যশোর ইপিআর হেডকোয়ার্টার থেকে ইপিআর মেজর চুয়াডাঙ্গাতে যান আমাদের সকল অফিসারকে 'আনবার জন্য কনফারেন্সের নাম করে ২৫ তারিখ সকাল ১০টার দিকে।
রাতে ফিরে শুনলাম যশোরের মেজর চুয়াডাঙ্গায় অবাঙ্গালী ক্যাপ্টেন মোঃ সাদেকের বাসায় আছেন। ২৬ শে মার্চ সকাল সাড়ে ছ'টার দিকে মেজনসহ ক্যাপ্টেন সাদেক ও তার পরিবার আমার বাড়িতে আসে। আমি বাথরুমে ছিলাম। বের হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মেজর বললো “এতনা জলদী আগিয়া”? আমি বললাম, হ্যাঁ, কাজ শেষ হয়ে গেছে।' আমি মেজরকে দুপুরের খানা খেয়ে যেতে বললাম। অবাঙালী মেজর রাজী হল না।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর হতে আমাদের কাছে চিঠি আসে কত পাঠান এবং পাঞ্জাবী পরিবার পূর্ব পাকিস্তানে আছে তার একটা তালিকা পাঠাতে। আমরা পৃথক পৃথক ভাবে সামরিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে সে তালিকা পাঠিয়ে দেই। ২৬ শে মার্চ সকালে ক্যাপ্টেন সাদেকের স্ত্রী আমার আম্মার সাথে কান্নাকাটি করলেন। কিছুতেই যেতে চাচ্ছিলেন না। তিনি শেষবারের মত বললেন, ঢাকাতে যদি থাকি তো আবার দেখা হবে। ক্যাপ্টেন সাদেকের ফ্যামিলিকেই একেবারেই শেষে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠাবার ব্যবস্থা করা হয়।
আমি সকাল সাড়ে আটটায় অফিসে যাই এবং ইপিআর সুবেদার আমাকে বললো যে, পাঞ্জাবী মেজর এখানে সকল পাঞ্জাবী এবং পাঠানদের ডেকে পাঞ্জাবীতে কি বলে গেছে। আমার তাতে সন্দেহ আরও দৃঢ় হলো।
২৬ শে মার্চ সকালে আমাদের অফিসে অয়ারলেসের মাধ্যমে জানলাম ঢাকা পিলখানা এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইনকে পাক আর্মি ট্যাঙ্ক দিয়ে আক্রমণ করে ধ্বংস করতে চলেছে-খবর আসল ৮/৯ টার দিকে।
সকাল ৯টার দিকে হাবিলদার মুজিবর রহমান আমাকে এসে বলে যে, আমরা বিদ্রোহ করবো। আমি মুজিবরকে নিষেধ করি এবং বলি যে কোভের চাবি তুমি রেখে দাও, (কোতের চাবি আমি যখন সীমান্তে যাই তখন ওর কাছে দিয়ে গিয়েছিলাম) কোয়ার্টার গার্ডে যে পাঞ্জাবী আছে তাদের ছুটি দিয়ে দাও এবং সকল পাঠানদের উপর নজর রাখ। শহীদ মুজিবর আমাকে আরও খবর দেয় অবাঙালীদের কার কার কাছে গুলি এবং অস্ত্র আছে। আমি বললাম আমার ঊর্ধ্বতন অফিসার মেজর ওসমান যখন বাঙালী তখন তাঁর আসা পর্যন্দ আমাদের অপেক্ষা করা উচিত।
আমি ভারাক্রন্ত মন নিয়ে বাড়ি যাই। ১১/১২ টার দিকে মেজর ওসমান আসার সাথে সাথে আমরা স্বাধীন বাংলার পতাকা তুলি এবং রাজকীয় মর্জাদা দিই। অবাঙ্গালী যত ছিল তাদের অস্ত্রহীন করে এক ঘরে বন্দী করে রাখি।
২৬শে মার্চ বেলা ১১ টার দিকে যশোর হেডকোয়ার্টার থেকে লেঃ কঃ মোঃ আসলাম (অবাঙ্গালী) যাত্রা করে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশ্যে কিছু সৈন্য, দুটো গাড়ী এবং অয়ারলেসসহ। এই খবর আমরা যশোর ইপিআর ক্যাম্প থেকে পেলাম অয়ারলেসে। সঙ্গে সঙ্গে মেজর ওসমান আমাকে এক প্লাটুন সৈন্য নিয়ে পজিশন নিতে বলেন। যশোর হেডকোয়ার্টার হয়তো খবর পেয়েছে যে, আমরা বিদ্রোহ করেছি। লেঃ কঃ আসলাম বারবাজার পর্যন্ত এসে এই সংবাদ শুনে ফিরে যায়।
ইতিমধ্যে আমরা ভারতীয় সীমান্তের সঙ্গে টেলিফোন যোগাযোগ করি। ৭৬ বিএসএফ কমাণ্ডার লেঃ কঃ চক্রবর্তী এবং আইজি, ডিজি সবাই গেদেতে রয়েছেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। আমাকে মেজর ওসমান বেলা চারটার দিকে গেদেতে যাবার জন্য বলেন। আমি রওনা হয়ে গেলাম। আমরা ‘সাউফ-ওয়েষ্ট-কমাণ্ড' হিসেবে পরিচয় দিয়ে কাজ করতে থাকি। বেলা পাঁচটার দিকে গেদে পৌঁছালাম। ভারতীয় অফিসারদের সাথে সাক্ষাৎ করলাম। আমার পুরা ইউনিফরম ও আর্মসহ তিনজন গার্ড ছিল। আমাদের অভ্যর্থনা জানালো ভারতীয় বিএএফ ক্যাপ্টেন মহাপাত্র। ক্যামেরাম্যানরা আমার ছবি তুলবে বলে আমি গামছা দিয়ে মুখ ঢেকে বর্ডার পার হই। আমি মেজর ওসমানের পত্র দিই। সেখানে একটি আর্টিলারী ব্যাটারী, এক