পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১১

দায়িত্ব দেওয়া হয়। জাকজমকের সঙ্গে এই প্যারেড অনুষ্ঠানের কথা ছিল। ফেব্রুয়ারী মাসের ২৬ তারিখে হঠাৎ খবর পেলাম যে প্যারেড বাতিল করা হয়েছে। আমি একটু আশ্চর্য হলাম। আমি আর্মি ডিভ হেডকোয়াটারে এসে কর্ণেল গীলের সাথে দেখা করলাম। সেখানে আরও কয়েকজন উচ্চ পদস্ত অফিসার ছিলেন, সবাইকে কেমন যেন এক অস্বস্তিকর আবস্থায় দেখলাম।

 ২৮শে ফেব্রুয়ারী পশ্চিম পাকিস্তান থেকে একটা বোয়িং ঢাকা বিমান বন্দরে অবতরন করে। সেটাতে বেসামরিক পোশাকে সেনাবাহিনীর লোকজন ছিল।

 ১লা মার্চ জাতীয় পরিষদের বৈঠক স্থগিত ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে প্রত্যেক দিন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সেনাবাহিনীর লোকজন আসতে থাকে এবং প্রত্যহ এর সংখ্যা বাড়তে থাকে।

 ঢাকা বিমান বন্দরে যেদিন থেকে বাঙ্গালী কর্মচারীরা কাজে যোগ দিতে বিরত থাকে সেদিন থেকে পাক সেনাবাহিনী বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রন নিজেদের কাছে রাখে এবং বিমানবন্দরে পজিশন নিয়ে থাকে।

 ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেওয়ার কথা শুনে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যরা এক উদ্বেগজনক অবস্থায় ছিল-তিনি কি বলবেন, কি করবেন। মিটিংয়ের পরে কোন গণ্ডগোল সৃষ্টি না হওয়ায় তারা একটু আশ্বস্ত হয়। সেদিন সমস্ত সেনাবহিনীর লোকজনকে জরুরী অবস্থা মোকবেলার জন্য সজাগ বা সতর্ক রাখা হয়েছিল। অসহযোগ আন্দোলন শুরু হবার পর তারা তাদের সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করতে লাগলো এবং বিমানবন্দর ও সেনানিবাসের চারদিকে এনট্রেন্সড পজিশন নিতে শুরু করে। এবং বাঙ্গালী ও পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের মধ্যে সন্দেহ, অবিশ্বাস সৃষ্টি হতে শুরু হলো।

 বিমান বাহিনীতেও শেষের দিকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে কমাণ্ডোদের আনা হচ্ছিল। এয়ারফিল্ডের বিভিন্ন জায়গায় বাঙ্গালীদের সরিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানীদের নিয়োগ করা হয়।

 ২৮শে মার্চ আমি এমওডিসি কমাণ্ডারকে ডেকে যদি পারে ছুটি নিয়ে এবং অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যেতে বললাম। বেশ কয়েকজন এমওডিসি অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল।

 ২৮/২৯শে মার্চে বিমান বাহিনীর স্যাবর জেটগুলোতে রকেট লাগানো শুরু হয়- কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং যে সমস্ত জায়গায় প্রতিরোধ চলছে ঐ সমস্ত এলাকায় বোমা বর্ষণ করার জন্য। রকেট গান ফিট করার কাজে সে সময় বাঙ্গালীরা ছিল। কিন্তু ঐ দিন ঐ কাজে পশ্চিম পাকিস্তানীদের নিয়োগ করা হয়। ২৯/৩০শে মার্চ বিমান বাহিনীর চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রে বোমা বর্ষণের জন্য যায়। সেখান থেকে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন।

 ২৫শে মার্চের ক্র্যাক ডাউন- এর পর আমি নিজেকে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সদস্য বলে মেনে নিতে পারছিলাম না।

 আমি ২৯শে মার্চ ছুটির জন্য দরখাস্ত করলাম। দুই সপ্তাহের ছুটি দেয়া হয়েছিল। আমি ফ্লাইট লেফটেন্যাণ্ট মারগুবের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম এবং ৩রা এপ্রিল স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভারতে যাবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু যোগাযোগ ব্যাবস্থার দরুন যেতে পারিনি।

 ১২ই মে তারিখে আমি, উইং কমাণ্ডার বাশার, ফ্লাইট লেফটেন্যাণ্ট রেজা (অবসরপ্রাপ্ত ফ্লাইং অফিসার -বদরুল আলম আগরতলাতে পৌঁছি।