পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/২৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
২৩০

সিলেটে সশস্ত্র প্রতিরোধ

সাক্ষাৎকারঃ ল্যান্সনায়েক সোনা মিয়া

৬-১১-১৯৭৪

 ২৫শে মার্চ আমি সিলেটের ১২নং শাখা খাদিমনগরে ছিলাম। আমি ইনটেলিজেন্স ইনচার্জ ছিলাম। ১৮ই মার্চ আমাদের উইং ব্যারাকের ভিতর পাকিস্তানীরা বাংকার করে। এই নিয়ে পাকিস্তানীদের সাথে আমার বচসা হয় এবং আমার বিরুদ্ধে কেস দাঁড় করায়। ২২শে মার্চ আমাদের সম্পূর্ণ হাতিয়ার জমা নিয়ে নেয়। উইং কমাণ্ডার ছিল মেজর শওকত খান। সেকেণ্ড ইন কমাণ্ড ছিল দু’জন পাঞ্জাবী ক্যাপ্টন। হবিগঞ্জে একজন কোম্পানী কমাণ্ডার ছিল সুবেদার বি, আর, চৌধুরী। তামাবিলে একজন কমাণ্ডার ছিল সুবেদার মজিবুর রহমান। সুনামগঞ্জে কমাণ্ডার ছিল সুবেদার নাজিবুর রহমান এবং উইং হেডকোয়ার্টারে একটি করে কোম্পানী ছিল কমাণ্ডার ছিল একজন পাঞ্জাবী সুবেদার। হেডকোয়ার্টারে একটি সাপোর্ট প্লাটুনও ছিল। কমাণ্ডার ছিল আবুল ফজল মিয়া।

 ২২শে মার্চ তারিখে সকল অবাঙ্গালী ইপিআরকে হেডকোয়ার্টারে নিয়ে আসা হয়। আমাদের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে নিলেও অবাঙ্গালীদের চাইনীজ অস্ত্র ইস্যু করে পাকিস্তানীরা গোপন বৈঠক করতো। এই অবস্থা দেখে আমরা ডাইরি ফার্মে গোপন আলোচনা করি। উপস্থিত ছিল উইং হাবিলদার মেজর ওয়াহিদুল ইসলাম, নায়েক হাফিজুল্লাহ চৌধুরী এবং আমি। আমরা সিলেট ডিসি এবং এসপি’র সাথে যোগাযোগ করি। ৩নং শাখার সাথেও যোগাযোগ করি। সমস্ত বিষয় অবগত করাই। সেক্টরে গিয়ে ক্যাপ্টেন আলাউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করি।

 ৩০শে মার্চ সকাল অনুমান ৬টার সময় ১১পাঞ্জাবী আমাদের উইং ঘিরে ফেলে আক্রমণ করে। আমরা উইং থেকে পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিলাম। আক্রমণে হাবিলদার শরাফত ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। কোয়ার্টার গার্ড হাবিলদার মজিবুর রহমান শহীদ হন।

 গায়াইন ঘাটে আমাদের ৬০/৭০ জন ইপিআর আশ্রয় নেয়। কিছু জনতা এবং কিছু মুজাহিদ আমাদের সাথে আসে। হাবিলদার মেজর ওয়াহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্লাটুন, একটি নায়েক হাফিজুল্লার এবং আরেকটি প্লাটুনের নেতৃত্ব আমার ছিল। সার্বিক দায়িত্ব ছিল ওয়াহিদুল ইসলামের উপর। এই ৩ প্লাটুন নিয়ে আমরা সবাই জাফলং টি গার্ডেনের ম্যানেজার কায়েস চৌধুরীর কাছে যাই। কায়েস চৌধুরীর কাছে ৩১শে মার্চ পৌঁছাই। ওখানে গিয়ে বিএসএফ ক্যাপ্টেন রাওয়ের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তারা আমাদেরকে কিছু অস্ত্র সাহায্য করে। আমরা সিলেটের পথে অগ্রসর হই। পথে সুবেদার মজিবুর রহমান তাঁর কেম্পানী নিয়ে আমাদের সাথে মিলিত হয়। সুবেদার মজিবুর রহমান গোয়াইন ঘাটে থকলেন আহার, বস্ত্র ইত্যাদির জন্য। আমরা ১৭৫ জনের মত ইপিআর ছিলাম এবং কিছু কিছু আনসার, মুজাহিদ ও ছাত্র ছিল।

 আমরা খাদিমনগরে পৌঁছলাম ২রা এপ্রিল। ৩রা এপ্রিল আমরা সিলেটের দিকে অগ্রসর হই। সিলেট বেতার কেন্দ্রের কাছে পাক বাহিনী আমাদের উপর গুলি ছোড়ে। আমরা ওখানে ডিফেন্স নিই। পাক বাহিনীর সাথে আমাদের সংঘর্ষ হয়। আমরা সিলেট শহর দখল করে নিই। কর্নেল চিত্তরঞ্জন দত্ত জকিগঞ্জ বাস ষ্ট্যাণ্ডের কাছে ডিফেন্স নিলেন। আমরা শহরের ভিতর, কর্নেল দত্ত শহরের বাইরে অবস্থান করছিলেন। সুবেদার বি, আর চৌধুরী ইপিআর, বাহিনী নিয়ে কর্নেল দত্তের সঙ্গে থাকেন। সুবেদার নজিবুর রহমান ইপিআর ফোর্স নিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে সুবোধ বাজারে ডিফেন্স নেন।

 এপ্রিলের ৮/৯তারিখে পাক বাহিনী আমাদের উপর কাউণ্টার এটাক চালায়। কর্নেল দত্ত এবং সুবেদার নজিবুর রহমান তার কোম্পানী নিয়ে আমাদের সাহায্য করতে পারেননি। পাকসেনা স্থল ও বিমান হামলা করে। আমরা টিকতে ব্যর্থ হই! পিছু হটে খাদিমনগর চলে যাই। ৯ তারিখেই রাতে সুবেদার বি, আর, চৌধুরী তাঁর কোম্পানী নিয়ে আমাদের সাথে মিলিত হন। সুবেদার নজিবুর রহমান সুবোধ বাজার থেকে টুকুর বাজারে ডিফেন্স স্থানান্তর করে। এখবর আমরা পেলাম ১১ই এপ্রিল