৫নং খুলনা উইং-এ আমরা ২৭/২৮ তারিখেই খবর পাঠিয়েছিলাম বেনাপোলে জমায়েত হবার জন্য। নির্দেশ দিল, ইতিমধ্যে যদি কোন অবাঙ্গালী অফিসার তোমাদেরকে নিরস্ত্র করতে চায় তা হলে তাকে বন্দী অথবা হত্যা করবে।
ক্যাপ্টেন মোঃ সাদেক ২৭ শে মার্চ খুলনা বিওপিতে যায় নিরস্ত্র করবার জন্য। কিন্তু রক্ষী তাকে চ্যালেঞ্জ করলে ক্যাপ্টেন পিস্তল দিয়ে রক্ষীকে হত্যা করে। পরে বিওপির ভিতর থেকে গুলি করে পাঞ্জাবী ক্যাপ্টেনকে হত্যা করা হয়। ক্যাপ্টেনের সঙ্গীরাও প্রাণ হারায়। সমগ্র যশোর ক্যাণ্টনমেণ্ট এলাকা আমাকে দেখতে হতো, ফলে কোথাও ২/৪ ঘণ্টার বেশী অবস্থান করতে পারতাম না।
১০ই এপ্রিল ঝিকরগাছা যাই ৫নং উইং দেখবার জন্য। কিন্তু পাকবাহিনী তখন অগ্রসর হয়ে পথ বন্ধ করে ফেলে এবং সংঘর্ষ হয়। আমি ভারত সীমান্ত ঘুরে ১১ ই এপ্রিল বেনাপোল আসি।
১১ তারিখে ৭২ নং বিএসএফ -এর কর্নেল কে, বি, সিংহ বিএসএফ আইজি, ৫নং গার্ডস-এদের সাথে আলাপ-আলোচনা করি এবং গত কালের যুদ্ধের ঘটনা বলি। আমি দর্শনা হয়ে চুয়াডাঙ্গা আসি এবং মেজর ওসমানকে যুদ্ধের কথা বলি। ঝিকর গাছা থেকে ওই দিনই ঝিনাইগহে রাত ১০ টায় পৌঁছে যাই।
১২ই এপ্রিল বারবার থেকে ক্যাপ্টেন শফিউল্লাহর মেসেজ পেলাম যে ওখানে ভীষণ আর্টিলারী এবং ভারী অস্ত্রের আক্রমণ চালাচ্ছে পাক বাহিনী। সে আমার কাছে মতামত চাইল। আমি তাকে কালিগঞ্জ চলে আসতে বলি এবং আমাদের বাহিনীকে কালিগঞ্জ এবং বারবাজারের মধ্যখানে থাকতে বলি। ওখানেও আমাদের বাহিনী বেশ কিছু অস্ত্র এবং সেনা হারিয়ে ফিরে আসে।
১৩ই এপ্রিল পাক বাহিনী কালিগঞ্জ দখল করে নেয়। ১৪ই এপ্রিল আমি চুয়াডাঙ্গা আসি। ১৪ই এপ্রিল পাক বাহিনী ঝিনাইদহ চলে আসে। ১৫ ই এপ্রিল আমরা মেহেরপুরে ঘাঁটি সরিয়ে নেই।
১৬ ই এপ্রিল মেহেরপুর থাকলাম। ঐদিন রাতে ইছাখালী বিওপিতে থাকি। ১৭ই এপ্রিল খুব ভোরে মুজিবনগরে বৈদ্যনাথতলা যাই মন্ত্রিপরিষদের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেবার জন্য। ইপিআর-এর একটি কোম্পানি নিয়ে গিয়েছিলাম। বিচ্ছিন্ন ইপিআর বাহিনী সব বেতাইয়ে একত্র হয়। সমস্ত এপ্রিল মাসটা সৈন্য সংগ্রহ করা হয়। মে মাস থেকে কোম্পানী ভাগ করে দেওয়া হয়।
কুষ্টিয়া-যশোরের সস্ত্র প্রতিরোধ
সাক্ষাৎকারঃ মোহাম্মদ তৌফিক-ই-এলাহি চৌধুরী
১৪-১০-৭৩
২১/২২/২৩ শে মার্চ আমরা নিম্নলিখিত কয়েকজন অফিসার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য তদানীন্তন এসডিপিও জনাব মাহবুবউদ্দিন আহমেদের বাসায় (ঝিনাইদহে) একত্রিত হইঃ ১। তৌফিক এলাহি, এসডিও, মেহেরপুর, ২। কামালউদ্দিন সিদ্দীকী, এসডিও, নড়াইল,৩। ওয়ালিউল ইসলাম, এসডিও, মাগুরা, ৪। শাহ মোহাম্মদ ফরিদ, এসডিও, গোয়ালন্দ।
আলোচনায় আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে একটা সামরিক সংঘর্ষ অবধারিত। এই বৈঠকে নিজ নিজ এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আমি আমার এলাকায় সমস্ত থানার পুলিশদের প্রস্তুত রাখি।
২৫ শে মার্চ রাতে নূরুল হক এম-পি আমাকে টেলিফোনে জানালেন যে, ঢাকায় পাক সেনা বাহিনী শহরে বের হয়ে পড়েছে এবং জনগণের উপরআক্রমণ চালিয়েছে।