পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১৮৩

বাগানের শ্রমিকদের কাছ থেকে জানতে পারা যায় প্রায় ৬৫ জনের মত পাকসেনা নিহত হয়েছিল। এই এ্যামবুশে যাঁরা বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ ১। ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান (বর্তমানে মেজর) ২। হাওয়ালদার আবুল কালাম (বর্তমানে সুবেদার)।

 তেলিয়াপাড়া এ্যামবুশ ১৬ই মে, ১৯৭১ সন- মতিন তখন তেলিয়াপাড়ায় নিযুক্ত ছিলেন। নালুয়া চা বাগানে এক কোম্পানী পাকসেনা এ্যামবুশ হবার পর তাদের বেশকিছুসংখ্যক হতাহত হয়। তাদের সাহয্যার্থে চুনারুঘাট থেকে আরো কিছুসংখ্যক সৈন্য একত্রিত হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। তেলিয়াপাড়ার নিকট তারা পুনরায় এ্যামবুশ হয়। এই এ্যামবুশ-এর নেতৃত্ব দিচ্ছিল ক্যাপ্টেন মতিন। এ এ্যামবুশে ও ট্যাংকবিধ্বংসী মাইন ব্যবহৃত হয়। পাকসেনাদের একখানি গাড়ী ধ্বংস হয় এবং বেশকিছুসংখ্যক সৈনিক হতাহত হয়।

 যেহেতু আমাদের গেরিলা যুদ্ধের কৌশল ছিল “হি এণ্ড রান”-শত্রু নিপাত এবং নিজের কম ক্ষতি। তাই আমাদের সৈন্যরা যুদ্ধে লিপ্ত না হয়ে শত্রুর উপর আঘাত হেনে পিছনে চলে আসত। কিছুদিন পর জানা গিয়েছে যে ঐ এ্যামবুশে প্রায় ৪০/৫০ জন পাকসেনা হতাহত হয়েছিল। তেলিয়াপাড়া এ্যামবুশঃ ১৯শে যে ১৯৭১ সন-তেলিয়াপাড়ার এই দিন পতন ঘটে। মুর্শেদ ছিলেন এর প্রতিরক্ষায় নিযুক্ত। পাকসেনারা যখন সিলেট সড়কের উপর বার বার এ্যামবুশ হচ্ছিল এবং ১৬ তারিখের এ্যামবুশে যখন তাদের বিশেষ ক্ষয়ক্ষতি হয় তখন বোধহয় তাদের সাহায্যার্থে পাকসেনাদের প্রায় দুই কোম্পানী সৈন্য ব্যাহ্মণবাড়িয়া থেকে সিলেট অভিমুখে আসে। সেদিন রাতেই তেলিয়াপাড়ার চা বাগানের নিকটবর্তী এলাকার চারখানা ট্যাংকবিধ্বংসী মাইন পুঁতে আমাদের সৈনিকেরা সিলেট সড়কের উপর ওত পেতে বসে থাকে। এই এ্যামবুশের নেতৃত্ব দিচ্ছিল লেঃ মোর্শেদ। দলে তার লোক ছিল ১৫ জন। কনভয়-এর প্রথম গাড়িটি মাইনের উপর দিয়ে চলে যায় কিন্তু মাইন ফাটেনি। যখন দ্বিতীয়, তৃতীয় গাড়ী মাইন অতিক্রম করছিল সাথে সাথে দুখানি গাড়ীই একত্রে বিধ্বস্ত হয়। পেছনের গাড়ীতে যে সমস্ত পাকসেনা ছিল তারা গাড়ী থেকে পিছনে বেশ কিছু দূরে এক খোলা ময়দানে একত্রিত হয়। পাকসেনাদের দুর্ভাগ্যবমতঃ ঐ খোলা মাঠের নিকটবর্তী এলাকায় আমাদের একদল লোক মেশিনগান নিয়ে ওত পেতে বসেছিল। এবং পাকসেনাদের যারা এখানে একত্রিত হয়েছিল তাদের প্রায় সবাই মেশিনগানের গুলিতে হতাহত হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে সৈন্য এসে সে সব মৃতদেহ ও আহত ব্যক্তিদের নিয়ে যায়। এই যুদ্ধে আমাদের একজন মোজাহেদ পাকসেনাদের হাতে ধরা পড়ে। পরে সে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়। এ এ্যামবুশে পাকসেনাদের বিপুল পরিমান অস্ত্রমন্ত্র এবং একখানা গাড়ী আমাদের হস্তগত হয়। এছাড়া তাদের তিনখানা গাড়ী বিধ্বস্ত হয়। পাকসেনাদের হতাহতের সংখ্যা ১৩০ থেকে ১৫০ জনের মত ছিল।

লেঃ কর্নেল (অবঃ) কাজী আবদুর রকীবের প্রতিবেদন

'বিচিত্রা'

১৩ মে ১৯৮৩

 ২৫শে মার্চ ১৯৭১। সকাল ৯টা কি ১০টার দিকে ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবার আমাকে আমার অফিস থেকে (আমি তখন ঢাকাতে ৩২ নং ব্যাটালিয়ন পাঞ্জাব রেজিমেণ্টের সি-ও ছিলাম) ডেকে হুকুম করলেন যে তোমাকে সেকেণ্ড ইস্ট বেঙ্গলের সি-ও নিযুক্ত করা হল, কর্নেল মাসুদকে অপসারণ করা হয়েছে। ব্যাটালিয়নের দায়িত্বভার গ্রহণের সময় ব্রিগেডিয়ার মজুমদার (তদানীন্তন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টাল সেণ্টার কমাণ্ডার, যাকে আগের দিন অর্থ্যাৎ ২৪ শে মার্চ চিটাগাং থেকে আনা হয়েছিল) তোমাকে ব্যাটালিয়নের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন। কর্নেল মাসুদ দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে যাবেন না।