পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
২০৪

বেশ কয়েকজন নিরীহ লোককে হত্যা করেছিল। তারা গ্রামে ঢুকে লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগে লিপ্ত হয়েছিল। থানার বাঙ্গালী পুলিশদের কেউ কেউ খানসেনাদের সাথে সহযোগিতা করেছিল। তারও লুটতরাজে লিপ্ত ছিল। সিপাহী হারুনকে আমি রেকি করতে পাঠিয়েছিলাম। হারুন গিয়ে দেখে খানসেনারা লুটতরাজ-অগ্নিসংযোগ করে চলে গেছে। বাঙ্গালী পুলিশ ও অফিসাররা লুটতরাজ করে এক ধনী হিন্দুবাড়ি থেকে টাকা-স্বর্ণ নিয়ে যাচ্ছে। সিপাহী হারুন তাদেরকে বাধা দেয় এবং বলে যে আপনারা বাঙ্গালী হয়ে বাঙ্গালীর উপর অত্যাচার করছেন। তখন হারুনের উপর তারা ওসি'র নির্দেশে ৭ রাউণ্ড ফায়ার করে। সে কোনরকমে তার সাইকেল ফেলে চলে আসে। তখন ঐ দিন রাতেই আমরা কাটিয়াদী থানার উপর আক্রমণ করি। ভোরবেলায় বাঙ্গালী ও-সি' কে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘাতক পুলিশ পালিয়ে যায়। এখানে থেকে ১৭টি রাইফেল ও প্রচুর গোলাবারুদ উদ্ধার করি।

সিপাই মোঃ আফতাব হোসেন, নং ১৫২৬৯
বাংলাদেশের রাইফেলস, সেক্টর হেডকোয়ার্টার
কুটিবাড়ি, দিনাজপুর।

শত্রুর প্রচণ্ড চাপে মনতলার পতন[১]

মেজর এম, এস, এ ভূঁইয়া

 মে মাসের শেষের দিক। তেলিয়াপাড়া পতনের পর ক্যাপ্টেন নাসিম (বর্তমানে মেজর) সিলেটের পাকিস্তানী এলাকা মনতলায় প্রতিরক্ষা ব্যূহ রচনা করেন। মেজর মঈন প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করেন হরশপুর এবং মুকুন্দপুরে। ঐ দিক থেকে শত্রুর প্রবল হামলার আশংকা থাকায় আমাদের দু'ধারের পজিশন মধ্যবর্তী স্থানে প্রতিরক্ষ ব্যবস্থা সুদৃঢ় করার জন্য পাঠানো হলো। আমার সাথে দেয়া হলো ৫০ জন জোয়ান। সঙ্গে অস্ত্র দেওয়া হলো একটি ভারী মেশিনগান, ৭টি হালকা মেশিনগান এবং বাকীগুলি রাইফেল। জায়গার তুলনায় আমার সাথে লোকসংখ্যা এবং অস্ত্রের পরিমাণ ছিল নগণ্য। এত অল্পসংখ্যক লোক দিয়ে আমাকে প্রায় আড়াই মাইল ফরোয়ার্ড লাইন কভার করতে হয়েছিল। আমাদের মিলিটারী ট্রেনিং অনুযায়ী এত বিরাট এলাকা কভার করা ছিল অকল্পনীয়।

 যা হোক, এই অল্পসংখ্যক লোক নিয়েই আমি মনতলা থেকে গিলাতলী এবং তারপর ইখতেয়ারপুর গ্রাম পর্যন্ত কভার করলাম। অবশ্য আমার অসুবিধা টের পেয়ে আমাকে আরও ২০ জন লোক দেওয়া হয়। এই ২০ জনের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বিমান বাহিনীর লোক। সুতরাং পদাতিক বাহিনীর ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে তাদের ধারণা খুব স্পষ্ট ছিল না। আমি যাওয়ার আগেই শত্রুরা সেখানে আক্রমণ চালিয়েছিল। কিন্তু তাদের আক্রমণ কার্যকর হয়নি। প্রত্যেক বারই তাদের আক্রমণ ব্যাহত হতে লাগল। বাধ্য হয়ে শত্রুরা তাদের সংখ্যাবৃদ্ধিতে ব্যাপৃত হল। শত্রুবাহিনী দিনের বেলা কয়েকবারই আমাদের উপর আক্রমণ চালালো। প্রথমে তারা আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যূহের ডাক দিয়ে আক্রমণ চালায়। আমি এবং মেজর নাসিম প্রতিরক্ষা ব্যূহের ডান দিকে দুটি ভারী মেশিনগান রেখেছিলাম। ফলে শত্রুর পক্ষের আমাদের অবস্থান ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব হল না। একদিন দিনের বেলায় আক্রমণের সময় শত্রুবাহিনীর প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হলো। শত্রুঅনেক মৃতদেহ পিছনে ফেলে রেখে হটে যেতে বাধ্য হলো।

 আরেকদিন শত্রুবাহিনীর সাথে আমাদের লড়াই হলো মুখোমুখি। এ সময়ে শত্রুর সৈন্যসংখ্যা ছিল বিপুল। শত্রুবাহিনীর সংখ্যাধিক্যে আমাদের জোয়ানরা কিছুটা ভড়কে গিয়েছিল। তাদের কেউ কেউ আমাদের কোম্পানী


  1. মুক্তিযুদ্ধে নয় মাস ১৯৭৪ গ্রন্থ থেকে সংকলিত।