পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩২৬

কামান; তিন ইঞ্চি মর্টার ইত্যাদি বাইরের দিকে মুখ করে বসিয়ে রাখে। সেই সময় আমরা জানতে পারি সেখানে শত্রুবাহিনী ২৫০থেকে ৩০০সৈন্য আছে। বাকি নিহত; আহত অথরা নিখোঁজ। আরো জানতে পারি য়ে তাদের ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল শফকত; বেলুচ; সিতারা-ই-জুরাত যিনি ৭ই এপ্রিল আমাদের সাথে যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন; এবং তাকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। প্রচণ্ড আক্রমনের সম্মুখে শত্রুবাহিনীর মনোবল সম্পূর্ণরূপে ভেংগে যায়। শত্রুবাহিনী সে এলাকায় সমস্ত বিহারীকে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র বিতরণ করে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রতিরক্ষা ব্যূহ তৈরি করে তাদেরকে সাহয্যে করতে নির্দেশ দেয়।

 এদিকে আমরা ছাউনি দখল করার শেষ প্রচেষ্টায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করি। তখন খবর পাওয়া গেল যে; পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দুই ডিভিশন সৈন্য নগরবাড়ী ঘাটে অবতরন করার চেষ্টা করছে হেলিকপ্টার; ষ্টীমার ফেরীর মাধ্যমে। অতর্কিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রিইনফোর্সমেণ্ট-এর কথা শুনে সকলের মনোবল ভাংগতে শুরু করে। কিন্তু সকলকে আশ্বাস দিয়ে আমি বলি যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে মোকাবেলা করার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তারা যেন তাদের কাজ চালিয়ে যায়।

 আমি দুটো কোম্পানী সেখান থেকে উঠিয়ে নগরবাড়ীর দিকে অগ্রসর হতে নির্দশ দিই। ১১ই এপ্রিল বিকেল বেলায় আমাদের বাহিনী যখন পাবনার অনতিদূরে পৌছে তখন পাবনা শহরের উপর শত্রুবাহিনীর মর্টর এবং আর্টিলারী ফায়ার হচ্ছিল। তখন ঐ দুই কোম্পানী মুলাহলী নামক স্থানে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যূহ তৈরি করে কিন্তু তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশিক্ষণ স্থায়ি হয়নি। তারা শত্রুবাহিনীর জংগী বিমানের হামলা এবং আর্টিলারীর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রশস্ত্র ও অসংখ্য সশস্ত্র সৈন্যদের বিরুদ্ধে কিছুক্ষণ লড়াইয়ের পর টিকতে না পেরে পশ্চাদপসরণ করে।

 এদিকে আমি ১২ই এপ্রিল সকাল বেলায় আমার সেনাবাহিনীর মনোবল অটুট রাখার জন্য নিজে এক কোম্পানী সৈন্য নিয়ে পাবনার পথে অগ্রসর হই এবং বাকি সংগ্রামী সৈনিকদেরকে ছাউনির উপর তাদের চাপ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিই। ১০ মাইল পথ অতিক্রম করার পর আমি খবর পেলাম যে শত্রুবাহিনী অতি নিকটে পৌঁছে গেছে এবং আসার পথে প্রধান রাস্তার দু পাশে বাড়ীঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে অগ্রসর হচ্ছে এবং আমি নিজেও তার ধোয়া দেখতে পেলাম। এমতাবস্থায় আমি সারদা এবং রাজশাহী যাওয়ার মোড়ে আমার শেষ প্রতিরক্ষা ব্যূহ তৈরি করি।

 ১২ই এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে আমাদের প্রতিরক্ষার এক হাজার গজ দূরে রাস্তা কেটে দেয়া হল এবং বড় গাছ কেটে ব্যারিকেডের মধ্যে বুবিট্র্যাপস ও কিছু মাইন দু পাশে পুতে রাখলাম। ১২ই এপ্রিল সন্ধ্যা নাগাদ পাকিস্তান সেনাবাহিনী সেখানে পৌঁছাল এবং ব্যারিকেড সরাতে চেষ্টা করল। বুবিট্র্যাপ ফেটে বেশ কয়েকজন সৈন্য হতাহত হয়। আমাদের ৩ ইঞ্চি মর্টার থেকে অগ্রসরমান শত্রুবাহিনীর উপর গোলাবর্ষণ করা হল। সারা রাত দু'পক্ষের তুমুল লড়াই চলে এবং সারদার কাছে সারদা ক্যাডেট কলেজের অধ্যাপক এ;বি;সিদ্দিকী যাকে আমি ’বীর বিক্রম (মৃত্যুর পর) উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এরপর ১৩ই এপ্রিল ভোরের দিকে পাক সেনাবাহিনী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং অবস্থান করতে থাকে। আমার সৈন্যরা তখনও মনোবল অটুট এবং শহরের চারিদিকে প্রতিরক্ষ্য ব্যূহ অব্যাহত রাখে। ছাউনি দখল করার জন্য তখনও তাদের চাপ অব্যাহত রাখে।

 ১৩/১৪ই এপ্রিল রাত দুটোর দিকে বৃষ্টির মত গুলিবর্ষণ শুরু হয় এবং শত্রুর গোলন্দাজ বাহিনী বিপুলভাবে গোবর্ষণ শুরু করে। যতই ভোর হতে থাকে আমার লোকদের সাথে আমার অয়ারলেস এবং টেলিফোন