পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৯৮

স্থলপথে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর পশ্চাদপসরণের শেষ পথটি ছিন্ন করে দিয়েছে। দিনাজপুর শহর আগেই মুক্ত হয়েছে। রাজশাহীতেও জোর লড়াই চলছে। মুক্তিফৌজের সাঁড়াশি আক্রমণে হানাদাররা কোণঠাসা। বগুড়া ও পাবনা জেলার মুক্তি সংবাদ শেষ রাত্রে এসেছে।

 বাংলাদেশ-দক্ষিণ রণাঙ্গণঃ দক্ষিণ রণাঙ্গণে চট্টগ্রামে আবার প্রচণ্ড লড়াই শুরু হয়েছে হানাদার ও মুক্তিফৌজে। পাক বিমান বোমা ফেলছে চট্টগ্রামে শহরে। নোয়াখালী জেলার নানা অঞ্চলেও উভয় পক্ষ মুখোমুখি। বরিশাল জেলায় লড়াই হঠাৎ প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে।

 পূর্বাঞ্চল রণাঙ্গনঃ আগরতলা, ৫ এপ্রিল-বড় বড় শহরের নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকা ছাড়া বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল এখন মুক্তাঞ্চল। বেঙ্গল রেজিমেণ্টের তিনজন মেজর সম্মিলিতভাবে এই যুক্তাঞ্চলের প্রশাসন ভার গ্রহন করেছেন। তাদের সাহায্য করছেন অসামরিক অফিসার ও আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবকরা। মুক্তাঞ্চলের শ্রীহট্ট এলাকার অধিনায়ক মেজর খালেদ মোশাররফ, ময়মনসিংহ এলাকার মেজর সফিউল্লা ও চট্টগ্রামে এলাকার মেজর জিয়াউর রহমান।

 দিন কয়েক আগে মেজর জিয়াউরই স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে অস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তখন তিনি নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন মেজর জিয়া বলে।

 গত শনিবার শ্রীহট্ট এলাকার কোন এক স্থানে মেজর মোশাররফের সদর দফতরে তিন মেজর এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে স্থির হয়ঃ যতদিন না জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসে এই ত্রয়ীই সেনাবাহিনী পরিচালনা করবেন।

 শ্রীহট্ট খণ্ডের অধিনায়ক মেজর মোশাররফ ইউ এন আইয়ের প্রতিনিধিকে বলেনঃ স্বাধীনতা ঘোষনার সময় মুক্তিফৌজে পুরোদস্তর সৈন্যের সংখ্যা ছিল হাজার কয়েক মাত্র। এখন তা বহুগুণে বেড়ে গিয়েছে। তা ছাড়া আওয়ামী লীগের হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবককে নিয়মিতভাবে সামরিক তালিম দেওয়া হচ্ছে।

 মুক্তিফৌজের রণনীতি প্রসঙ্গে মেজর বলেন, মুক্তিসেনাদের সংঘবদ্ধ করা ও তাদের মধ্যে সংহতি গড়ে তোলাই বাংরাদেশেরএকন সবচেয়ে জরুরী। শত্রুপক্ষের শক্তি কোন এলাকায় কি রকম সে-সকল খোজখবর নেওয়ার পর হানা হবে আঘাত। মেজর মোশাররফ জানান, বিভিন্ন জায়গায় লড়াই করা মুক্তিফৌজ হানাদারদের কাছ থেকে বহু অস্ত্রশস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছে। আরও অস্ত্রশস্ত্র দখল ও অস্ত্রাগারগুলির উপর আক্রমণ চালাবার জন্য গেরিলা বাহিনী গঠন করা হবে।

সমুদ্রবক্ষে পাক সাবমেরিনের বাঙালী নাবিকদের বিদ্রোহ

 তউলন (ফ্রান্স), ৫ এপ্রিল-পাকিস্তানী সাবমেরিন ‘মনগ্রো’র বাঙালী নাবিকরা ‘বিদ্রোহ’ করেছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু তৎপরতার সঙ্গে তা দমন করা হয়। ৪৫ জন নাবিকের মধ্যে ১৩ জনকে ফেলে রেখে সাবমেরিনটি এখান থেকে যাত্রা করে। সাবমেরিনটি এখান থেকে করাচির উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। বাঙালী নাবিকরা সেটি থামাবার চেষ্টা করে।

 ১৩ জন নাবিক সুইজারল্যাণ্ডের দিকে যাত্রা করেছেন বলে জানা গিয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ সাবমেরিনের ঘটনা সম্পর্কে কিছু বলতে অস্বীকার করেন। তবে মনগ্রো’র আশেপাশে জাহাজগুলির নাবিকেরা তাতে মহুর্মুহু চিৎকার শুনতে পান। মনগ্রো’র নিকটবর্তী দক্ষিন আফরিকার একটি সাবমেরিনের একজন অফিসার বলেন, আমি মনে করেছিলাম, বুধবার রাতে তারা পরস্পরের গলা কাটছিল।

- আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ এপ্রিল, ১৯৭১