পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



২৮২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড

 ২৮শে মে দিনাজপুর-ফুলবাড়ী রোডে মোহনপুর ব্রীজ এক্সপ্লোসিভ দ্বারা উড়িয়ে দেওয়া হয় এবং সেখানেই এ্যাম্বুশ বসান হয়। ২৯শে মে ১০-১০ মিনিটে পাকবাহিনীর এক কোম্পানী ঐ পথে অগ্রসর হওয়ার সময় আমরা অতর্কিত আক্রমণ করি। সেখানে পাকবাহিনীর সহিত আমাদের চার ঘণ্টা গুলি বিনিময় হয়। এখানে পাকবাহিনীর ১১ জন নিহত হয় ও ২০ জন আহত হয়। আমাদের পক্ষে ২ জন শহীদ হয় ও একজন আহত হয়। তাছাড়া জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রামগতি, ফুলবাড়ী, চরখাই, রামনগর, জলপাইতলী, বাজাই, আমবাড়ী, গৌরীপুর, মন্মথপুর রেলওয়ে ষ্টেশনে রেইড, কমাণ্ডো ও এ্যাম্বুশ করে পাকবাহিনীর বহু ক্ষতি সাধন করি।

সশস্ত্র প্রতিরোধে রংপুর
সাক্ষাৎকার ; লেঃ মোঃ আবদুস সালাম
৭-৬-১৯৭৩

 ২৬শে মার্চ সকাল বেলা রেডিওতে ইয়াহিয়া খানের মার্শাল ল’ জারী করার কথা শুনতে পাই। এই সময় হাজার হাজার ক্রদ্ধ জনতা শ্লোগান দিতে দিতে টোগরাই হাট রেল ষ্টেশনে আসে এবং ৩ মাইল পর্যন্ত রেল লাইন তুলে ফেলে এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।

 ২৭শে মার্চ রংপুর থেকে একজন আর্মি ক্যাপ্টেন (নওয়াজেশ) আমাদের এখানে পালিয়ে এসে মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোক্তার আহম্মদ হোসেন সরকার সাহেবের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ক্যাপ্টেনের কাছে জানতে পারি যে, ঢাকা থেকে একটা টেলিফোন আসে, তাতে ক্যাপ্টেন নওয়াজেশকে মেরে ফেলতে বলা হয়। ঘটনা চক্রে সেই সময় টেলিফোনের সামনে ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ নিজেই উপস্থিত ছিলেন। তিনি টেলিফোনে উত্তরে বলেন যে, এখনই ক্যাপ্টেন নওয়াজেশকে হত্যা করছি।

 ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ বিভিন্ন জায়গা থেকে পলায়নরত বাঙ্গালী পুলিশ, ইপি-আর ও বেঙ্গল রেজিমেণ্টসহ ছাত্র-জনতাকে নিয়ে একটা বাহিনী গঠন করেন এবং ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করেন। ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ সাহেবের সঙ্গে আমি থানাতে গিয়ে ও, সি, কে কিছু রাইফেল দেবার জন্য বলি। কিন্তু ও,সি, রাইফেল দিতে অসম্মত হলে পরে তাকে রাইফেল দিতে বাধ্য করা হয়। থানা থেকে আমরা ২৫০টি রাইফেল যোগাড় করি।

 ক্যাপ্টেন নওয়াজেশের নেতৃত্বে আমরা তিস্তা নদীর পারে ডিফেন্স নিই। নদীর অপর পারে অবস্থানরত খান সেনারা রাত্রিতে আমাদের উপর শেলিং আরম্ভ করে। বলা প্রয়োজন যে, ঐ দিন সকাল ১০ টার দিকে যখন আমরা চুপচাপ ডিফেন্স নিয়েছিলাম তখন খান সেনারা আমাদের অবস্থান জানতে না পেরে তিস্তা রেল ব্রিজের উপর দিয়ে কিছু খান সেনা এপার আসে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাদের উপর আক্রমণ চালাই। ঘটনাস্থলেই একজন মেজরসহ ৮ জনকে হত্যা করতে সক্ষম হই। এই মেজরটির নাম ছিল মেজর এজাজ। পরবর্তীকালে তিস্তা ব্রিজের নাম পালটিয়ে খান সেনারা মেজর এজাজের নাম অনুসারে “এজাজ ব্রিজ” রাখে।

 এখানে পাক বাহিনীর শেলিং-এর মুখে টিকতে না পেরে আমরা সেখান থেকে পিছু হটে কুড়িগ্রামে ডিফেন্স নিই। ৮ই এপ্রিল খান সেনারা কুড়িগ্রাম আক্রমণ করে। কুড়িগ্রামে ডিফেন্স নিই। ৮ই এপ্রিল খান সেনারা কুড়িগ্রাম আক্রমণ করে। কুড়িগ্রামের ৩ মাইল বাইরে আমরা টিকতে না পেরে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ি। ৮ তারিখে খান সেনারা কুড়িগ্রাম দখল করে এবং ব্যাপক গণহত্যা করে এবং বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জুলিয়ে দেয়। তারা পরে সোনালী ব্যাঙ্কও লুট করে। ৯ তারিখে ছাত্র এবং গ্রামবাসী মিলে টোগরাইহাট থেকে তিস্তার প্রায় দশ মাইল রেল লাইন তুলে দিই যাতে করে খান সেনারা আমাদের এলাকায় তাড়াতাড়ি প্রবেশ করতে না পারে।

 টোগরাইহাটের যুদ্ধঃ আমরা পুনরায় প্রায় ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা একত্রিত হই এবং ১৫ তারিখে আমরা টোগরইহাটে ডিফেন্স নিই। খান সেনারা কুড়িগ্রাম থেকে একটা ট্রেন নিয়ে লাইন সারতে সারতে তিস্তার দিকে