পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৩৩

 হেডকোয়ার্টারে আক্রমন চালায়। রহনপুর ক্যাম্পের বাঙ্গালী ইপিআররা তাদের জীবন রক্ষার্থে ওদের উপর পাল্টা আক্রমন চালায়। ওদের তিনজন আহত হয়। ২৬শে মার্চ পাকিস্তানীরা রহনপুর বাজারে কিছু নিঃসহায় লোককে গুলী করে হত্যা করে। ২৬শে মার্চ দিনে নবাবগঞ্জ ক্যাম্পের সমস্ত বাঙ্গালীকে নিরস্ত্র অবস্থায় তিন চারবার ফলইন করানো হয়। কিন্তু কিছু সংখ্যক বাঙ্গালী অস্ত্রসহ বাইরে গণ্ডগোলের অজুহাতে ক্যাম্পের আশেপাশে থাকে। আমাদেরকে ফল-ইন করিয়ে উইং কমাণ্ডার বলেন যে; আমরা যদি বাইরের জনসাধারণের সাথে সহযোগিতা করি তাহলে আমাদের কঠিন সাজা দেয়া হবে এবং গুলি করে হত্যা করা হবে। কথা প্রসংগে পশ্চিমা সুবেদার মেজর দাদু খান বলে যে তোমাদেরকে ট্যাঙ্কের সাহায্যে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হবে।

 ২৬শে মার্চ দিনের বেলা আমরা চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে ইপিআর অয়ারলেসে খবর পাই যে ঢাকাতে বাঙ্গালী ইপিআরদের কে খতম করা হয়েছে। বাইরে যারা আছে তাদেরকে আত্মরক্ষার জন্য সতর্ক করে দয়া হয়।

 ২৬শে মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় আমরা কয়েকজন বাঙ্গালী এসসিও হাবিলদার মোস্তফা কামাল; হাবিলদার জমজম আলী হাবিলদার সিদ্দিকুর রহমান; হাবিলদার সৈয়দ আলী তালুকদার এবং কিছুসংখ্যক নায়েক সিপাহী পশ্চিম পাকিস্তানী কয়েকজন এনসিও-র সাথে আলাপ করছিলাম। হঠাৎ ব্যাটালিয়ন হাবিলদার মেজর গুলজার খান পশ্চিম পাকিস্তনীদের চোখের ইশারায় ডেকে নিয়ে আসেন। তাদের এহেন আচরনে আমরা সন্দিগ্ধ হলাম। আমরা আরো সতর্ক হই। কিছুক্ষন পর রাজশাহী সেক্টর হেডকোয়ার্টার থেকে একটি মেসেজ আসে। সেটা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানী সমস্ত অফিসার এবং জোয়ানদের পরিবারকে রাজশাহীতে সরিয়ে ফেলার জন্য এবং বাঙ্গালীদের খতম করে রাজশাহীর দিকে যাবার জন্য। আমাদের বাঙ্গালী অপারেটর এই মেসেজ সমস্ত বঙ্গালীদের জানিয়ে দেয়। এই মেসেজ অফিসারের হাতে পড়ার সাথে সাথে আমাদের উপর হামলা শুরু হয়। গোলাগুলির মধ্যেই তিনজন অফিসার পরিবারসহ পালিয়ে রাজশাহীর দিকে চলে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টা গোলাগুলীর পর পরিস্থিতি বাঙ্গালীদের আয়ত্তে আসে এবং অস্ত্রসহ পশ্চিম পাকিস্তানী জেসিওকে বন্দী করা হয়। গোলাগুলিতে তাদের কিছু লোক মারা যায়; কিছু আহত হয়। আমাদের একজন সামান্য আহত হয়।

 ক্যাম্পকে সম্পূর্নরূপে নিজ দায়িত্বে আনার পর বাইরে জনসাধারণ কে খবর দেয়া হয়। ১০/১৫ মিনিটের মধ্যে ২/৩ হাজার লোক ক্যাম্পে আসে আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য। সারা রাত ক্যাম্পের বাইরে এবং ভিতরে চতুর্দিকে ডিফেন্স করা হয় পশ্চিম পাকিস্তানীদের আক্রমন থেকে রক্ষা পাবার জন্য। তখন রাজশাহীতে ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেণ্ট ছিল। আমরা সীমান্তের সমস্ত বিওপিতে অবাঙ্গালীদের গ্রেফতার করে কিছু লোক বিওপিতে থাকি; বাকি সবাই উইং হেডকোয়ার্টারে সমবেত হবার জন্য অগ্রসর হই। ২৭ মার্চ বিকালে ৫ ঘটিকায় আমরা রাজশাহীর বাঙ্গালীর ইপিআর এবং বাঙ্গালী পুলিশদের জীবন রক্ষার্থে রাজশাহীর দিকে অগ্রসর হই। রাজশাহীর সেক্টর হেডকোয়ার্টারে পাকিস্তানীরা সমস্ত গোলাবারুদ এবং বিপুল পরিমান অস্ত্রশস্ত্র জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দেয়। সেক্টর হেডকোয়ার্টার পাকিস্তানী ক্যাপ্টেন ইসহাক সমস্ত বাঙ্গালী ইপিআরকে সতর্ক করে দেন এবং বলেন যে; তোমাদের সাথে আমি অনেক দিন যাবৎ আছি এখানে অনেক কিছু খেয়েছি। তিনি সবাইকে আত্মরক্ষার জন্য দুই মিনিটের মধ্যে চলে যেতে বলেন। ঠিক ঐ সময়ের মধ্যে পাকিস্তানীরা গোলাগুলি এবং আগুন জ্বালানো শুরু করে দেয়।

 নবাবগঞ্জ থেকে ১৮ মাইল দূরে গোদাগাড়ীতে কিছুসংখ্যক লোক ডিফেন্স তৈরি করে। রাত্রে পাকিস্তানিরা আমাদের উপর আক্রমন চালায়। উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি চলে। আমরা আস্তে আস্তে রাজশাহীর দিকে অগ্রসর হতে থাকি গোলাগুলী চলতেই থাকে। রাজশাহীর কাছিয়াডাঙ্গাতে ক্যাপ্টেন গিয়াস নওগাঁ থেকে এসে আমাদের সাতে মিলিত হন। সেই সময় আমাদের কোন অফিসার না থাকায় তিনি নেতৃত্ব দেন। রাজশাহী কোর্ট স্টেশনের নিকট ডিফেন্স থাকাকালীন আমাদের একজন নায়েক আবদুল মালেক শহীদ হন। ক্যাপ্টেন গিয়াস সাহেবের নেতৃত্বে আমরা রাজশাহী শাহর দখল করে নেই। এরপর রাজশাহী সেনানিবাস দখলের জন্য সাঁড়াশী অভিযান শুরু হয়। প্রায়ই আমাদের উপর বিমান হামাল হত-দিনে ৩/৪বার করে। ১৩ই এপ্রিল বিকেল পর্যন্ত