পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/২৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
২৩১

 খাদিমনগরে পাক বাহিনী বিমান এবং স্থল আক্রমণ করে। পাক বাহিনীর ব্যাপক আক্রমনে আমরা টিকতে ব্যর্থ হই। সব বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। চিকনাগুলে আমরা আবার ডিফেন্স নিলাম। এখানে আবার বিএসএফ ক্যাপ্টেনের সাথে যোগাযোগ করি। বিএসএফ ক্যাপ্টেন রাও-এর অনুরোধে ৫২৫ জনের মত বিএসএফ সাহায্যে এগিয়ে আসে। তামাবিল সিএণ্ড-বি রোডের (যেটি সিলেট থেকে শিলং গেছে) ডান দিকে ইপিআর, বাম দিকে বিএসএফ পজিশন নেয় এপ্রিলের ২০ তারিখে।

 ২৪ তারিখে বিএসএফ বাহিনী ডিফেন্স ছেড়ে ভারত চলে যায়। আমরা তা জানতে পারি না। ২৫ তারিখে ভোরে পাক বাহিনীর ব্যাপক আক্রমণে আমরা টিকতে ব্যর্থ হই। ২৫/৩০ জনের মত শহীদ হন বাংকারে।আমরা পিছু হটি। পালাবার পথে ট্রাকে রিক্সায় পলায়নরত ৭৫ জন ইপিআর এবং বেঙ্গল রেজিমেণ্টের অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার শহীদ হন।

 আমরা বাকী সব মিলে ১২৫ জনের মত জৈন্তিয়াতে আশ্রয় নিই। ২৫শে এপ্রিল পাক বাহিনী এখানে পৌঁছায়। আমরা পিছু হটি এবং ভারতীয় সীমান্ত তামাবিলে আশ্রয় নিই। পাকসেনা সীমান্ত তামাবিলে পৌঁছায়। আমরা বাংরাদেশেরভরতীয় বিএসএফ ক্যাম্প লাতাং-এ আশ্রয় নিই। আমাদের যাবতীয় অস্ত্র জমা দিই। এরপরই আমরা বিএসএফ-এর আওতায় যাই। তারা আহার ও আশ্রয় দেয় এবং আমরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ করি। কিছু দিন পর বিএসএফ-এর ঊর্ধ্বতন অফিসারের সাথে কথা বলি এবং আমরা অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত তামাবিল এবং মুক্তাপুরে ডিফেন্স করি। তামাবিলের দায়িত্ব নেন ক্যাপ্টেন মুতালিব (অবসরপ্রাপ্ত) এবং সুবেদার বি, আর, চৌধুরী। সার্বিক দায়িত্ব ক্যাপ্টেন মুতালিবের উপর থাকে। দল পুনর্গঠন করে যুদ্ধ শুরু করি।

সশস্ত্র প্রতিরোধে সিলেট

সাক্ষাৎকারঃ সিপাই শফিক আহমেদ

৮-১১-১৯৭৪

 আমি ২৫শে মার্চের পূর্ব থেকেই সেক্টর হেডকোয়ার্টার সিলেটে ছিলাম। সিলেটের অধীন তখন ৩টি উইং ছিল-১নং, ৩নং এবং ১২নং উইং। ১নং উইং কুমিল্লার কোটবাড়ীতে ছিল। ৩নং উইং এবং ১২নং উইং ছিল সিলেট শহরে। সেক্টর কমাণ্ডার ছিলেন লেঃ কঃ সেকান্দার খান (অবাঙ্গালী), সেকেণ্ড-ইন-কমাণ্ড ছিলেন মেজর করিম (অবাঙ্গালী), এ্যাডজুটেণ্ট ছিল ক্যাপ্টেন নসির নাজির (পাঞ্জাবী)। কোয়ার্টার মাস্টার ছিল একমাত্র বাঙ্গালী অফিসার ক্যাপ্টেন আলাউদ্দিন। মেজর এম, এ, কুদ্দুস সেই সময় এ, এম, সি ছিলেন। সিগনাল অফিসার ছিল আহসান কাদির ফয়েজ। উল্লেখ্য যে, ভারতীয় বিমান হাইজ্যাকের পর থেকেই সিলেটের খাদিমনগরে একটি রেজিমেণ্ট থাকতো। এখানে ৩১ পাঞ্জাব এবং এফ-এর একটি কোম্পানী থাকতো।

 সেক্টর হেডকোয়ার্টারে ইপিআর প্রায় ছিল না। সিগনালের একটি এবং সহকারী (কেরানী) সহ আমরা ৫০/৬০ জন ছিলাম। ১৯/২০ মার্চ থেকে ৩১ পাঞ্জাব-এর ১টি প্লাটুন ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টারে থাকা শুরু করে। ১২নং শাখার ১টি প্লাটুন ২৪শে মার্চ তারিখে সেক্টর হেডকোয়ার্টারে আসে। সেখানে মাত্র ৪/৫ জন বাঙ্গালা ছিল, বাকী সবাই ছিল অবাঙ্গালী।

 ২৬শে মার্চ বিভিন্ন গ্রাম থেকে ঢাল, সড়কি, বল্লম নিয়ে হাজার হাজার জনতা সিলেট শহরে আসতে থাকে। পাক সেনারা তাদের উপর গুলি চালায়, বহু বেসামরিক নিরীহ লোক নিহত হয়। শহরে তখন কারফিউ চলছিল। ২৬ তারিখে যে সকল ইপিআর অফিসে অনুপস্থিত ছিল তাদেরকে কর্তৃপক্ষ ডেকে আনতে বললেন। ২৬শে মার্চ আমাদেরকে একটি করে লাঠি দেয় আকস্মিক আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য।