পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/২২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১৯৭

আমরা জয়দেবপুর থেকে বেরিয়ে পড়ব। কিন্তু বেরিয়ে যাওয়ার পূর্বে আমরা অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরীতে দুই প্লাটুন সৈন্য এবং রাজেন্দ্রপুর এম্যুনিশন ডিপোতে এক প্লাটুন সৈন্যের কথা চিন্তা করি এবং তাদেরকে কিভাবে আমাদের মাঝে আনতে পারি সে বিষয়ে চিন্তা করি। এভাবে ২৬শে মার্চ জয়দেবপুর কাটাই।

 ২৭শে মার্চ সকালে আমরা সবাই মিলে লেঃ কর্নেল রকীবকে কিছুটা জোর করে অয়ারলেসে ময়মনসিংহে অবস্থিত কোম্পানীকে জানাতে বললাম যে, তারা জনসাধারণের সঙ্গে যোগ দেয় এবং সম্মিলিতভাবে কাজ করে। লেঃ কর্নেল রকীব তখন অয়ারলেসে ময়মনসিংহে মেজর (বর্তমানে লেঃ কর্নেল) নূরুল ইসলামকে আমাদের কথা জানাতে বাধ্য হলেন এবং তাদেরকে জনসাধারণের সঙ্গে মিশতে বলেন।

 ২৮শে মার্চ ক্যাপ্টেন (বর্তমান মেজর) আজিজকে সকালে পাঠানো হল রাজেন্দ্রপুর”এম্যুনিশন ডিপোতে" এবং সেখানে তিনি গিয়ে আমাদের বাঙ্গালী কোম্পানীকে খবর দেবেন কিভাবে তারা বের হয় এবং আমাদের পাওয়া মাত্র যেন বের হয়। এ খবর নিয়ে ক্যাপ্টেন আজিজ চলে গেলেন।

 সকাল দশটার সময় ৪টা ট্রাক ও ৩টা জীপ নিয়ে আমরা এক কোম্পানী অগ্রসর হলাম ময়মনসিংহের দিকে। আমি টাঙ্গাইল থেকে গেলাম। পুরা কোম্পানী নিয়ে মেজর শফিউল্লাহ্ ময়মনসিংহ চলে যান। যাবার পথে বহু লোক পথের মধ্যে হাত তুলে ও 'জয় বাংলা' ধ্বনি দিয়ে আমাদেরকে স্বগত জানায়।

 আমি টাঙ্গাইল পৌঁছেই জানতে পারলাম যে টাঙ্গাইলে অবস্থিত বাঙ্গালী কোম্পানী পূর্বেই জনসাধারণের সঙ্গে যোগ দিয়ে কাজ শুরু করেছে। তখন আমার সঙ্গে কাদের সিদ্দিকী আলাপ করতে আসেন। কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে কিছুক্ষণ আলাপ করার পর কয়েকটি গাড়ী সংগ্রহ করার প্রতিশ্রুতি দিল।

 আমি আমার কোম্পানীর সৈন্যদের নিকট গিয়ে তাদেরকে আমার আয়ত্তে নিলাম। উক্ত কোম্পানীর কোম্পানী কমাণ্ডার ছিলেন মেজর কাজেম কামাল (পাঞ্জাবী)। তাঁকে আশ্বাস দিয়ে বললাম ভয় না করার জন্য। সন্ধ্যায় ডাকবাংলোতে কাজেম কামালের সঙ্গে কিছুক্ষণ আলাপ করি। পরে আমি আমার ড্রাইভার ও গার্ডকে নিয়ে জীপে রাস্তায় বেরুলাম জয়দেবপুর থেকে আমাদের কোম্পানী আসছে কিনা দেখবার জন্য। কিছুদূর যাবার পর অনেক দূরে একটি গাড়ীর আলো দেখতে পাই। মনে হল আমাদের সৈন্যরা জয়দেবপুর থেকে আসছে। আমি ডাকবাংলোতে ফিরে আসছি এমন সময় ডাকবাংলোতে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেল। সোজা ডাকবাংলোতে না পৌঁছে আমি আমার সুবেদারকে ডেকে ব্যাপারটি জিজ্ঞেস করলাম। সুবেদার বললো, স্যার কিছু না, সব ঠিক আছে। গোলাগুলি শেষ হবার পর ডাকবাংলোয় গিয়ে দেখি মেজর কাজেম কামাল ও তার সাথে আরও ৫/৭ জন পাঞ্জাবী সৈন্য আহত ও নিহত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মেজর কাজেম কামাল ও তার পাঞ্জাবী সৈন্যরা আমার অনুপস্থিতিতে পালানোর চেষ্টা করে এবং গুলি শুরু করে। আমাদের সৈন্যরা পাল্টা গুলি করলে তারা আহত ও নিহত হয়। এমন সময় আমাদের জয়দেবপুরের সৈন্যরা টাঙ্গইল পৌঁছে।

 জয়দেবপুরের সৈন্যরা টাঙ্গাইল পৌঁছলে তারা আমাকে আমার কোম্পানীসহ ময়মনসিংহের দিকে অগ্রসর হতে বলে এবং তারাও মযমনসিংহের দিকে রওনা দেয়। আমি তখন নিহত পাঞ্জাবী সৈন্যদের সরিয়ে ফেলার জন্য জনসাধারণকে অনুরোধ করি। আমার গাড়ী তখনও সংগ্রহ না হওয়ায় আমি নিজেই কয়েকটি গাড়ী তাড়াতাড়ি সংগ্রহ করি। তখন রাত প্রায় তিণ্টা। আমি আমার সৈন্যদের নিয়ে ময়মনসিংহের দিকে অগ্রসর হই। রাস্তায় অনেক ব্যারিকেড থাকায় বেশী দূর অগ্রসর হতে পারলাম না।

 ২৯শে মার্চ ভোরে আমরা মুক্তাগাছার কাছাকাছি পৌঁছলাম। আমাদের পূর্বে জয়দেবপুর থেকে যে সেনাদলটি ময়মনসিংহ রওনা দিয়েছিল তারাও মুক্তাগাছায় পৌঁছেছিল। তারা ময়মনসিংহের দিকে রওনা দেয়। আমি মুক্তাগাছাই রয়ে গেলাম। মধুপুরেও কিছু সৈন্য ছিল। সকাল দশটার দিকে মেজর নূরুল ইসলাম ময়মনসিংহ