পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১৮৯

 এরপর আমার চিন্তা হল গাজীপুরের কোম্পানীর সঙ্গে কিভাবে “কো-অর্ডিনেণ্ট” করা যায়। আনুমানিক সাড়ে এগারটা বারটার দিকে ঐ কোম্পানী সুবেদার চাঁদ মিয়া একটা গাড়ী নিয়ে আসলেন দুই রাত্রি আগে যে দুই পলাটুন জয়দেবপুর থেকে ওখানে যায় তাদের বিচানা নিয়ে যেতে। ক্যাপ্টেন আজিজ এবং সুবেদার নূরুল হত তাকে আমার কাছে নিয়ে আসলেন। আমি তাদেরকে বললাম যে, ওকে (চাঁদ মিয়াকে) প্লান বলে দিন। তাদের কিছুক্ষণ কথা বলার পর আমি সুবেদার চাঁদ মিয়াকে নির্দেশের সারাংশ এইভাবে বলিঃ

(1) সন্ধ্যার সময় থেকে তার কাছে ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে যে অয়ারলেস সেটের সংযোগ আসে সেটা খুলে রাখতে। যখন সংকেত যাবে “এখন সাড়ে সাতটা বাজে” তখন থেকে তোমরা রওনা হবার এ্যাকশন শুরু করবে।

(2) এ্যাকশন শুরুর প্রথম কাজ হবে অর্ডন্যান্স ডিপোতে যে অয়ারলেস সেটের ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যোগ আছে তাকে নষ্ট করে দেওয়া যাতে আমাদের খবর ঢাকা অথরিটি সঙ্গে সঙ্গে না পায়।

(3) অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরীতে যত গাড়ী আছে এবং আশেপাশে যতটা সম্ভব গাড়ী দখল করে নিতে এবং ঐ গাড়ীসমূহ নিয়ে ময়মনসিংহের দিকে ‘মুভ’ করতে।

(4) ‘মুভের’ সময় অর্ডন্যান্স ডিপোতে রক্ষিত ব্যাটালিয়নের পুরানো হাতিয়ারসমূহ এবং গোলাবারুদ যতটা সম্ভব নিয়ে যেতে।

(5) এম, ও, ডি, সি’র লোক যতটা সম্ভব সংগে নিয়ে যেতে এবং যারা যেতে পারবে না তাদেরকে নির্দেশ দিতে যে ঐ ডিপো থেকে দূরে সরে যেতে, কারণ পরে তারা আর্মি এ্যাকশেনের শিকার হবে।

 সুবেদার চাঁদ মিয়া চলে যাওয়ার পর আমার খেয়াল হল যে মেজর আসজাদ লতিফ তার অবাঙালী কোম্পানী কামাণ্ডরকে ওখানে থেকে সরিয়ে আনার দরকার যাতে চাঁদ মিয়া নিরূপদ্রবে তৈরী হতে পারেন। তাই আমি তাকে আমার সঙ্গে ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টারে লাঞ্চ করার জন্যে ডেকে পাঠালাম। জয়দেবপুরস্থ সমস্থ বাঙালী অফিসার এবং জেসিওরা যে যার দায়িত্বমত প্রস্তুতি নিয়ে যাচ্ছিল, এবং আইরের ভাবখানা ছিল যে সবকিছুই নর্মাল বা সাধারণভাবে চলছে। আমি মোটামুটিভাবে অবাঙালী অফিসারদেরকে গল্পচ্ছালে আমার আশেপাশে রাখছিলাম, যাতে তারা এ ব্যাপারে আঁচ করতে না পারে। আমি অবশ্য মাঝে মাঝে এদিকে-ওদিকে যেয়ে ছোটখাট নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, যাকে বলে সামরিক ভাষায় “টাইং আপ”। আমার নিজস্ব যথেষ্ট চিন্তা ছিল অন্য জায়গায় কি হচ্ছে বা না হচ্ছে তা সঠিক জানা ছিল না- এই বিদ্রোহের পরিণতি কি হবে কে জানে, যদি সফল না হয় তাহলে নিজের ক্যামিলি এবং ছেলেরা ঢাকা ক্যাণ্টনমেণ্টে, তাদের পরিণতি কি হবে, ইত্যাদি।

 (আজ ১২/১৩ বৎসর পরে ঐ দিনের কথা চিন্তা করলেও যথেষ্ট আতংকিত হয়ে পড়ি। ঐ দিনে ভবিষ্যৎ ছিল অজনা-দেশাত্মবোধই ছিল একমাত্র প্রেরণা।)

 এসব ছাড়াও আমার জানা প্রয়োজন ছিল যে, গতকাল রাত্রে টঙ্গীতে ‘আর্মি এ্যাকশনের’ পর কত সৈন্য আছে, কারা আছে, পজিশন তারা কতদূর পর্যন্ত নিয়েছে এবং আমাদে ‘মুভ’-এর সময় তাদের বাধা দেওয়ার ক্ষমতা কতদূর আছে। দুপুরে খাওয়ার পরে আমি নিজেই যাবার মনস্থ করছিলাম, কিন্তু ক্যাপ্টেন আজিজের ইশারায় এবং পরামর্শে মেজর আসজাদ লতিফকে কিছু সৈন্য ‘এসকর্ট’ দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হল। তাকে বলে দেওয়া হল যে, টঙ্গীতে যেসব সৈন্য পৌছে গিয়েছে তারে সঙ্গে ‘মিলাপ’ করে এসো এবং বিশেষ আগের রাতে আমাদের ব্যাটালিয়নের একখানা ডজ গাড়ী যেটা টঙ্গী ব্রিজের কাছে ড্রাইভার ফেলে রেখে আসতে বাধ্য হয়েছিল, সেটা কি অবস্থায় আছে দেখবার জন্যে এবং সম্ভব হলে ‘রিকভার’ করার ব্যবস্থা করে আসতে। এই ব্যবস্থায় আমাদের দুইটা সুবিধা হল। প্রতমত, এই অবাঙালী অফিসারকে তার কোম্পানী থেকে অধিক সময় সরিয়ে রাখা এবং টঙ্গীতে যদি কোন অঘটন ঘটে তা হলে প্রথম চোটটা অবাঙ্গী অফিসাররের উপর দিয়ে যাবে। এ অফিসার