পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/২৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
২৫৪

এপ্রিল মাসের ১০ তারিখ থেকে আমরা অস্ত্রশস্ত্র বেতাই বিওপি (যা মেহেররুর মহকুমার সংলগ্ন ছিল) থেকে সংগ্রহ করতাম।

 ২৫ মে মার্চ রাতে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা এবং কুষ্ঠিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। কুষ্টিয়া এবং চুয়াডাংগার খবরাখবর আমরা নিতে থাকি। আমরা খবর পাই যে চুয়াডাঙ্গায় অবস্থিত ইপিআর বাহিনী বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে এবং মেজর ওসমান চুয়াডাঙ্গায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমি জানতে পেরেছিলাম যে, চুয়াডাঙ্গার সাধারণ ইপিআর এর জোয়ানরা সম্মিলিতভাবে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে এবং বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছে। চুয়াডাঙ্গার এই সিদ্ধান্তে ইপিআর-এর সাধারণ সৈনিকদের মধ্যে ভুমিকা এবং ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের এই সাহসিকতা এবং দেশপ্রেম বাংলাদেশের এই এলাকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখা উচিত। চুয়াডাঙ্গায় অবস্থিত ইপিআর এর ক্যাপ্টেন আজম চৌধুরীর ভূমিকা এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মেজর ওসমান কুষ্টিয়া থেকে ২৭/২৮ শে মার্চ চুয়াডাঙ্গায় আসেন এবং তিনিও এই সিদ্ধান্তের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানান। দুইজন সামরিক অফিসারের নেতৃত্বে থাকি পোশাক পরিহিত এবং সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই ইপিআর বাহিনী কুষ্টিয়া জেলা, পাবনা জেলার বহুলাংশ, যশোহরের কিয়দংশ এমনকি ফরিদপুরের গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত বাংলার সাধারণ জনগণের চোখে স্বাধীনতার সূর্যসৈনিক হিসেবে প্রতীয়মান ছিল। আজো শহীদ হাবিলদার মেজর মুজিবর রহমান, সুবেদার মুজাফফর, সুবেদার মুকিত এবং আরো অনেক চেনা মুখের কথা বার বার মনে পড়ছে। সেই দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে এরা আমার জন্যও আশার প্রতীক হিসেবে প্রোজ্জ্বল ছিলেন।

 দু'একদিনের মধ্যেই চুয়াডাঙ্গার সাথে মেহেরপুরের যোগাযোগ স্থাপিত হয় এবং আমি মেজর ওসমানের সাথে চুয়াডাঙ্গায় সাক্ষাৎ করি। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনার বিষয়বস্তু তাকে অবহিত করি। মেজর ওসমান আমাকে প্রয়োজনীয় সামরিক অস্ত্রসম্ভার সম্বন্ধে ধারণা দেন।

 এখানে উল্লেখযোগ্য যে, গোয়ালন্দের তৎকালীন এস, ডি, ও জনাব মোহাম্মদ ফরিদ সস্ত্রীক মেহেরপুরে বেড়াতে এসে আটকা পড়ে যান। তাকে মার্চে ২৭/২৮ তারিখে গোয়ালন্দে ফেরত যাবার বন্দোবস্ত করি। জনাব ফরিদ তার স্বীয় মহকুমায় এই স্বাধীনতা সংগ্রামকে জোরদার করার জন্য অত্যধিক উৎসাহ দেখান এবং এই দুর্যোগের সময় গোয়ালন্দে ফেরত যান। তিনি পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন এবং অমানুষিক ভাবে নির্যাতিত হন। তিনি ১৯৭১ এর ডিসেম্বর মাসে মুক্তি পান।

 চুয়াডাঙ্গাতে ইতিমধ্যে কিছু সিদ্ধান্ত এবং কর্মসূচী নেয়া হয়েছিলঃ ১। ইপিআর উইং হেডকোয়ার্টার চুয়াডাঙ্গা এবং তার অধীনস্ত সমস্ত বিওপিতে অবাঙালী ইপিআরকে নিরস্ত্র করা, ২। কুষ্টিয়া জেলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মোতায়েন সম্বন্ধে বিশদ খবরাখবর সংগ্রহ করা, ৩। কুষ্টিয়ার উপর একটা আক্রমন পরিকল্পনা প্রনয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করা। এই মিশনে এর জনশক্তি যোগাবে একদিকে ইপিআর, অন্যদিকে আনসার মুজাহিদ এবং সাধারণ ছাত্র জনতা। আক্রমণ এবং অবরোধ মোটামুটি ত্রিমূখী হবে। একদিকে জনাব মাহবুবউদ্দিন আহম্মদ ঝিনাইদহ কুষ্টিয়া রাস্তা অবরোধ করবেন এবং ইপিআর আনসার মুজাহিদদের একটি দল কুষ্টিয়া অভিমুখে অগ্রসর হবে। অন্য দিকে মেহেরপুর থেকে ইপিআর, মুজাহিদ, আনসারের একটি দল অভিমুখে যাবে। অপরদিকে প্রাগপুর-ভেরামারা-কুষ্টিয়া থেকে ইপিআর বাহিনী কুষ্টিয়া অভিমুখে অগ্রসর হবে। এই সম্মিলিত বাহিনীর নেতৃত্ব দেবেন ক্যাপ্টেন আজম চৌধুরী।

 প্রথমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল যে এই আক্রমণ ২৯ শে মার্চ ভোর পাঁচটার সময় শুরু করা হবে। পরে এই সিদ্ধান্ত ২৪ ঘণ্টা পিছিয়ে দেয়া হয়।

 পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২২ ফ্রণ্টিয়ার ফোর্সের অনধিক দুই কোম্পানী সৈন্য কুষ্টিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো পাহারা দিচ্ছিল। প্রসংগত উল্লেখযোগ্য যে ২২ ফ্রণ্টিয়ার ফোর্স রেকি এবং সাপোর্ট ব্যাটালিয়নের একটা অংশ ছিল। এদের ফায়ার, পাওয়ার, মোবিলিটি এবং কমিউনিকেশন পাকিস্তানের অন্যান্য সাধারণ পদাতিক