এরাই মিলিতভাবে মুক্তিফৌজের নিয়ন্ত্রণ করেছেন। আওয়ামী লীগের অনুগত অসামরিক অফিসার ও কর্মচারীরা এদের সঙ্গে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করছেন।
এই তিন সেনাপতি হলেন মেজর খালেদ মুশাররফ (শ্রীহট্ট সেকটর), মেজর সফিউল্লা (ময়মনসিংহ) ও মেজর জিয়াউর রহমান (চট্টগ্রাম)। জিয়াউরই মেজর জিয়া নামে অস্থায়ী সরকারের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করেছিলেন।
গত শনিবার শ্রীহট্টের কোন এক জায়গায় মেজর মুশাররফের সদর দফতরে ওরা তিনজন মিলিত হয়েছিলেন এবং ঠিক করেছেন যে, যতদিন না জাতীয় পরিষদের বৈঠক বসে এবং জাতীয় সরকার গঠিত হয় ততদিন তারা মুক্তিফৌজ ও প্রশাসন পরিচালনা করবেন।
মেজর মুশাররফ সাংবাদিকদের বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা নিজে সঙ্গে থেকে দেখান এবং জানান যে, পাকিস্তানীদের সঙ্গে যুদ্ধে তারা প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র দখল করেছেন। মুক্তিফৌজ বাংলাদেশে কত জনপ্রিয়, সাংবাদিকেরা তা নিজেদের চোখেই দেখতে পান। বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিফৌজের নতুন স্বেচ্ছাসেবকের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে-তাও তাঁরা দেখেন।
যশোরে সংঘর্ষঃ যশোর শহরের সর্বত্র নিজেদের কর্তৃত্ব দাবির জন্য হানাদার বাহিনী সোমবার রাত্রে মুক্তিফৌজের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে বলে পাওয়া গেছে। যশোর-ঢাকা সড়ক ও যশোর-বেনাপোল সড়কে দোতলা তেতলা বাড়িগুলি দখল করে হানাদাররা মেশিনগান ও মর্টার থেকে গোলাবর্ষণ করে চলেছে।
যশোরের এই খবর ছাড়াও ইউ এন-আই-পি টি আই জানান যে, বাংলাদেশের মুক্তিফৌজ কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম শহরে পাকবাহিনীর উপর প্রচণ্ড আঘাত হেনেছেন। কুমিল্লা থেকে বহু হানাদার হটে গিয়ে এখন ময়নামতীর ছাউনি এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। মুক্তিফৌজ আঘাত করেই সরে পড়ার নীতিকে আক্রমণ চালিয়েছিল।
কলকাতার খবর পাওয়া যায়, চট্টগ্রাম, রংপুর ও খুলনার বেতার কেন্দ্রগুলি এখন মুক্তিফৌজের হাতে। তবে হানাদাররা যন্ত্রপাতি নষ্ট করে যাওয়ায় বোধহয় প্রচার বন্ধ আছে। বন্দরগুলি সম্পূর্ণ নিজেদের আয়ত্তে আনার জন্য মুক্তিফৌজ প্রস্তুত হচ্ছেন
মজুদ খাদ্য ফুরিয়ে আসছে বলে হানাদাররা এখন ভেঙ্গে পড়চে। রংপুর এমনকি ঢাকাতেও পাকসেনারা সরবরাহের সংস্থানে খুবই বিপন্ন বোধ করছে। মৌলবীবাজার ও বাহ্মণবাড়িয়ার বেঙ্গল রেজিমেণ্ট ও ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল-এর সেনারা একটি কমাণ্ডের অধীনে নিজেদের নতুন করে সংগঠিত করে নিচ্ছে।
হানাদাররা ঢাকা-কুমিল্লা এবং ঢাকা-শ্রীহট্টের মধ্যে সড়ক ও রেলসংযোগ খোলার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। কারণ, এর ফলে সেনা চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। হানাদাররা দু’এক জায়গায় সংযোগ পুনরায় চালু করলেও মুক্তিবাহিনী আবার অন্যত্র এই সংযোগ বিছিন্ন করে দিয়েছে। অতর্কিত আক্রমণে সমশেরনগরের কাছে মুক্তিফৌজ হানাদারদের বহু গাড়ি ও অস্ত্র দখল করে নিয়েছেন। রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী একটি হেলিকপ্টার মুক্তিসেনারা গুলি করে ফেলে দিয়েছেন।
পাকফৌজ ট্রেনের উপর গেরিলা আক্রমণঃ মোগলহাট, রংপুর (বাংলাদেশ)-লালমনিরহাট থেকে মোগলহাটের দিকে একটি ফৌজী রেল-ইঞ্জিন এগোবার পথে মুক্তিফৌজের গেরিলাদের বোমার ঘায়ে জখম হয়ে ফিরে যায়। লালমনিরহাটকে চারদিক থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। লালমনিরহাট-রংপুর ক্যাণ্টনমেণ্ট সড়ক সংযোগ বিচ্ছিন্ন। পাকমিলিটারী বোঝাই একটি ট্যাঙ্ক এই পথে এগোতে গিয়ে অবরোধের মুখে উল্টে যায়। ২০/২৫ জন ফৌজ আহত হয়েছে। রংপুরে কোনও বিমানবন্দর নেই, আছে শুধু হ্যালিপ্যাড ফলে আকাশপথে জঙ্গী-বাহিনী কোন সুবিধা করতে পারছে না। সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। পশ্চিমী ফৌজ ক্যাণ্টনমণ্টে অবরুদ্ধ।