পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩০৭

 ২৯শে মার্চ ঠাকুরগাঁর অধীনে সমস্ত বিওপির (৩৪টা) সমস্ত পশ্চিম পাকিস্তানী ইপিআরকে হত্যা করা হয়। কিছুসংখ্যক বাঙ্গালী ইপিআর বিওপিতে থেকে বাকি সবাই ঠাকুরগাঁও এসে একত্রিত হয়।

 ৩০শে মার্চ সমস্ত বাঙ্গালী ইপিআর সুবেদার মেজর কাজিমউদ্দিনের নেতৃত্বে ভাতগাঁও পুলে প্রতিরক্ষা ব্যূহ তৈরি করে। ঐদিনই দিনাজপুরের কুঠিবাড়ী থেকে ৮নং উইং- এর ক্যাপ্টেন নজরুল ইসলাম, সুবেদার মেজর এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর এম টি হোসেন, ক্যাপ্টেন আরশাদ (৩য় বেঙ্গল রেজিমেণ্ট) ভাতগাঁও পুলের কাছে আসেন। এখানে সবাই কনফারেন্স করেন।

 ৩০শে মার্চ বিকেলে সবাই সৈয়দপুরের দিকে অগ্রসর হয়। ভূষিরবন্দর ব্রীজে আমরা ডিফেন্স তৈরী করি। ৩১শে মার্চ সৈয়দপুর থেকে বেলুচ এবং পাঞ্জাব রেজিমেণ্টের কিছু সৈন্য আমাদের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ভূষিরবন্দরে প্রায় দুই ঘণ্টা ওদের সাথে আমাদের গুলি বিনিময় হয়। তারা আবার সৈয়দপুর চলে যায়। আমরা ভূষিরবন্দর থেকে একটু এগিয়ে চম্পাতলীতে ডিফেন্স তৈরী করি।

 ১লা এপ্রিল সকালবেলায় চম্পাতলীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে আমাদের তুমুল যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানীরা মিডিয়াম গান ব্যবহার করে। ১২টা পর্যন্ত আমাদেরকে ওখান থেকে হটাতে না পেরে বেলা দুইটার সময় তারা ট্যাংক নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে। বিকেল ৬টা পর্যন্ত তাদের সাথে আমাদের যুদ্ধ চলে। কিছুসংখ্যক বাঙ্গালী ইপিআর সেখানে শাহাদাৎ বরণ করেন। পাকিস্তানীদের দুটো ট্যাংক আমরা ৬-পাউণ্ডার গোলার সাহায্যে ধ্বংস করতে সমর্থ হই। আমরা পিছিয়ে এসে ভূষিবন্দরে ডিফেন্স তৈরী করি।

 ২রা এপ্রিল আমাদের কিছু বাঙ্গালী ইপিআর নীলফামারী হয়ে সৈয়দপুরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সৈয়দপুর থেকে দুই মাইল আগে তাদের সাথে সারাদিন তুমুল যুদ্ধ চলে। রাত্রিবেলা বাঙ্গালী ইপিআরা সেখান থেকে ঠাকুরগাঁ এসে একত্রিত হয়! ৩রা এপ্রিল ভূষিরবন্দরে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের সাথে আবার যুদ্ধ শুরু হয়। সারাদিন যুদ্ধ চলে। রাতে আমরা দশমাইলে গিয়ে ডিফেন্স তৈরী করি।

 ৫ই এপ্রিল পাকিস্তানীদের সাঁজোয়া এবং গোলন্দাজ বাহিনী দশমাইলে আমাদের উপর অতর্কিতে হামলা চালায়। দশ মাইলে অনেক বাঙ্গালী ইপিআর শাহাদাৎ বরণ করেন। অনেকেই আহত হন। কুঠিবাড়ীর বাঙ্গালী ইপিআররা আবার দিনাজপুরের দিকে চলে যায়। ঠাকুরগাঁর বাঙ্গালী ইপিআররা আবার ব্রীজে অবস্থান নেয়।

 ৭ই এপ্রিল পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য ভাতগাঁর উপর হামলা চালায়। এখানেও বাঙ্গালী ইপিআর হতাহত হয়। পেছন থেকে কোন সাহায্য না পাওয়াতে আমরা সেখান থেকে পিছু হটতে বাধ্য হই। পঁচাগড়ে গিয়ে আমরা একত্রিত হই এবং সেখানে ডিফেন্স তৈরী করি। ১৪ই এপ্রিল পঁচাগড়েও পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা আমাদের উপর আক্রমণ করে এবং আগুনে বোমার সাহায্যে পঁচাগড় শহরকে সম্পূর্ণরূপে জ্বালিয়ে দেয়। পঁচাগড় থেকে বাঙ্গালী ইপিআররা অমরখানাতে গিয়ে শেষ ডিফেন্স তৈরী করে। সুবেদার মেজর কাজিমউদ্দিনের নেতৃত্বে প্রতিজ্ঞা নেয়া হয় যে একটা লোক জীবিত থাকা পর্যন্ত এখান থেকে কেউ পিছু হটবে না। আল্লাহর রহমতে দেশ স্বাধীন হবার পূর্ব মুহূর্তে পর্যন্ত অমরখানা আমাদের দখলে থাকে।

সশস্ত্র প্রতিরোধে দিনাজপুর

সাক্ষাৎকারঃ খন্দকার আবদুস সামাদ

২২-৭-১৯৭৪

২৫শে মার্চ ১৯৭১ সালে আমি দিনাজপুর জেলার পঁচাগড় থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার ছিলাম। ২৫শে মার্চের পরপরই যখন ঢাকায় সৈন্যদের অতর্কিত আক্রমণের খবর পাই তখনই থানার ৫ জন অবাঙ্গালী সিপাইকে