পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/২৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
২২১

সশস্ত্র প্রতিরোধঃ সিলেট

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৬। সিলেট অঞ্চলে সংঘটিত সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধের বিবরণ বাংলা একাডেমি দলিলপত্র ১৯৭১

সিলেটের প্রতিরোধ যুদ্ধ

সাক্ষাৎকারঃ ব্রিগেডিয়ার চিত্তরঞ্জন দত্ত[১]

২৪-৩-৭৩

 ২৫শে মার্চ বড় বড় শহরে পাকিস্তানীরা যে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিল সে খবর আমরা জানতে পারলাম ২৬শে মার্চ। সঙ্গে সঙ্গে হবিগঞ্জের আবালবৃদ্ধবনিতা প্রতিরোধ দুর্গ তৈরি করতে আরম্ভ করল। প্রতিটি হবিগঞ্জবাসী যেন তখন এক-একটা বহ্নিশিখা।

 ২৭শে মার্চ ১৯৭১ সন আমার বাড়ীতে বসে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে কয়েকজন মিলে নানা আলাপ আলোচনা চলছে। তখন কয়েকজন ছাত্র এসে আমাকে বলল, “দাদা, পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন।” আমি বললাম, “আমিও তা চাই।” অপ্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রদের মতানুযায়ী চলা ঠিক নয়। তাই আমি ওদেরকে বল্লাম কর্নেল রব (এমসিএ)- এর কথা, যিনি বর্তমানে জেনারেল রব। কিছুদিন আগে তিনি ঢাকাতে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগদান করে এসেছেন। তাঁর কাছ থেকে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা জানা যাবে, এই ভেবে বললাম, কর্ণেল রব যদি আমাকে বলেন তাহলে আমি এই মুহূর্তে প্রস্তত।

 ২৭শে মার্চ শনিবার ১৯৭১ সন। বেলা প্রায় দু’টায় জেনারেল রব তার বাড়ীতে আমাকে যাবার জন্য খবর পাঠালেন। গিয়ে দেখলাম কামরার ভেতরে বসে আছে আনসার মুজাহিদের কয়েকজন, সামরিক বাহিনীর কয়েকজন যারা ছুটি কাটাতে এসেছিলেন এবং কিছু সংখ্যক ছাত্র। বাড়ির বাইরের খোলা জায়গায় বিরাট ভীড়। আমাকে দেখেই সকলে “জয় বাংলা” “জয় বাংলা” বলে আনন্দে চীৎকার করে উঠল। দেখলাম হাতিয়ার নিয়ে প্রায় ১৫০ জনের মত লোক যাবার জন্য তৈরী। কয়েকটি বাস ও ট্রাক একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। চারধারে শুধু ধ্বনিত হতে লাগল “জয় বাংলা”। আমি হাত উঠিয়ে সকলকে অভিবাদন করলাম।

 ঘরের ভেতরে ঢুকতেই জেনারেল রব সকলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, আজই পাঁচটায় যে লোকবল আছে তাদের নিয়ে সিলেটকে মুক্ত করবার জন্য যাত্রা করব। যুদ্ধ পরিচালনার ভার আমাকে দেয়া হল। আমি হাসিমুখে আমার সম্মতি জানিয়ে সকলকে অভিবাদন জানালাম এবং যাত্রাপথে গাড়ীতে আমাকে উঠিয়ে নিতে অনুরোধ করলাম।

 জেনারেল রবের বাড়ী থেকে বেরিয়ে আসা মাত্র চারিদিকে “জয় বাংলা” জয়ধ্বনি উঠতে লাগল। মনটা আনন্দে ভরে উঠল। হাতজোড় করে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করলাম, শক্তি দিও যেন বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে পারি।

 ২৭শে মার্চ বেলা পাঁচটায় একটা জীপ ও পাঁচটা বাস ও ট্রাক আমার বাসার সামনে এসে দাঁড়াল। চারিদিকে শুধু “জয় বাংলা” ধ্বনি। লোকে লোকারণ্য। আমি আমার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের বললাম, স্বাধীনতার ডাক এসেছে। আমাকে এখনি যেতে হবে। “জয় বাংলা” বলে সকালের কাছ থেকে বিদায় নিলাম।


  1. ১৯৭১ সালের মার্চে মেজর পদে কর্মরত ছিলেন।