পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



৩৫১

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড

সিরাজগঞ্জ এলাকার সশস্ত্র প্রতিরোধ
সাক্ষাৎকারঃ মোজাফফর হোসেন
২৫-০৮-১৯৭৩

 ২৫শে মার্চের ঘটনা। রাত একটার দিকে মহকুমা প্রশাসক জনাব শামসুদ্দিন সিএসপি (শহীদ) আমাকে সংগ্রাম পরিষদে জানালেন, পুলিশ, আনসার বাহিনীর যত অস্ত্র আছে সব তোমাদের জন্য দেব প্রতিরোধের জন্য।

 ২৬শে মার্চ বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। ছুটি ভোগরত পাক বাহিনীর সেনা আনসার, পুলিশ, ছাত্র, সাধারন লোক, অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক সব মিলে মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলা হয়। প্রাথমিক অবস্থায় অস্ত্র রাইফেল, বন্দুক টু-টুবোর রাইফেল নিয়ে যুদ্ধে নামা হয়।

 বগুড়ার আড়িয়ার বাজারে আগে থেইে পাক ঘাঁটি ছিল। মার্চে মাসের শেষের দিকে সাধারণ লোক সামান্য অস্ত্র নিয়ে পাক-বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৩০ জনের মত পাকসেনা ছিল। আকাশে থেকে বিমান আক্রমন চালায় পাকবাহিনী। ওদের গুলী এসে লাগে। গোলার ডাম্পে তাতে আগুন লেগে বিমান বাহিনীর গুলীতেই বেশ পাকসেনা খতম হয়। তারপর জনসাধারন ঢুকে পড়ে অনেককে আত্মসমৰ্পন করায়, অনেককে হত্যা করে পিটিয়ে।

 আমি এবং এসডিও শামসুদিন সাহেব এদিন বগুড়া গিয়ে সেখানকার মুক্তিবহিনীর মধ্যে সমঝোতা করে কিছু অস্ত্র এবং বেঙ্গল রেজিমেণ্টের প্রায় ২০ জন এবং ইপিআর-এর প্রায় ৩০ জন নিয়ে সিরাজগঞ্জ চলে আসি। তখন আমাদের কাছে ছিল চাইনিজ রাইফেল ৭টি, মাক-৪৬টি, রাইফেল ৫/৬টি।

 ২৬শে মার্চ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। তখন আমাদের খাওয়া, থাকা, বেতন, দেওয়া যাবতীয় ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ করতে থাকে।

 সিরাজগঞ্জ যমুনার পড়ে আমরা ৬/৭টি ছোট ধরনের কামান পেতে রাখি, যার দূরত্ব এক মাইলের মত। এই কমানগুলি তৈরি করেছিল আমাদের স্থানীয় লোক আবুল মিস্ত্রী।

 এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে খবর পেলাম টাঙ্গাইলের ঘাটে ৭টি লঞ্চ গেছে পাক বাহিনীকে নিয়ে যাবার জন্য। আমি তিনজন ছেলে এবং কিছু অস্ত্রসহ স্পীডবোট নিয়ে টাঙ্গাইল ঘাটে পৌছে ফাঁকা আওয়াজ করে সারেংদের আটকিয়ে ১১টি লঞ্চসহ সিরাজগঞ্জ ফিরে আসি।

 বাঘাবাড়িতে প্রতিরোধঃ এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি প্রায় ১৫০ জন ছেলেসহ আমি বাঘাবাড়ী ঘাটে ডিফেন্স দিই। আমার সাথে লতিফ মীর্জা, গোলাম কবরিয়া, সোহরাব হোসেনও ছিল। পরদিন ইপিআর, আনসার, পুলিশ বেঙ্গল রেজিমেণ্ট নিয়ে প্রায় ১০০ জন যোদ্ধা আমার ওখানে পাঠিয়ে দেন এসডিও সাহেব।

 বাঘাবাড়ীতে নদীর পাড়ে ২ মাইলব্যাপী ২০০ গজ পরপর পাকা মরিচা খনন করে সেখানে ডিফেন্স নিয়ে থাকি। তার পরদিন এসডিও সাহেব নিজে আমাদের ডিফেন্স আসলেন প্রায় ৫০ জন ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেণ্ট এবং অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক নিয়ে।

 আরিচা ঘাট রক্ষা করার জন্য প্রায় ১০০ জন বেঙ্গল রেজিমেণ্ট এবং ইপিআর বাহিনীর লোক নিয়ে আমি এবং এসডিও সাহেব অগ্রসর হই। কাশিনাথপুর পৌছালে শুনলাম আরিচার পতন ঘটেছে। তখন আমরা কাশীনাথপুরে জঙ্গলের ভিতর আমাদের ঘাঁটি স্থাপন করি। ওখান থেকে ১০ মাইলের মধ্যে পাক ঘাঁটি আছে।


  • বাংলা একাডেমরি দলিলপত্র থেকে সংগৃহীত।