পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



২৮৭

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড

 তারপর আমরা ফুলবাড়িতে এসে ক্যাম্প করলাম। কিন্তু মুসলিম লীগাররা আমাদের অবস্থান পাক বাহিনীর গোচরীভূত করে। সেখানেও তারা ট্যাংক নিয়ে আমাদের উপর আক্রমণ চালায়। তারপর আমরা চরকাই (হিলির সীমান্তের কাছাকাছি) তে স্থানান্তরিত করি এবং আমাদের কণ্ট্রোল রুমসহ হেডকোয়ার্টার তৎকালীন পাকিস্তানের হিলিতে স্থাপন করি।


 ২২শে এপ্রিল ১৯৭১ পাক বাহিনী আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বর্ডার বেল্টের ভেতরে আমাদের উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকি।


 ২৪ এপ্রিল ১৯৭১ তারা ভারতের হিলির উপরও আক্রমণ করতে দ্বিধাবোধ করে নাই। ঐ দিন অত্যন্ত ঝড় বৃষ্টি ছিল এবং আমাদের সৈন্যরা তাদের সঙ্গে টিকতে না পেরে এদিক সেদিক ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।


 ২৫শে এপ্রিল ৩য় বেঙ্গলের শার্দুলগণ পশ্চিম-দিনাজপুরের কামাপাড়া স্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করেন। এরা ৪র্থ এবং ৫ম সেক্টর স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে।


সশস্ত্র প্রতিরোধে রংপুর
সাক্ষাৎকারঃ হাবিলদার জয়নাল আবেদীন
৫-১১-১৯৭৪

 ২৫শে মার্চ আমি ১০ নং শাখার রংপুর ডবল সুতি বিত্তপিতে হাবিলদার পদে বহাল ছিলাম। ৭ই মার্চের পর পাঞ্জাবী অফিসাররা কদিন পরপর গোপনে মিটিং করত, সেখানে বাঙ্গালীদের ডাকতো না। এইসব দেখে আমাদের ধারণা হয়েছিল একটা কিছু হতে পারে।


 ১০ নং শাখার কমাণ্ডার ছিল একজন ইউপি সহকারী ক্যাপ্টেন ২জন ছিল। (১) ক্যাপ্টেন ভুট্টো খান ছিল (পাঞ্জাবী) এবং অপরজন বাঙ্গালী নওয়াজেশউদিনের ৫টি কোম্পানী ছিল এই শাখাতে। একটি সাপোর্ট প্লাটুনও ছিল। কোম্পানগুলো ছিলঃ চিলমারী, কমাণ্ডার ছিল সুবেদার আবদুল মান্নান, অপরটি বাগভাণ্ডারে যার কমাণ্ডার ছিল বিহারী। মোগলহাটে অপর আরেকেটি কোম্পানী ছিল যার কমাণ্ডার ছিল সুবেদার আরব আলী। পাটগ্রামে একটি কোম্পানী ছিল, কমাণ্ডার ছিল সুবেদার বোরহান উদ্দিন। উইং হেডকোয়ার্টারে কোম্পানী কমাণ্ডার ছিল এতয়ার খান। সাপোর্ট প্লাটুন কমাণ্ডার ছিল নায়েক সুবেদার নূর মোহাম্মদ।


 ২৬শে মার্চ বিকালে ঢাকার পিলখানার হত্যাযজ্ঞের খবর পেলাম। ঠাকুরগাঁওয়ে ৯নং শাখা ছিল। তারা ২৬ শে মার্চ বিদ্রোহ করে। এ খবর আমরা পেলাম।


 ২৭শে মার্চ সেক্টর কমাণ্ডার তারিখ রসুল ১০নং শাখাতে টেলিফোন করেন। সেই টেলিফোন ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ ধরেন। সেক্টর কমাণ্ডার জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কে? নওয়াজেশ বল্লেন ‘আমি ভুট্টো’-এখনই ক্যাপ্টেন নওয়াজেশকে হত্যা কর’।


 ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ পাকিস্তানীদের মতলব বুঝে জীপ নিয়ে সীমান্তের দিকে চলে যান। নায়েক সুবেদার নূর মোহম্মদও (সাপোর্ট প্লাটুন কমাণ্ডার) গাড়ী নিয়ে সীমান্তে যায়। গাড়ীতে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে সকল কোম্পানীকে তিস্তা ব্রিজে ক্লোজ হতে বলেন।


 মোগলহাট কোম্পানী লালমনিরহাট আসলো। পাটগ্রাম কোম্পানী তিস্তা চলে আসে। চিলমারী কোম্পানীর কিছু তিস্তার পারে চলে আসে। আমরা তিস্তার পারে ৪০০/৫০০ জনের মত ইপিআর ডিফেন্স নিই ব্রিজ পর্যন্ত নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ। ৩০শে মার্চ থেকে ৪ঠা এপ্রিল পর্যন্ত এখানেই পাকবাহিনীর সাথে প্রায় রোজ যুদ্ধ হয়েছে। পাকবাহিনী ব্রিজ অতিক্রম করে এপারে আসতে পারেনি। ৫ই এপ্রিল পাকবাহিনীর ব্যাপক