পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৩৯

কাছে ছিল। আর যা ছিল তা হচ্ছে লাঠি-সোটা বর্শা বল্লম এই সমস্ত হাতিয়ার। তাই নিয়ে ওরা মেশিনগানের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছিল। এই সংঘর্ষে অনেক ছাত্র হতাহত হোল। কিন্তু সৈন্যরাও অক্ষত অবস্থায় চলে যেতে পারেনি। ওদের মধ্যে সাতজন ছাত্রদের হাতে ধরা পড়ল। বাকী সবাই প্রাণ নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে পালাল।

 এদিকে বগুড়া মিলিটারী ক্যাম্পে আর এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে চলেছিল। ক্যাম্পটা বগুড়া শহর থেকে আট মাইল দূরে। ক্যাম্পে সৈন্যদের মধ্যে প্রায় সবাই ছিল বাঙ্গালী। কিন্তু অফিসাররা সবাই পাঞ্জাবী; অফিসাররা বাঙ্গালী সৈন্যদের নিরস্ত্র করে রেখেছিল। আর তাদের মধ্যে যারা তাদের নির্দেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল; তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।

 ব্যাপারটা ক্যাম্পের বিতরে ঘটলেও এই খবর চাপা রইল না, দেখতে দেখতে সমস্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ল। খবর পেয়ে ছাত্ররা দলে দলে ছুটে এল। শুধু শহরের ছাত্ররা যে এল তাই নয়, চারদিককার গ্রামাঞ্চলের বহু ছাত্র এসে সেখানে জমল।

 ক্যাম্পের ভিতরে অবরুদ্ধ বাঙ্গালী সৈন্যদের এই দুর্দশার কথা জানতে পেরে গ্রামাঞ্চলের লোকদের মধ্যে উত্তেজনার ঢেউ বয়ে গেল। ক্যাম্পে পাঞ্জাবী অফিসারদের খতম করে দেয়ার জন্য তারাও এসে ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দিল। খালি হাতে আসেনি কেউ; যে যার হাতিয়ার সঙ্গে নিয়ে এসেছে। কৌতূহলী দর্শক নয় তারা; জীবন পণ করে লড়াই করতে এসেছে। শেরপুর; নন্দীগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চল হতে হাজার হাজার লোক এসে ক্যাম্পটাকে ঘেরাও করে ফেলল।

 লোকসংখ্যা বাড়তে বাড়তে ২০ হাজার উঠে পড়ল। পর পর ক'দিন তারা এই অবরোধ চালিয়ে গেল। ছাত্ররা অফিসারদের আত্মসমর্পণ করার জন্য আহবান জানাল। কিন্তু তারা কিছুতেই রাজী হতে চায় না। তারা ঢাকার সামরিক কর্তৃপক্ষের উপর ভরসা করে শক্ত হয়ে বসে রইল। ইতিমধ্যে এই খবর ঢাকায় গিয়ে পৌছেছে ঢাকা থেকে উড়ে এল বোমারু বিমান জনতাকে লক্ষ্য করে বোমা ছুড়তে লাগল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। মানুষ ক্ষেপে আগুন হয়ে উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত হাজার হাজার উত্তেজিত জনতার চাপে অফিসারদের বাধ্য হয়ে আত্মসমর্পণ করতে হোল। পরে এই অফিসারদের বগুড়ার রেলগেটে এনে গুলি করে মারা হয়।

সশস্ত্র প্রতিরোধ বগুড়া

সাক্ষাৎকার: গাজীউল হক

২১-০৮-৮৩

 ১৯৭১ সাল। ২৫শে মার্চ দিবাগত রাত সাড়ে তিনটা। এমদাদুল হক নামে এক তরুন এসে ঘুম থেকে ডেকে তুললো। এক্ষুনি থানায় যেতে হবে; জরুরী খবর আছে। খবর এসেছে পাকসেনা বগুড়ার দিকে এগিয়ে আসছে। দু'মিনিটে তৈরি হয়ে নিলাম। চিন্তা ভাবনার ফুরসৎ নেই। ছুটতে হলো ডাঃ জাহিদুর রহমান (এমপি) তাঁর বাড়িতে দোতলার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েছিলেন। ডাকতেই নেমে এলেন। তাকে নিয়েই ছুটতে ছুটতে থানায় হাজির হলাম।

 আধো আলো আধো অন্ধকার বগুড়া কোতাওয়ালী থানার আঙ্গিনায় ২০/২৫ জন লোক দাড়িয়ে। সামনে এগিয়ে এলেন মকবুল সাহেব (ইণ্টেলিজেন্স ব্যাঞ্চের অফিসার) তিনি জানালেন অয়ারলেসে খবর এসেছে পাকসেনারা রাজারবাগ এবং পীলখানা আক্রমন করেছে। রাজারবাগ এবং পীলখানায় প্রতিরোধ চলছে। এদিকে রংপুর থেকে পাকিস্তানী সৈন্য বগুড়ার দিকে এগিয়ে আসছে।

 নিজেকে ভীষণ অসহায় বোধ করছিলাম। আমি নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলাম না। কোন রাজনৈতিক দলের নেতাও নই। সুতরাং এ অবস্থায় আমার দায়িত্ব কতখানি বুঝতে না পেরে বিব্রত বোধ করছিলাম। ডাঃ জাহিদুর