পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৯১

চট্টগাম জ্বলছেঃ চট্টগ্রাম শহর জ্বলছে। মুক্তিফৌজ সেখানে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের সঙ্গে হাতে হাতে লড়াই করছেন। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রেসিডেণ্ট ইয়াহিয়ার সৈন্যরা ট্যাংক ব্যবহার করছে।

 শহরের প্রধান অংশ এখন মুজিবের বাহিনীর হাতে রয়েছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রামে বিমান থেকে সৈন্য নামান হয়েছে। জাহাজ থেকে আজও গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। এই বন্দর শহরে এখন প্রবল লড়াই চলছে। চট্টগ্রাম বন্দরকে এমনভাবে ধ্বংস করা হয়েছে যে, বন্দরটিকে ব্যবহারযোগ্য করতে কয়েক বছর সময় লাগবে।

 দিনাজপুরে প্রবল লড়াইঃ রাধিকাপুর থেকে প্রাপ্ত সংবাদে প্রকাশ, রবিবার সারারাত ধরে দিনাজপুর শহর এবং সংলগ্ন গ্রামগুলোতে প্রবল লড়াই চলছে। পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা কয়েকটি গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে। বোমা ও মেশিনগানের শব্দে রাধিকাপুর ও সংলগ্ন গ্রামের জনসাধারণকে বিনিদ্র রজনী যাপন করতে হয়েছে।

 রাজশাহী ও খুলনাঃ রাজশাহী ও খুলনাতে কয়েক কোম্পানী পাকিস্তানী সৈন্য বিমানে নামানো হয়েছে। রাজশাহীতে মুক্তিফৌজের প্রতিরোধ ভাঙ্গার জন্য বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে।

 উভয় স্থানে মুক্তিফৌজ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। একটি মাত্র স্থানে বিদেশী সৈন্যরা সীমাবদ্ধ ছিল। রাজশাহীর গোদাগাড়ি ঘাট পর্যন্ত এখন মুক্তিফৌজের নিয়ন্ত্রণে আছে। তাঁরা রাইফেল বাহিনীর সদর দপ্তর পুনরায় দখল করেছেন।

 আজ সকালে উপরোক্ত স্থানে পুনরায় সৈন্য পাঠানো হয়েছে। ইস্ট বেঙ্গল রাইফেলের ও পুলিশের সাহায্যে শেখ মুজিব বাহিনীর লড়াই অব্যাহত রয়েছে। রাজশাহী জেলার নবাবগঞ্জ মুক্তিফৌজ দখল করে নিয়েছে। পশ্চিমা পাঞ্জাবী মহকুমা অফিসার নিহত হয়েছে। খুলনার টেলিফোনে এক্সচেঞ্জকে পাক-সৈন্যরা ধ্বংস করেছে।

 ক্যাণ্টেনমেণ্ট দখলের চেষ্টাঃ কুমিল্লা ও যশোহর ক্যাণ্টনমেণ্ট দখলের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য মার্কিন স্যাবর জেট থেকে বোমাবর্ষণ করছে বলে স্বাধীন বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও মুক্তিফৌজ এই ক্যাণ্টনমেণ্ট দুটিকে দখলে রেখেছেন।

 ঢাকাতে তীব্র সংঘর্ষঃ ঢাকা শহর ও তার আশেপাশে এবং ক্যাণ্টনমেণ্ট বিমানবন্দর এলাকায় পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য ও মুক্তিফৌজের মধ্যে প্রবল লড়াই চলছে। পরে ঢাকা শহর মুক্তিফৌজ দখল করেছেন বলে স্বাধীন বেতার কেন্দ্র ঘোষণা করেছেন।

 কৃষ্ণনগর থেকে প্রাপ্ত এক খবরে প্রকাশ, ঢাকা কর্পোরেশন অফিস এখন মুক্তিফৌজের দখলে। প্রশাসক মেজর এস এ খান নিহত।

 মুর্শিদাবাদ জেলার ভারতীয় সীমান্ত গ্রাম ভগবানগোলার বিপরীত দিকে পাক-সীমান্ত প্রহরারত ২০ জন পশ্চিম পাকিস্তানী প্রহরী মুক্তিফৌজের হাতে নিহত হয়েছে।

 রাতে নৌকা চলাচল নিষিদ্ধঃ নদীমাতৃক পূর্ববাংলার জলপথে রাত্রে নৌকা চলাচল নিষিদ্ধ করে ‘স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌম সরকার’ এক নির্দেশ জারী করেছেন।

 মুক্তিফৌজের আক্রমণে বিছিন্ন ও পর্যুদস্ত পাকিস্তানী সৈন্যরা যাতে পালাতে না পারে তার জন্যই এ ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়েছে।

 রংপুরঃ সমগ্র রংপুর শহর মুক্তিফৌজের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রংপুর-কোচবিহার এলাকায় পাকিস্তানী রাইফেলের টহল মুক্তিফৌজের নির্দেশ বন্ধ করা হয়েছে।