পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
২১৩

পাই যে, অবাঙ্গালী ২০/২৫ জন মুজাহিদ কোতে ঢুকিয়া ডিউটি শুরু করিয়াছে। অন্য দিকে, তাহাদের কিছু জেসিও মেসে, কিছু অফিসের ভিতর, কিছু ক্যাপ্টেন সাহেবের বাসায় এবং অন্যদিকে ২৫/৩০ জনের একটি গ্রুপ পেট্রোল ডিউটি আরম্ভ করিয়াছে। তখন কয়েকজন বাঙ্গালী জোয়ান দৌড়াইয়া আমার নিকট আসিয়া বলে যে, আমরা কি করিব। অবস্থা খুবই খারাপ দেখিয়া আমি ওদেরকে নিজের জায়গায় থাকিতে আদেশ দেই এবং যে কোন মূল্যে কোয়ার্টার গার্ড নিজেদের আয়ত্বে রাখিতে আদেশ দেই।

 অন্যদিকে বেঙ্গল রেজিমেণ্টের কোম্পানী যাহা পুকুর পারে ছিল তাহাদের মধ্যে নায়েক সুবেদার বড়ুয়া এবং নায়েক সুবেদার মোশাররফ হোসেনকে (দুই জনই বাঙ্গালী) ডাকাইয়া অবস্থা তাহাদেরকে জানাই এবং তাহাদের মনোভাব অতি সতর্কতার সহিত অনুভব করি,যেহুতু তাহারাও আর্মি। এই ভাবে রাত্রি সাড়ে নয়টার সময় আমি পরিষ্কার বুঝিতে পারি যে আমাদের উপর হামলা হইবে। তাই আমি পরিস্থিতি সম্বন্ধে মেজর নূরুল ইসলামকে ডাক বাংলোয় খবর পাঠাই। কিন্তু কোন উত্তর পাওয়ার আগেই রাত্রি প্রায়সাড়ে এগারটার সময় অবাঙ্গালীদের তরফ হইতে প্রথম ফায়ার আসে যাহাতে বাঙ্গালী একজন জোয়ান আহত হয়। অমনি দুই দিক হইতে তুমুলভাবে আগ্নেয়াস্ত্রের গর্জন শুরু হয়। এই যুদ্ধে ২৭ তারিখ রাত্রি সাড়ে এগারটা হইতে পরদিন বিকাল সাড়ে পাঁচ ঘটিকা পর্যন্ত ছিল। ইপিআর হেডকোয়ার্টারের দুই দিকের আগ্নেয়াস্ত্রের গর্জনে সারা ময়মনসিংহ কাপিয়া উঠে। এই দীর্ঘ আঠার ঘণ্টার যুদ্ধে বাঙ্গালীরা সংখ্যায় ছিল প্রায় ২২০ জন আর অবাঙ্গালীরা ছিল ১৩৮ জন। সারারাত যুদ্ধ চলে। সকালের দিকে শহর ও গ্রাম হইতে প্রায় ১০/১৫ হাজার বাঙ্গালী সিভিল লোক বাঙ্গালীদেরকে খাবার, পানীয় ও অন্যান্য যথাসম্ভব সাহায্য করে। অবাঙ্গালীদের মধ্য হইতে ১২১ জন মারা যায় এবং বাকী সতের জন আমার নিকট আত্মসমর্পণ করিতে বাধ্য হয়। যাহারা আত্মসমর্পণ করিয়াছিল তাহাদের মধ্যে সুবেদার মেজর জিন্নত খাঁ, নায়েক সুবেদার বোস্তান খাঁ, নায়েক সুবেদার খান বাহাদুর, হাবিলদার গোলাম হায়দার, হাবিলদার নাজির বাদশাহ প্রমুখ ছিল। যাহারা মারা যায় তাহাদের মধ্যে ক্যাপ্টেন কমর আব্বাস, একজন এয়ারফোর্সের অফিসারও ছিল।

 প্রকাশ থাকে যে, আমি সকাল সাড়ে আটটার দিকে উক্ত উইং- এর অধীনে বর্ডারে থাকা কোম্পানীগুলিকে একটি অয়ারলেস মেসেজ দ্বারা হেডকোয়ার্টারের পরিস্থিতি জানাই। (১) কোম্পানীগুলি ছিল সুবেদার হাকিম সাহেবের সাথে নকশী, (২) সুবেদার জিয়াউল হক সাহেবের সাথে করইতলী এবং (৩) সুবেদার আজিজুল হকের সাথে লেংগুরায়। আমি মেসেজে তাহাদেরকেও জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার অনুরোধ জানাই, যাহা তাহারা করেন।

 এই যুদ্ধের পর আমি মোজাহিদ অস্ত্রাগার দখল করি এবং কোতে থাকা ১৪৭২টা রাইফেল, ২৮টি এলএমজি, বেশ কিছু স্টেনগান, এক লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার ৩০৩ গুলি, প্রায় ছত্রিশ হাজার ৯ এমএম গুলি এবং আরও যুদ্ধসরঞ্জাম দখল করি, যাহা পরে তৎকালীন মেজর বর্তমানে মেজর জেনারেল কে,এম,শফিউল্লাহ সাহেবকে দেই।

 এখানে উল্লেখযোগ্য যে বেঙ্গল রেজিমেণ্টের সি-কোম্পানীর সাহায্য আমি চাহিলে সিনিয়র জেসিও বড়ুয়া বলেন যে মেজর সাহেবের বিনা হুকুমে সে আমাকে সাহায্য করিতে পারিবেনা। তারপর নায়েক সুবেদার মোশাররফ হোসেন সকাল প্রায় নয়টার দিকে কিছু লোক নিয়া আমার সাথে যোগ দেয়, কিন্তু ঘণ্টাখানেক পর আবার বিরত হইয়া যায়। অন্যদিকে মেজর নূরুল ইসলাম, তার সঙ্গী লেফটেন্যাণ্ট মান্নান সাহেবের কোন খোজ পাওয়া যায় নাই। সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ছয়টার দিকে যখন আমি উইং-এর লোকেশন বদলী করার জন্য পুলিশ লাইনের ভিতর দিয়া যাইতে ছিলাম তখন আমার ৪/৫ জন লোক মেজর সাহেবকে আমার সঙ্গে ঐ জায়গায় দেখা করাইলে জানিতে পারি যে মেজর সাহেব ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে চলিয়া গিয়াছিলেন। আমি মেজর সাহেবকে