পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৮৮

সবাইকে মরতে হয়েছে। জনতা আহত পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাদের ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে বিজয়োল্লাস করেছে।

 ডাঃ হক বলেনঃ কত হাজার হাজার মানুষে যে ইতিমধ্যে মারা গিয়েছে তার কোনও গুণতি নেই। কিন্তু তবু মানুষ মরতে ভীত নয়।

 তিনি যশোর থেকে খবর পেয়েছেন যে, সেনাবাহিনী কোণঠাসা হয়েছে। খুলনায় সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত।

 স্টাফ রিপোর্টার জানান, বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের বহু কর্মী এবং মুক্তিসেনা সীমান্ত পার হয়ে পশ্চিম বঙ্গে এসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে সাহায্য চাইছেন।

-আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩০ মার্চ, ১৯৭১

সীমান্তের চারদিক থেকে

 [আমাদের স্টাফ রিপোর্টার, বিশেষ প্রতিনিধি, নিজস্ব সংবাদদাতা স্বাধীন বাংলাদেশের নানা সীমান্ত থেকে অজস্র সংবাদ পাঠাচ্ছেন ওখানকার মুক্তিযুদ্ধের। সব মিলিয়ে একসঙ্গে তা প্রকাশিত হল সংক্ষেপে। সব সংবাদেরই বক্তব্য, পাক ফৌজ ভেঙ্গে পড়ছে, মুক্তিফৌজ দখল করে চলেছে একের পর এক এলাকা।]

 গেদে থেকেঃ কুষ্টিয়ার লড়াই-এ মুক্তিফৌজকে সাহায্যের জন্য হাজারে হাজারে অসামরিক নাগরিক পদ্মা পার হয়ে কুষ্টিয়ার দিক থেকে ছুটে যান। হারডিঞ্জ সেতু পার হবার সময় শত্রু বাহিনী বোমারু বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করে। বোমায় সেতুর একাংশ বিধ্বস্ত হয় এবং শতখানেক স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রাণ হারান।

 পাবনায় শত্রুবাহিনী ওই একই নারকীয় দৃশ্য তৈরি করেছে। তবে রক্ত দিয়ে তাদের মূল্য দিতে হয়েছে। শেষ শত্রুসৈন্যও জনতার রোষে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে।

 মুক্তিফৌজের কমাণ্ডার ভারতের জনগণকে তাঁর অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রংপুর আমাদের মুক্তিফৌজের দখলে এসেছে।

 খুলনায় নারী ও শিশুদের উপর পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা যে বর্বর, অমানুষিক অত্যাচার চালিয়েছে-মুক্তি ফৌজের নেতা বার বার তার উল্লেখ করেন।

 তিনি বলেন, রক্ত দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে, আমরা তা জানি। কিন্তু আমাদের মাবোন, ছেলেমেয়েদের উপর এই নৃশংস অত্যাচার চলবে-তা আমরা ভাবতে পারিনি।

 মেখলিগঞ্জ থেকেঃ বাংলাদেশের রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ এবং বগুড়া শহরে দখলদার পাকিস্তানী ফৌজ ও বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনীর মধ্যে প্রতি মহল্লায় তুমুল লড়াই চলছে।

 দখলদার বাহিনী রংপুর শহরে ট্যাঙ্ক নামিয়েছে। দিনাজপুর ও রংপুর জেলা শাসক ও পুলিশ সুপারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপরদিকে মুক্তি ফৌজ পচাগড়ে অবরুদ্ধ দুই কোম্পানী পাকিস্তানী ফৌজকে পর্যুদস্ত করে অস্ত্রশস্ত্র কেড়ে নিয়েছে এবং এই লড়াইয়ে অধিকাংশ পাকিস্তানী ফৌজ নিহত হয়েছে। রংপুর ও দিনাজপুর জেলার সীমান্ত ফাঁড়ি এখনও আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ন্ত্রণে। মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানী ফৌজকে পরাজিত করে রাজশাহী শহরকে মুক্ত করেছে।