পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪০৩

দুর্গ দখলের অভিযানে সেনাপতির সঙ্গী বেগম ওসমান

 যশোর, ৮ এপ্রিল-যশোর দুর্গ দখলের জন্য দশ হাজার মুক্তিযোদ্ধা দূরবর্তী চারটি কোণ থেকে রণাঙ্গনের দিকে কদমে কদমে এগিয়ে চলেছে। বুধবার শেষ রাতে তাঁদের এই অভিযান শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের এই বিশাল বাহিনীর অধিনায়ক মেজর ওসমান। পাশে থেকে শক্তি যোগাচ্ছেন সহঅধিনায়কা বেগম ওসমান। দুর্বার বেগে এগিয়ে চলা এই বাহিনীর মুখে ধ্বনিঃ চলো, চলো দুর্গে চলো।

 দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই দুর্গ দখলের জন্য মুক্তি সংগ্রামীদের প্রস্তুতি পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে রাস্তায় রাস্তায়। নিজেরা কারফু জারি করেছেন প্রয়োজনীয় এলাকায়। সন্দেহজনক ও অচেনা মুখ দেখলেই চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। বাইরের কয়েকজন বেঈমান ধরা পড়ায় তাদের চরম শাস্তি দেওয়া হয়েছে। পরিখা খোঁড়া হয়েছে বিশেষ বিশেষ জায়গায়। বিবর ঘাঁটিও হচ্ছে অগ্রবর্তী অঞ্চলে। দুর্গের চারদিকে বেষ্টনী রচনা করে ওয়ারলেস সংযোগ ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হয়েছে। নতুন রণকৌশলে শত্রুবাহিনীকে শেষ আঘাত হানার জন্য সব ব্যবস্থাই পাকা। সর্বাধিনায়কের নির্দেশ পাওয়া মাত্র ঝটিকা গতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য মুক্তি সেনারা এখন তৈয়ার।

 অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানী ফৌজের নাভিশ্বাস উঠেছে। মরণ কামড় দেওয়ার জন্য তারা দুর্গের আশপাশে চালাচ্ছে পোড়ামাটি নীতি। গ্রামের পর গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে। এ দিন সকাল থেকেই দাউ দাউ করে ঘরবাড়ি পুড়তে দেখা যায়। চাঙ্গুটিয়া, আরিফপুর, পতেঙ্গালি প্রভৃতি এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত। এছাড়া গুদাম, দোকানপাট লুঠ করেছে মিলিটারি সমর্থক আর একদল পশ্চিমী ঠ্যাঙাড়ে দল। হত্যা, হামলায় বিতাড়িত হয়ে হাজার হাজার শরণার্থ ভারতে এস আশ্রয় নিচ্ছেন। আরও বহু শরণার্থ ভারত প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছেন।

—আনন্দবাজার পত্রিকা, ৯ এপ্রিল, ১৯৭১

ঝিকরগাছায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিফৌজের প্রচণ্ড লড়াই

 ঝিকরগাছা রণাঙ্গন, (যশোর), ৯ই এপ্রিল-পাকিস্তানী বাহিনী আজ ঝিকরগাছা পর্যন্ত রণক্ষেত্র বিস্তৃত করেছে। কামান ও ৬ ইঞ্চির মর্টার নিয়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা আজ ভোরে মালঞ্চ গ্রামের উপর নতুন আক্রমণ চালানেচালানে মুক্তিফৌজ গ্রাম ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়। গ্রামটি তারা ছেড়ে দিলেও তাদের মেশিনগানের গুলীতে প্রায় একশ’ পাকসৈন্য নিহত হয়েছে।

 মালঞ্চ গ্রাম ছেড়ে মুক্তিফৌজ এখন একদিকে যশোর রোডের উপর লাউজানি লেভেল ক্রসিং গেটে এবং অন্যাদিকে ঝিকরগাছা বাজারের উত্তর দিকে কপোতাক্ষ নদের পূর্ব পাড়ে পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে ‘ব্যাক টু দি ওয়াল’ লড়াই আরম্ভ করেছে।

 সকালের দিকে পাকিস্তানী বাহিনী যখন যশোহর রোড ধরে ঝিকরগাছার দিকে এগোচ্ছিল, সে সময় মুক্তিফৌজ লাউজান ক্রসিং গেট বরাবর মেশিনগান ও ৩ ইঞ্চির মেশিনগান মর্টার দিয়ে পাকবাহিনীর আক্রমণ রোধ করে। কিন্তু পাকবাহিনী তখন যশোহর রোডের উপর তাদের একটি দল রেখে উত্তর দিকে চষা মাঠের মধ্য দিয়ে কাটাখাল পেরিয়ে ঝিকরগাছা বাজারের উপর মর্টারে গোলা ছুড়তে আরম্ভ করে।

পদ্মার তীরে নতুন যুদ্ধ ফ্রণ্ট

 শুক্রবার ভোর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বিভিন্ন দিক থেকে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ হানবার চেষ্টা করছে। গতকাল রাত থেকেই পশ্চিম