পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩০৩

শহর পতনের পর আমরা নদীর অপর পাড়ে আশ্রয় নিই। আমরা বিরল সীমান্তের দিকে অগ্রসর হই। বিরলে (ভারতীয় সীমান্ত থেকে ৬ মাইল ভিতরে) ডিফেন্স নিই। বিরলে ২০০ মত ইপিআর আসে।

 ১৭/১৮ই এপ্রিল পাকবাহিনী আমাদের বিরল ডিফেন্সের উপর আক্রমণ চালায়। মুসলিম লীগ ও জামাতে ইসলামীর লোকেরা আমাদের অবস্থানগুলো পাকবাহিনীর কাছে প্রকাশ করে দেয়। এই যুদ্ধে বিরলের পতন ঘটে। এখান থেকে কিশোরীগঞ্জ এলাকাতে ডিফেন্স নিই।

 ২০/২১শে এপ্রিল পাকসেনা আমাদের কিশোরীগঞ্জ ডিফেন্স আক্রমণ করে। কিশোরীগঞ্জের পতন ঘটলো পাকবাহিনীর হাতে। আমরা আরও পিছু হটলাম। একদম সীমান্ত বরাবর আমরা ডিফেন্স লাগালাম। পাকসেনারা কিশোরীগঞ্জ থেকে মাইকযোগে আমাদের গালাগালি করতে থাকে। ৮নং শাখার সহকারী উইং কমাণ্ডার ক্যাপ্টেন চিমা, নায়েক সুবেদার নিয়ামতউল্লা আমাদের গালাগালি করতে থাকে। পাকসেনারা প্রতিটি জায়গা দখলের পর আগুন লাগিয়ে সমগ্র এলাকা ধ্বংস করে হত্যাযজ্ঞ চালায়, তারা হাজার হাজার মণ চাউল পুড়িয়ে দেয়।

 অনুমান ২৪শে এপ্রিল ফ্লাগ মিটিং হয়। সেখানে পাকসেনারা ইপিআরদের হ্যা ওভার করার জন্য জানায়। ২৫/২৬শে এপ্রিল রাধিকাপুরে এবং আমাদের অবস্থানের উপর বিমান হামলা চালায়। বিএসএফ অবস্থানের উপরও বোমা ফেলে। আমরা ভারতে আশ্রয় নিলাম এক আমবাগানে। আমাদের সাথে প্রচুর গোলাবারুদ ছিল। ডামিলগাঁও যাই, সেখানে সকল অস্ত্র জমা দিই। ট্রেনিং ক্যাম্প খুলে দেওয়া শুরু হয়। দেশ মুক্ত হওয়া পর্যন্ত মেজর জিয়াউর রহমানের সাথে থাকি।

সশস্ত্র প্রতিরোধে দিনাজপুর

সাক্ষাৎকারঃ সুবেদার আহম্মদ হোসেন

১৮-১১-১৯৭৪

 আমি একাত্তরের মার্চে ৯নং উইং হেডকোয়ার্টার ঠাকুরগাঁতে ছিলাম। উইং- এর অধীনে ৫টি কোম্পানী ও একটি সাপোর্ট ছিল। হেডকোয়ার্টারে ছিল 'ডি' কোম্পানী, কমাণ্ডার ছিল সুবেদার এম এ হাফিজ। রুহিয়াতে ছিল ‘এ’ কোম্পানী, কমাণ্ডার ছিল সুবেদার কালা খান (পাঞ্জাবী)। 'বি' কোম্পানী ছিল চিলাহাটিতে, কমাণ্ডার ছিল একজন বিহারী। 'সি' কোম্পানী ছিল তেতুঁলিয়ায়, কমাণ্ডার ছিল (ভারপ্রাপ্ত) পাঞ্জাবী নায়েক সুবেদার মীর্জা খান। 'ই' কোম্পানী ছিল পঞ্চগড়ে, কমাণ্ডার ছিল নায়েক সুবেদর আবদুল খালেক। উইং কমাণ্ডার ছিল মেজর মোহাম্মদ হোসেন। সেকেণ্ড ইন কমাণ্ড ছিল ক্যাপ্টেন নাবিদ আলম। নির্বাচনের পর থেকেই আমরা ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে আলাপ- আলোচনা করতাম।

 ২৫শে মার্চের রাতে ‘ডি’ কোম্পানী উইং হেডকোয়ার্টারে ছিল। আমাদের উইং হেডকোয়ার্টারে ম্যাগাজিনের সঙ্গে মুজাহিদের জন্য একটি ম্যাগাজিন ছিল। ৫ জন পাকসেনারা দায়িত্বে থাকতো। পাক বিমান বাহিনীর চারজন লোকও থাকতো। যারা সকল বিমানের গতিবিধি লক্ষ্য করতো এবং ঢাকা সেনানিবাসে রিপোর্ট করতো।

 ২৬শে মার্চ আমরা ঢাকায় পার্ক আক্রমণের খবর পেলাম।

 ৭ই মার্চের পর থেকে আমাদের আই- এস- ডিউটি বেড়ে যায়। তখন থেকেই অস্ত্র আমাদের সঙ্গে থাকতো। ২৩শে মার্চ থেকেই কয়েকবার আমাদের কাছ থেকে অস্ত্র জমা নিয়ে নেবার চেষ্টা হয়। কিন্তু আমরা অস্ত্র কোতে জমা দিইনি।

 আগে থেকেই জেনেছিলাম ২৮শে মার্চ রাতে পাক বাহিনী আমাদের উপর আক্রমণ করতে পারে। তাই আমরা সুবেদার হাফিজের নেতৃত্বে ২৮শে মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় উইং হেডকোয়ার্টারে অবস্থানরত সকল