৈনিক গিয়েছিল তাদের সাথে পাকবাহিনীর ছোট ছোট সংঘর্ষ হয়। আমার সাথে পর্যাপ্ত অয়ারলেস