পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩২১

সশস্ত্র প্রতিরোধঃ রাজশাহী

শিরোনাম সূত্র তারিখ
১১। রাজশাহী জেলায় সংঘটিত সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ বাংলা একাডেমির দলিলপত্র ১৯৭১

নওগাঁ রাজশাহীর সশস্ত্র প্রতিরোধ

সাক্ষাৎকারঃ ব্রিগ্রেডিয়ার গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী[১]

 মার্চ মাসে (১৯৭১) আমি রাজশাহীর নওগাঁওয়ের বিডিয়ার (তৎকালীন ইপিআর)- এর ৭নং উইংয়ের সহকারী উইং কমাণ্ডারের দায়িত্ব পালন করছিলাম। ১৮ই মার্চ মেজর নাজমুল হক (বাঙ্গালী) সাহেব উইং কমাণ্ডার হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। ঐ পদে এর আগে একজন পাঞ্জাবী অফিসার বহাল ছিলেন। নাজমুল হক সাহেব সরাসরি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে নওগাঁওতে আসেন এবং দায়িত্ব বুঝে নেবার চেষ্টা করেন। কিন্তু পাঞ্জাবী অফিসারটি দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে কিছুটাটালবাহানা শুরু করেন। কিন্তু সেই সময় সেই এলাকায় গোলযোগপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আমার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের দরুন পাঞ্জাবী মেজর আকরাম দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে বাধ্য হন।

 মেজর আকরাম ২৩শে মার্চ ঢাকার পথে ক্যাপ্টেন নবীদ নামে সেই উইংয়ের আর একজন পাঞ্জাবী অফিসারসহ রওনা হন কিন্তু পথিমধ্যে ফেরীর লোকজন নগরবাড়ী ঘাটে তাদেরকে পার করতে অসম্মতি প্রকাশ করায় তারা ফিরে আসতে বাধ্য হন। ফেরত আসার পর আমি তাদের কে নিরাপত্তার অজুহাতে আমার বাসার উপরের তলায় প্রকৃতপক্ষে নজরবন্দী করে রাখি। এবং একই অজুহাতে নিচে সশস্ত্র প্রহরী মোতায়েন করি।

 ২৩শে মার্চ এবং ২৫শে মার্চের মধ্যে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আমি আমার উইং-এর কমপক্ষে ১০০ জন পশ্চিম পাকিস্তানী ইপিআর; জেসিও এবং অফিসারদেরকে আয়ত্তে ফাঁদ রচনা করি। কেননা; আমি বুঝতে পারি যে তারা সবাই উইং হেডকোয়ার্টারে টালবাহানা করে একত্রিত হবার চেষ্টা করছে এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রক্ষিতে কিছু একটা করার চেষ্টা করছে। ২৪শে মার্চ আমি উইং-এর উপপ্রধান হিসাবে অধিকাংশ অস্ত্রগারের পাঞ্জাবী প্রহরী অধিনায়কদের সরিয়ে ফেলি এবং বেশীর ভাগ বাঙ্গালীকে নিয়োগ করি।

 ২৫শে মার্চ পর্যন্ত আমরা বাইরের কোন খবর পাইনি। ২৬শে মার্চ ভোর ছয়টায় সুবেদার মেজর চুপি চুপি আমার বাসার এসে বলে যে আমাকে কে যেন ঢাকা ইপিআর অয়ারলেস স্টেশন থেকে ডাকছে, এবং তার মনে হচ্ছে ঢাকায় কিছু একটা ঘটেছে।

 অয়ারলেসে কথা বলার সময় একজন বাঙ্গালী ইপিআর সিগন্যালার আমাকে বলল যে ঢাকায় গত রাতে রাজারবাগ পশ্চিম পাকিস্তানীরা হামলা চালিয়েছে এবং পিলখানার ইপিআর বিদ্রোহ করেছে এবং তারা অধিকাংশ ইপিআর ক্যাম্প দখল করে নিয়েছে, আপনারা যে যেখানে আছেন আপনাদের নিজেদেরও কাজ শুরু করুন। কিন্তু আমি তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলে সে পরিচয় দিতে অসম্মতি জানায়। যদিও এ খবরের সত্যতা প্রমাণ করার কোন উপায় ছিল না তথাপি কিছু সত্য থাকতে পারে এ কথা মনে করে নিজে বিদ্রোহ করতে মনে মনে স্থির করি।


  1. ১৯৭১ সালের মার্চে ক্যাপ্টেন পদে কর্মরত ছিলেন। সাক্ষাৎকারটি তাঁর মেজর থাকাকালীন সময়ে গৃহীত। এই প্রকল্পের জন্য তাঁর ২০-৯৮৩ তারিখে লিখিত ইংরেজী প্রতিবেদনের প্রথমাংশ প্রাসঙ্গিক বোধে এই সাথে সংযোজন করা হলো। প্রতিবেদনের বাকী অংশ ১০ম খণ্ডে সন্নিবেশিত হয়েছে।