পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



২৮৮

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড

 আক্রমণে আমরা পিছু হটি। আমরা ফুলবাড়ী থানাতে ডিফেন্স নিই ছোট্ট একটি নদীর পারে। তিস্তা থেকে কুড়িগ্রাম রোড আমরা অবরোধ করে থাকি। ১৩/১৪ এপ্রিল আমরা ৩টি কোম্পানী নিয়ে লালমনিরহাটে আসি পাক ঘাঁটি আক্রমণের জন্য। আমরা ঐ যুদ্ধে টিকতে ব্যর্থ হই। আমাদের ৬/৭ জন শহীদ হন। আমরা আবার ফুলবাড়ী চলে আসি।


 এপ্রিলের ২৫ তারিখে ১০নং শাখার সকল ফোর্স পাটেশ্বরীতে নিয়ে আসেন ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ। নাগেশ্বরী থানাতে হেডকোয়ার্টার করা হয়। এখানে আমরা পাক্কা ডিফেন্স করি। আনসার-মুজাহিদসহ ১২০০ জনের মত ফোস ছিল। ২৫ এপ্রিল থেকে ২৬শে জুন পর্যন্ত বিভিন্ন সময় পাকবাহিনী সাথে খণ্ড যুদ্ধ হয়।


 ২৪শে জুন থেকে পাকবাহিনীর ব্যাপকবাবে চারিদিক থেকে শেলিং ও বিমান হামলা করে। ২৬শে জুন আমাদের সকল ডিফেন্স থেকে মুক্তি বাহিনী পিছু হটতে থাকে এবং পাকবাহিনীর ব্যাপক আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে। এখানে কিছু শহীদ হন। এখান থেকে সুবেদার বোরহান উদিনের সাথে আমাদের কোম্পানী সোনারহাট সেক্টরে চলে যায়। সুবেদার আরব আলী এবং অন্যান্যরা ভারতের শ্যামগঞ্জ পৌছায়। আমরা সোনারহাটে নদীর পারে ডিফেন্স নিই ৩০শে জুন। আগষ্টের ২২ তারিখ পর্যন্ত এখানে আমরা ডিফেন্স করে থাকি। এই সময়ের মধ্যে সোনারহাট ব্রিজে কয়েকদিন পর পর পাকবাহিনীর সাথে সংঘর্ষ বাধতো।


সশস্ত্র প্রতিরোধে রংপুর
সাক্ষাৎকারঃ মোঃ নুরুজ্জামান
১৫-৭-১৯৭৮

 ২৭শে মার্চ রাত ৮ ঘটিকার দিকে আমরা প্রায় ২০/২৫ জন বাঙ্গালী ইপিআর সমবেত হয়ে পরামর্শ সভা করি। নায়েক সুবেদার নূর মোহম্মদ এই পরামর্শ সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি সবাইকে সাহস দিয়ে বলেন যে, যেহেতু তিনি সবারই সিনিয়র, যেহেতু কোন ক্ষতি হলে আগে তারই হবে। কিন্তু আমি ভিন্নমত পোষণ করি ও জানাই যে, অস্বস্তিকর অবস্থায় আর বসে থাকা সম্ভব নয়। এখন আমরা নিরস্ত্র। যে কোন সময় আমাদের বিপদ হতে পারে। কাজেই হয় ব্যারাক থেকে আমাদের বেরিয়ে গিয়ে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করতে হবে, নতুবা এখানকার অস্ত্রাগার ভেঙ্গে অস্ত্রসজ্জিত হয়ে আমাদের পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই পরামর্শ সভায় আমরা সবাই বিপদ বুঝতে পারি, কিন্তু তৎক্ষণাৎ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি নাই।


 আমরা জানতে পেলাম যে, সাবেক বাঙ্গালী ইপিআর ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ সাহেব নিখোঁজ হয়েছেন। এই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের পূনরায় পরামর্শ সভা হয়। অস্ত্রসজ্জিত হয়ে পাঞ্জাবী সৈন্যদেরকে আঘাত হানার স্বপক্ষে আমি উক্ত সভায় সোচ্চার হই। আমাদের পরামর্শ সভা যখন চলছিল তখন শহরের সেনাবাহিনীর গ্যারিসনের সৈন্যরা উত্তর দিকের একটি পুলের নিকটবর্তী গৃহস্থ বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করছিল। আমরা আগুন দেখার সাথে সাথে সৈন্যদের মেশিনগানের গুলির শব্দও শুনতে পাই। হঠাৎ দেখতে পাই পাঞ্জাবী সৈন্যদের জীপগুলো আমাদের ব্যারাকের দিকে এগিয়ে আসছে। সবাইকে গ্রামের দিকে ঢুকে পড়তে বলা হয়। আমি নিজেও নুরুল হক নামে একজন অসুস্থ বাঙ্গালী ইপিআরকে নিয়ে নিকটবর্তী গ্রামে ঢুকে পড়ি। ব্যারাক থেকে উত্তরে প্রায় ৫ মাইল দূরে জনৈক হিন্দু গৃহস্থ বাড়ীতে প্রথমে আশ্রয় নিই।

 ২৮শে মার্চ ভোর বেলা কালীগঞ্জ থানার এম-সি-এ করিম উদ্দিন সাহেবের নিকট উপস্থিত হই। তাঁর সাথে পরামর্শ করে প্রায় ৩০ জন ছাত্রকে জোগাড় করা হয়। সীমান্তবর্তী ভারতীয় ফাঁড়ি থেকে কিংবা ভারতের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে মাইন ও এক্সপ্লোসিভ আনার জন্য ছাত্রদেরকে পাঠানো হয়। এরপর তাড়াহুড়ো করে স্থানীয় আসসার-মুজাহিদ ও ছাত্রদের সমন্বয়ে প্রায় ৩০০ জন মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রহ করে আমরা তাদেরকে


  • স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্প কর্তৃক সংগৃহীত।