পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩০৪

অবাঙ্গালী ইপিআর বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ি। আই- এস ডিউটির জন্য আগে থেকেই উইং- এর চারপাশে বাঙ্কার তৈরী ছিল।

 সুবেদার হাফিজ প্রথম উইং কমাণ্ডার ও সহকারী উইং কমাণ্ডারের গার্ডের উপর গুলি ছোড়েন। ২৫শে মার্চ ১০টার কিছু আগে আমরা ক'জন যেমন- আমি, নায়েক সুবেদার মতিউর রহমান, বজল আহম্মদ চৌধুরী, সুবেদার এম এ হাফিজ এবং আতাউল হক মিলে সুবেদার মেজর কাজিমুদ্দিন সাহেবের বাসাতে গিয়েছিলাম আলাপ- আলোচনার জন্য। তখনই হাবিলদার আবু তালেব আমাদের কাছে এসে খবর দেয়, সুবেদার মেজর কাজিমুদ্দিনকে বন্দী করতে আসছে পাকসেনারা ৪ জন। আমরা তখনই বেরিয়ে আসি এবং যার যার অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। সুবেদার হাফিজ তখনই চাইনিজ মেশিনগান নিয়ে মেজর সাহেবের বাংলোতে যান এবং গুলি ছোড়েন। তারপর সারারাত ধরে উভয় পক্ষে গোলাগুলি চলতে থাকে। কোতের দায়িত্বে ছিল সব অবাঙ্গালী। ২৯শে মার্চ সুবেদার আতাউল হক ভুল বুঝাবুঝির জন্য বাঙ্গালীদের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন। ঘটনাটি ছিল নিম্নরূপঃ

 ২৯শে মার্চ ভোরবেলা সুবেদার আতাউল হক ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন কি অবস্থা, এমন সময় সিদ্দিক নামে এক সিপাই বাঙ্কার থেকে উঠে এসে সুবেদার আতাউল হক সাহেবের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সিপাই সিদ্দিক ভেবেছিল সুবেদার হয়তো কিছু বলবেন না। সুবেদার আতাউল হক সম্পূর্ণ নতুন, সবাইকে চিনতেন না ফলে সিদ্দিককে বিহারী মনে করেন এবং উর্দুতে 'তুমি এখনও বেঁচে আছ' বলেই স্টেন তোলে। সিদ্দিকও সাথে সাথে রাইফেল তুলে গুলি চালায়। সুবেদার আতাউল হক ওই গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন।

 অবাঙ্গালী ইপিআর থাকতো প্রধানতঃ তিনতলার উপর এবং কোয়ার্টার গার্ডে। এর ফলে তাদেরকে আয়ত্তে আনা কঠিন ছিল। ১লা এপ্রিল বেলা ৪টার মধ্যে আমরা উইং সম্পূর্ণ দখল করতে সক্ষম হই। অবাঙ্গালী ক্যাপ্টেন নাবিদ আলম এবং ক্যাপ্টেন নজির আহমদ পালাতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়েন এবং সবাই মৃত্যুবরণ করেন।

 ২রা এপ্রিলের মধ্যে সীমান্তের সমস্ত ইপিআর উইং হেডকোয়ার্টারে চলে আসে সুবেদার মেজর কাজিমুদ্দিন সাহেবের নির্দেশক্রমে। আমাদের আনসার- মুজাহিদও এসে জমায়েত হয়।

 সুবেদার হাফিজের নেতৃত্বে আমরা একটি কোম্পানী সৈয়দপুরের দিকে অগ্রসর হই ৩রা এপ্রিল। ৪ঠা এপ্রিল ভূষিরবন্দরে পুলের পাশে প্রতিরক্ষা ব্যূহ রচনা করি।

 ২৯শে মার্চ আমরা খবর পেলাম ৮/১০ টি ট্রাক করে পাকসেনা ঠাকুরগাঁ- এর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আমরা তখনই যার যার মত পজিশন নিয়ে তৈরী থাকলাম। দেখলাম সত্যই তারা আসছে। কিছুক্ষণ পর সকাল ৯টার দিকে জানলাম তারা বেঙ্গল রেজিমেণ্টের লোক। ক্যাপ্টেন আশরাফ সুবেদার মেজর খবর দেন আমরা শিবগঞ্জে বিমানবন্দরে আইএস ডিউটি করতে যাচ্ছি। কাজিমুদ্দিনের সন্দেহ হয়, তাই পুনরায় একটি সিপাইকে মোটর সাইকেল যোগে বেঙ্গল রেজিমেণ্ট সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বলেন। ক্যাপ্টেন আশরাফ নিজের সকল জোয়নকে দেখিয়ে বলেন আমরা সবাই বেঙ্গল রেজিমেণ্টের লোক। সিপাই ফিরে এসে সুবেদার মেজরকে রিপোর্ট করলে ক্যাপ্টেন আশরাফ তার কোম্পানী নিয়ে শিবগঞ্জে চলে যান। সুবেদার মেজর কাজিমুদ্দিন অনেক অনুরোধ করেন তাদের সাথে কাজে যোগ দেবার জন্য। কিন্তু ক্যাপ্টেন আশরাফ বিশ্বাস করতে পারেননি সব ঘটনা। ক্যাপ্টেন আশরাফ তার কোম্পানী নিয়ে শিবগঞ্জে পৌঁছালে তাঁর বেঙ্গল- এর ৩/৪ জন জোয়ানের দেখা পান। তারা উপরে পাকবাহিনীর আক্রমণের ঘটনার কথা জানায়। এই ৪ জন বলে, আমরা ২০/২৫ জন ছিলাম। কিন্তু দশমাইল নামক স্থানে পাঞ্জাবীরা আমাদের ঘেরাও করে। আমরা ক'জন পালাতে পেরেছি; অবশিষ্টদের খবর জানি না।' ক্যাপ্টেন আশরাফ তখন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বীরগঞ্জে থেকে