পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৬১

পাক বিমান বাহিনী বরিশাল শহরে এসে ২টা স্যাবর জেটের সাহয্যে স্ট্র্যাফিং করে। বিমান বাহিনীর বুলেটবৃষ্টির ফলে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এত ৩০/৪০ জন নিরীহ লোক মারা যায়।

 এ বিমান আক্রমণের ফলে জনসাধারণ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং প্রাণভয়ে অধিকাংশ লোকই শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। বরিশাল একরকম জনশূন্য হয়ে পড়ে। বিমান হামলার বেলস পার্কে অল্পের জন্য মেজর জলিল রক্ষা পান।

 বিমান হামলার পর প্রয়োজনীয় মজুত রিজার্ভ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ লাকুটিয়া জমিদার বাড়ী ও অন্যান্য স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়। বরিশাল শহরের উপর আক্রমণ অত্যাসন্ন ভেবে আমরা এই ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। পেট্রোল যোগাড় করার জন্য ২৪শে এপ্রিল সন্ধ্যায় স্পীডবোটে করে ভোলায় যাই। বহুকষ্টে সামান্য পেট্রোল সংগ্রহ করে পরদিন সকালে ফিরে আসি।

 আমি যখন কণ্ট্রোল রুমে বসে আছি তখন হঠাৎ বরিশালের ২০ মাইল দুরে নান্দিনাবাজারে অবস্থানরত আমাদের পার্টি খবর জানায় ৪টি গানবোট ও অন্য দুটি বোটে করে পাকসেনারা যতদূর সম্ভব বরিশালের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং তারা বরিশাল আক্রমণ করতে পারে। আমি তৎক্ষনাৎ জুনাহারে আমাদের অবস্থানের দিকে চলে যাই। জুনাহারে পৌঁছতে পৌঁছতে দেখি পাকসেনারা আমাদের উপর হামলা শুরু করে দিয়েছে। আমি জুনাহারের তালতলী নদীর পারে আমার অবস্থানে গিয়ে দেখি সেখানে অবস্থানরত সেনারা ভয় পেয়ে গেছে। আমি তাদের সাহস দিয়ে সংগঠিত করি। শত্রুসেনারা বাধা পেয়ে দিক-বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে নদীর উপর ব্যারিকেড সৃষ্টি করে রাখা ২টি স্টীমারের উপর হামলা চালায়। ১টি স্টীমার গোলা মেরে পুড়িয়ে এবং অন্যটি ডুবিয়ে দিয়ে তারা তালতলী নদীর ভেতরে ঢুকে পড়ে।

 আমাদের হাতে ভারী অস্ত্র না থাকার ফলে আমরা গানবোটগুলি ধ্বংস করে দিতে পারিনি। আমি দ্রুত ১টি নৌকায় করে তালতলী নদী পার হবার চেষ্টা করি। এ সময় শত্রুসেনারা আমার নৌকার উপর হামলা চালায়। এতে নৌকার মাঝি আহত হয়। আমি দ্রুত নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ি এবং পার হতে সক্ষম হই।

 শত্রুসেনারা সে সময় আমার উপর মেশিনগানের গুলি চালাতে থাকে। আমি চরে ধানক্ষেতে প্রায় ১ ঘণ্টা পড়ে থাকি। তারপর আস্তে আস্তে ক্রলিং করে মূল অবস্থানে ফিরে আসি।

 শত্রুদের গানবোট ধ্বংস করার জন্য আমার বাহিনীর ইপিআর-এর হাবিলদার আবদুল মান্নান অতি সাহসিকতার সাথে খুব নিকট থেকে ১টি গানবোটের উপর হামলা চালায়। এতে গানবোটের যথেষ্ট ক্ষতি হয়। ১২টা পর্যন্ত মুষলধারে উভয় পক্ষে গোলাগুলি চলতে থাকে। ইতিমধ্যে হেলিকপ্টারে আরও ১০০-এর মত খানসেনা তালতলী পাড়ে নামানো হয়। সন্ধ্যার দিকে আমরা অবস্থান তুলে নিই। পাকসেনারা আশেপাশের গ্রামগুলি উপর অবিরাম গোলাবর্ষণ করতে থাকে। পরদিন ২৬শে এপ্রিল পাকসেনারা বরিশাল শহরে প্রবেশ করে এবং যুদ্ধের সময় যথেষ্ট গোলাগুলি ক্ষয়ের ফলে পাক সেনারা বরিশাল শহরে ক্ষতি করতে পারেনি। ইতিমধ্যে সংঘর্ষের সময় বরিশাল শহরের লোকেরা নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যায়। এ সংঘর্ষে পাকসেনাদের ২৫ জন মারা যায়। আমাদের কেউ মারা যায়নি।

বরিশালে প্রতিরোধের বিবরণ

সাক্ষাৎকারঃ মহিউদ্দীন আহমদ, প্রাক্তন এম-টি

২৮-০৮-১৯৭৩

 ২৫মে মার্চের ঘটনা আমি জানতে পারি টেলিফোনযোগে রাত সাড়ে নটা-দশটার দিকে। আমরা মঞ্জুর ভাই সহ বসলাম আলাপ-আলোচনার জন্য। অয়ারলেস মারফত আমরা বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করে ঢাকার পুরা